মহড়া: সার্বিয়ার বিরুদ্ধে গ্রুপের শেষ ম্যাচে নামার আগে অনুশীলনে নেমার, কুটিনহো। ছবি: এএফপি
কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে জয়ের পর থেকেই ব্রাজিল জুড়ে উৎসবের আবহ। যাবতীয় উন্মাদনা নেমার দা সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র)-কে ঘিরে।
সাও পাওলোর রাস্তায় বেরিয়ে চমকে গেলাম। ছয় থেকে তিরিশ— সবার গায়ে নেমারের নাম লেখা দশ নম্বর জার্সি। ফিলিপে কুটিনহো দুর্দান্ত খেলছেন। পর পর দু’ম্যাচে গোল করছেন। বিশেষজ্ঞরা এই বিশ্বকাপে নেমারের চেয়ে কুটিনহোকেই নিয়েই উচ্ছ্বসিত। কিন্তু জনপ্রিয়তায় প্যারিস সাঁ জারমাঁ তারকার ধারেকাছে নেই।
ব্রাজিলীয়দের আবেগ বরাবরই একটু বেশি। কোস্টা রিকার বিরুদ্ধে নেমারের গোলে ফেরা ও কান্না আরও ছুঁয়ে গিয়েছে আমাদের হৃদয়। উৎসবের আবহে অনেকেই মনে করছেন, সার্বিয়াকে সহজেই হারিয়ে দেব আমরা। এত সহজ কিন্তু নয়। ব্রাজিল সমর্থকরা ভাবতে পারেন, হঠাৎ কী হল আমার? নেমাররা এই মুহূর্তে যে রকম ছন্দে আছেন, তাতে সার্বিয়াকে হারানো শুধু সময়ের অপেক্ষা।
এই ম্যাচটার উপরেই নির্ভর করছে সার্বিয়ার বিশ্বকাপ ভবিষ্যৎ। আমি দীর্ঘদিন ফুটবল খেলেছি। তাই জানি, ব্রাজিলকে হারানোর জন্য নেমানইয়া মাতিচরা কতটা মরিয়া হয়ে নামবেন। এই কারণেই মরণ-বাঁচন ম্যাচে কোস্টা রিকার মতো শুরু থেকে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলবে না সার্বিয়া। প্রথম থেকেই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ঝাঁপাবে। সার্বিয়ার ফুটবলারদের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা থেকে জানি, ওঁরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করেন।
আরও পড়ুন: ‘যাও ব্রাজিল, যাও ছেলেরা, জয় করে এসো!’
আমার চিন্তার প্রথম কারণ, প্রান্ত থেকে উড়ে আসা বল (এরিয়াল পাস) বিপন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে ব্রাজিল ডিফেন্ডারদের অস্বস্তি। এই সমস্যাটা নতুন নয়। দীর্ঘ দিন ধরেই হচ্ছে। তার অন্যতম কারণ, আমাদের ডিফেন্ডারদের গড় উচ্চতা খুব বেশি নয়। অন্য দিকে সার্বিয়ার ফুটবলারদের গড় উচ্চতা ছয় ফুটের উপরে। ছয় গজ পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ওঁদের থামানোটা কিন্তু বড় পরীক্ষা তিতের দলের কাছে। দ্বিতীয়ত, বিশ্বকাপের শেষ দু’টো ম্যাচে আমাদের যাবতীয় আক্রমণ হয়েছে বাঁ প্রান্ত দিয়ে। তার জন্য বেশির ভাগ কৃতিত্ব মার্সেলো ভিয়েরার। পেন্ডুলামের মতো রক্ষণ থেকে বল নিয়ে বাঁ প্রান্ত দিয়ে উঠেছেন শেষ বাঁশি না বাজা পর্যন্ত। ঠিক উল্টো ছবি ডান প্রান্তিক আক্রমণে। দানি আলভেস চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ায়, ওই দিক থেকে আক্রমণ প্রায় হচ্ছেই না।
তিতের সহকারী আমার ঘনিষ্ট বন্ধু সিলভিনহো। আমরা একসঙ্গে খেলেছি সাও পাওলো ও কোরিন্থিয়াসে। ওর সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছিল। আমার মতো সিলভিনহোও চিন্তিত, ডান দিক থেকে ঠিক মতো আক্রমণ না হওয়ায়। বলছিল, ‘‘দলে ভারসাম্যা থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। সেটা সম্ভব, দু’প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ করতে পারলে।’’ আধুনিক ফুটবলে উইংপ্লে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। কারণ, সব দলই রক্ষণের সামনে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার খেলাচ্ছে। ফলে মাঝখান দিয়ে গোল করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এই কারণেই প্রান্তিক আক্রমণ এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
কয়েক দিন আগে সাও পাওলোর একটি ক্লাবে আমরা কয়েক জন কোচ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করছিলাম। সবারই এক মত, ব্রাজিল কতটা শক্তিশালী, সম্ভবত সার্বিয়া ম্যাচেই পরীক্ষা হবে। কারণ, এখনও পর্যন্ত আমাদের রক্ষণ সে ভাবে পরীক্ষিত নয়। তাই দেখতে চাই, বিপক্ষের প্রবল চাপের মুখে থিয়াগো সিলভা, পাগেনার লেমোসরা কতটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলতে পারেন।
দু’ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে ‘ই’ গ্রুপের শীর্ষে ব্রাজিল। সমান পয়েন্ট সুইৎজ়ারল্যান্ডেরও। সার্বিয়ার পয়েন্ট দু’ম্যাচ খেলে দুই। অর্থাৎ, মাতিচদের বিরুদ্ধে মস্কোর স্পার্টার্ক স্টেডিয়ামে বুধবার ড্র করলেই শেষ ষোলোয় পৌঁছে যাবে ব্রাজিল। অনেকেই মনে করছে, এই কারণেই বেশি ঝুকি নেবেন না তিতে। আমি তাঁদের সঙ্গে একমত নই। আমরা ফুটবল খেলি আনন্দ পাওয়ার জন্য। ব্রাজিলের রাস্তা থেকে সমুদ্র সৈকত, সব সময়ই চোখে পড়বে ফুটবল চলছে। নেমারই তো উঠে এসেছেন রাস্তায় খেলতে খেলতে। আবেগ দিয়ে খেলি বলেই হয়তো ইউরোপের দলগুলোর মতো অঙ্ক করে খেলতে পারি না। আমার বিশ্বাস, সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ব্রাজিল সেরা শক্তি নিয়েই নামবে। সিলভিনোর সঙ্গে কথা বলেও বুঝলাম, নেমারদের অন্দরমহলে ড্রয়ের কথা কেউ ভাবতেই চাইছেন না। ব্রাজিলীয়দের কাছে ফুটবল যে ধর্ম!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy