উল্লাস: দমদমের উত্তরায়ণ এবং আমরা ক’জন ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে ব্রাজিলের জয় উপভোগ করছেন সস্ত্রীক দাবাড়ু দিব্যেন্দু বড়ুয়া। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
বুধবার রাতে ছেলেকে নিয়ে বিমানবন্দর থেকে বাড়িতে ঢুকতে রাত হয়ে গিয়েছিল। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত পৌনে এগারোটার দিকে দৌড়াচ্ছে। সার্বিয়া বিরুদ্ধে আমার প্রিয় দল ব্রাজিলের খেলা দেখতে যাব সেই দমদম। নেমারদের খেলা একদম শুরু থেকে না দেখলে আমার মন ভরে না।
ঠিক তখনই আমার স্ত্রী সহেলি আবদার করে বসল আমার সঙ্গে আজ খেলা দেখতে যাবে। সহেলি এমনিতে ফুটবল সমর্থক নয়। কিন্তু বিশ্বকাপ জ্বরে ও আক্রান্ত হয়েছে, এ মাসের শুরুতে সুইডেনে ঘুরতে গিয়ে। স্টকহলমে বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাস দেখে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছিল অন্য জায়গায়। অতীতে যে দলকে সমর্থন করে সহেলির সঙ্গে ফুটবল দেখতে বসেছি সে দল কখনও জেতেনি। তার কিছুক্ষণ আগেই জার্মানি হেরে গিয়েছে। সার্বিয়াও যদি সে রকম কোনও অঘটন ঘটায় তা হলে গভীর রাতে ভাঙা মনেই দমদম থেকে ফিরতে হবে সল্টলেকে।
ছোটবেলা থেকেই আমি আদ্যন্ত ব্রাজিল ভক্ত। বাড়িতে রয়েছে পেলের থেকে নেওয়া অটোগ্রাফ ও ফুটবল সম্রাটের সঙ্গে নেওয়া ছবিও। দমদম স্টেশনের কাছে উত্তরায়ণ এবং আমরা ক’জন ক্লাবের যৌথ উদ্যোগে গোটা ক্লাবঘরটাই হয়ে উঠেছে একটা ব্রাজিলীয় বাড়ির মতো। যার দেওয়ালে কবিগুরু রয়েছেন। কিন্তু বিশ্বকাপের মরসুমে তাঁর সঙ্গেই ক্লাবঘরে ছবিতে হাজির উইলিয়ান, নেমার, অ্যালিসনদের গোটা দল। পাড়ায় ঝুলছে ব্রাজিলের সবুজ-হলুদ বিশাল পতাকা। ক্লাবঘরটা তো মুড়েই ফেলা হয়েছে ব্রাজিলের পতাকা দিয়ে। ক্লাব সদস্যদের কেউ কেউ আবার তা দিয়েই মাথায় বান্দানা পরেছে। বাজছে ‘ভেঙ্গা বয়েজ’-এর সেই বিখ্যাত গান ‘ব্রাজিল’।
১৯৮০ সালে ব্রাজিলে দাবা খেলতে গিয়েছিলাম। সেখানে দাবা খেলাকে বলা হয়, ‘অ্যাহেদরেজ’। সে বার রিয়ো দে জেনেইরোতে গিয়ে সে দেশের দাবাড়ুদের কাছে শুনেছিলাম, ব্রাজিল ফুটবল দলের খেলা থাকলে গোটা শহরের অবস্থা কী রকম হয়। তার একটা ভাসা ভাসা ছবি বহু বছর পরে এই দমদমে এসে যেন দেখতে পেলাম উত্তরায়ণ এবং আমরা ক’জন ক্লাবের প্রাঙ্গনে।
আরও পড়ুন: ফেয়ার প্লে-তে শেষ ষোলোয় জাপান, উঠল কলম্বিয়াও
দুই অর্ধে দু’টো গোল করল ব্রাজিল। প্রথমার্ধে পাউলিনহো যে গোলটা করলেন তার পিছনে আসল মস্তিষ্ক ফিলিপে কুটিনহো। এ বারের বিশ্বকাপে বার্সেলোনার এই ফুটবলারই তিতের দলের আক্রমণে ফুল ফোটাচ্ছেন। এই ব্রাজিল দলের নিউক্লিয়াসটাই হলেন তিনি। ব্রাজিলের অর্ধে বলটা ধরেই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, কোথায় রাখতে হবে। পাউলিনহোও ঠিক ওঁর ‘মার্কার’- কস্তিচকে ফাঁকি দিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন বলের কাছে। কী দুর্দান্ত সময়জ্ঞান ও বোঝাপড়া! ক্লাব ফুটবলে মেসির ক্লাবে খেলা পাউলিনহো গোলটা করার সময় দেখালেন দুর্দান্ত ফিনিশিংটাও। অনবদ্য গোল। প্রথমার্ধে ১-০ এগিয়ে থাকায় বিরতিতেই নৈশ উৎসব শুরু করে দিয়েছিলেন ব্রাজিল সমর্থকরা।
কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফিরে এসেছিল সার্বিয়া। এই সময় বিপক্ষের আক্রমণে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠে গিয়েছিল ব্রাজিল রক্ষণে। কিন্তু থিয়াগো সিলভা এবং ব্রাজিল অধিনায়ক মিরান্দা সজাগ থাকায় গোল খেতে হয়নি ব্রাজিলকে। এর পরেই এই আক্রমণ সামলাতে পাউলিনহোকে তুলে ফের্নান্দিনহোকে নামালেন ব্রাজিল কোচ। উদ্দেশ্য, রক্ষণে চাপ কমানো। আর এই ঝাপটা সামলে উঠতেই নেমারের কর্নার থেকে হেডে থিয়াগো সিলভার গোল। আর দমদমেও শুরু বাঙালি ব্রাজিল সমর্থকদের উদ্বাহু সাম্বা নাচ। সঙ্গে গান। আর ব্রাজিল, ব্রাজিল চিৎকার।
সব শেষে নেমার। এ দিন বেশ কয়েকটা গোলের সুযোগ পেয়েও গোল করতে পারেননি। তা হলে ম্যাচটায় পাঁচ গোল দিয়ে ফিরতে পারত তিতের দল। নেমারকে দেখে মনে হচ্ছে এখনও পুরোপুরি ম্যাচ ফিট নন।
এ দিন কর্নার থেকে গোলটা করানোর পরে টিভিতে ধরল নেমারকে। নিজের বুক চাপড়াচ্ছেন। ভাবুন, কী বিশাল ‘টিমম্যান’! নক-আউটে কিন্তু ভয়ঙ্কর হবেন নেমার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy