মেজাজ: কাজ়ানের টিম হোটেলে পৌঁছে খোশমেজাজে নেমার। ছবি: এএফপি
সিট বেল্ট লাগিয়ে নিন। আমরা এই বিশ্বকাপের সেরা ম্যাচটা দেখতে চলেছি আজ, শুক্রবার। কাজ়ানে দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল বনাম বেলজিয়াম।
কাজ়ান! এই নামটা শুনলে বেশ কিছু বড় দলের ফুটবলারেরও মেরুদণ্ড দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যেতে বাধ্য। যাঁদের মধ্যে লিয়োনেল মেসি বা টোনি খোসের মতো ফুটবলারও থাকবেন। বড় দলের কাছে অভিশাপ হয়ে উঠেছে এই কাজ়ান। এখানেই যে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় ঘটে গিয়েছিল গত বারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি আর রানার্স আর্জেন্টিনার। ওই দু’দলই বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ খেলেছে এই কাজ়ানে!
এ সব বলে আমি কি ভয় পাইয়ে দিচ্ছি ব্রাজিল সমর্থকদের? না, না। চিন্তা করবেন না। ব্রাজিল ঠিক শেষ চারে চলে যাবে। যুক্তি এবং আমার ফুটবল বুদ্ধিতে সব কিছু বিচার করেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। তবে আমি এ-ও জানি, ফুটবল মহান অনিশ্চয়তার খেলা। এখানে যে কোনও দিন যা কিছু হতে পারে। কিন্তু শুক্রবার সেই দিন হবে না। আজ ব্রাজিলই জিতবে। আমার ভবিষ্যদ্বাণী হল, ব্রাজিল ২-০ জিতবে বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: চার ম্যাচে ১৪ মিনিট গড়াগড়ি খেয়েছেন নেমার, জানেন?
যদি দু’টো দলের তুলনা করা হয়, তা হলে বলব, ব্রাজিলীয় রক্ষণের ভাল পরীক্ষা নেবে বেলজিয়ামের আক্রমণ। পাশাপাশি এটাও মনে করিয়ে দিতে চাই, এই বিশ্বকাপে সেরা রক্ষণ কিন্তু ব্রাজিলেরই। আরও একটা কথা হয়তো অনেকেরই মাথায় নেই। বেলজিয়াম রক্ষণেরও চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়ার মতো ফুটবলার আছে ব্রাজিলের। যেমন, নেমার, কুটিনহো, উইলিয়ান, পাওলিনহো। আবার দুই সাইড ব্যাক পাগেনার এবং ফিলিপে লুইসও আক্রমণে উঠে বেলজিয়াম রক্ষণের ওপর চাপ বাড়াবে। ভুলে যাবেন না, এই বেলজিয়াম কিন্তু চার ম্যাচে চার গোল খেয়েছে।
মস্কোয় বেলজিয়ামের অনুশীলনে রোমেলু লুকাকু এবং সতীর্থরা। ছবি: রয়টার্স
এই ম্যাচটায় কিন্তু বেশ কিছু ব্যক্তিগত দ্বৈরথ আমরা দেখতে পাব। ব্রাজিল দলে একটা পরিবর্তন তো হচ্ছেই। কার্ড দেখে বাইরে থাকা কাজিমিরোর জায়গায় আসবে ফের্নান্দিনহো। অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞই মনে করছেন, এই বদলটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। আমি বলব, কাজিমিরোর জায়গায় ফের্নান্দিনহো দলে এলে ব্রাজিলেরই উপকার হবে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির হয়ে খেলে ফের্নান্দিনহো। অন্য দিকে কাজিমিরো খেলে লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। ফের্নান্দিনহো কিন্তু বেলজিয়াম দলটাকে খুব ভাল করে চেনে। কারণ বেলজিয়ামের অনেক ফুটবলারই ইপিএলের বিভিন্ন ক্লাবে খেলে। ম্যাঞ্চেস্টার সিটিতে ওর সতীর্থ কেভিন দে ব্রুইন, ভ্যানসঁ কোম্পানি। আবার ওকে লড়াই করতে হয় ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের রোমেলু লুকাকু এবং মারুয়ান ফেলাইনির সঙ্গে। চেলসির সঙ্গে ম্যাচ হলে আবার ফের্নান্দিনহোর বিপক্ষে থাকে এডেন অ্যাজার এবং থিবো কুর্তোয়া। ফলে বেলজিয়ামের সঙ্গে এই ম্যাচে ফের্নান্দিনহো কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে।
আমি নিশ্চিত, ব্রাজিলের বিরুদ্ধে রণনীতি বদলাবে বেলজিয়াম। ওদের কোচ রবের্তো মার্তিনেজ তো বলেই দিয়েছেন, ব্রাজিলের বিরুদ্ধে দলে আরও ‘শক্তি’ চাই। যে জন্য মনে হচ্ছে, ফেলাইনি শুরু থেকেই নামবে। আমার মনে হয় নাসের শাদলিকেও শুরু থেকে নামানো হবে। এর অর্থ হল, দু’প্রান্ত থেকে প্রচুর ক্রস উড়ে আসবে ব্রাজিলের বক্সে। যা সামলানোর জন্য ব্রাজিলের দুই সাইড ব্যাক— ফিলিপে লুইস এবং পাগেনারকে রক্ষণেই বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হবে। এর আরও একটা অর্থ হল, লুকাকু, ফেলাইনি এবং অ্যাজারের সঙ্গে শক্তির লড়াই হবে দুই সাইড ব্যাকের। দু’প্রান্ত থেকে আসা ক্রসগুলো যাতে বেলজিয়ামের ফুটবলাররা কাজে না লাগাতে পারে, সেটা দেখতে হবে পাগেনারদের।
আমার মনে হয়, ব্রাজিল বক্সের সামনে ডাইরেক্ট ফুটবল অনেক বেশি দেখা যাবে। বাঁ এবং ডান প্রান্ত থেকে দে ব্রুইন এবং শাদলি ভয়ঙ্কর ক্রসগুলো পাঠাবে। ছ’গজের মধ্যে ব্রাজিল রক্ষণকে ছত্রভঙ্গ করে গোল তুলে নেওয়ার চেষ্টায় থাকবে অ্যাজার এবং লুকাকু। পিছন থেকে বল ধরার জন্য যাবে ফেলাইনি। এই কারণেই ফের্নান্দিনহোর ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। লুজ বল ধরে নেমার এবং উইলিয়ানকে আক্রমণে সাহায্য করার কাজটা ও-ই করবে।
আবারও বলছি, ব্যক্তিগত দ্বৈরথ কিন্তু এই ম্যাচটার ভাগ্য ঠিক করার পিছনে বড় ভূমিকা নেবে। দে ব্রুইন বনাম পাগেনার, ফেলাইনি বনাম ফের্নান্দিনহো, লুকাকু বনাম মিরান্দা, অ্যাজার বনাম থিয়াগো সিলভা। এর পাশাপাশি থাকবে নেমার, কুটিনহোদের সঙ্গে কোম্পানি, ভার্তোনঘেনদের লড়াই। এই ব্যক্তিগত দ্বৈরথগুলোও কোনও অংশে কম চিত্তাকর্ষক হবে না।
একটা ব্যাপার আমি লক্ষ করেছি। ছ’গজের বক্সের আশেপাশে কিন্তু কোনও ফাউল করছে না ব্রাজিল। এই ব্যাপারটা বদলানোর চেষ্টা করবে বেলজিয়াম। ডেড বল পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টায় থাকবে মার্তিনেসের দল। তাই থিয়াগো সিলভা, মিরান্দাকে সেরা খেলা খেলতে হবে। এই ম্যাচটা শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষাও নেবে। আমার মনে হয়, ম্যাচটার ফয়সালা হয়ে যাবে মাঝমাঠের লড়াইয়ে।
তবে ব্রাজিল কিন্তু খুব বেশি কর্নার হতে দিচ্ছে। এর কারণ, ব্রাজিলের সাইড ব্যাকরা আক্রমণে উঠে যাচ্ছে আর ওই ফাঁকা জায়গাটা ভরাট করতে সমস্যা হচ্ছে বাকিদের। যে জায়গা দিয়ে ঢুকে আসছে বিপক্ষের ফুটবলাররা। পরিস্থিতি সামাল দিতে পাগেনার ও সিলভাকে ট্যাকলে যেতে হচ্ছে। যে কারণে কর্নার বেশি হচ্ছে। এই নীতিটা বদলাতে হবে তিতেকে। আমরা ব্রাজিলের ‘প্ল্যান এ’ দেখেছি। যেখানে কুটিনহো আক্রমণের কেন্দ্রে ছিল। নেমারকে দিয়ে বিপক্ষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছিল। ‘প্ল্যান বি’-তে দেখলাম, দুই প্রান্ত থেকে বল বাড়ানো হচ্ছে। যেখানে উইলিয়ান এবং নেমারকে বিপজ্জনক দেখিয়েছে। শুক্রবার নিশ্চয়ই ‘প্ল্যান সি’ দেখতে পাব।
ব্রাজিল নিয়ে আমার একটাই চিন্তা। গ্যাব্রিয়েল জেসুস গোলের মধ্যে নেই। ব্রাজিলের ন’নম্বর জার্সি পরলে গোল করতেই হবে। জেসুসের জায়গায় রবের্তো ফির্মিনোকে খেলানোর কথা ভেবে দেখতেই পারেন তিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy