Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Tennis

Wimbledon 2022: লন্ডনে আরব্য রজনী! আরবের প্রথম মহিলা হিসাবে গ্র্যান্ড স্ল্যামের সেমিফাইনালে জাবেউর

গত বছর উইম্বলডনের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়েছিলেন। এ বার নিজেকেও পেরিয়ে গেলেন ওন্স জাবেউর। নতুন ইতিহাস গড়লেন তিনি।

ইতিহাস তৈরি করলেন জাবেউর

ইতিহাস তৈরি করলেন জাবেউর ছবি রয়টার্স

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২২ ১২:১৯
Share: Save:

ইতিহাস তৈরি করেছিলেন গত বছরই। আরব দেশের প্রথম মহিলা হিসাবে উঠেছিলেন উইম্বলডনের কোয়ার্টার ফাইনালে। এ বার নিজেই নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন তিনি। উইম্বলডনের সেমিফাইনালে উঠে গেলেন। আরবের প্রথম মহিলা হিসাবে উইম্বলডন এবং যে কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের সেমিফাইনালে উঠে নতুন ইতিহাস তৈরি করলেন তিনি। মারি বুজকোভাকে ৩-৬, ৬-১, ৬-১ গেমে হারালেন টিউনিশিয়ার এই খেলোয়াড়।

ম্যাচের পর জাবেউর বলেছেন, “এই অনুভূতি বলে বোঝাতে পারব না। অনেক দিন ধরেই সেমিফাইনালে ওঠার চেষ্টা করছিলাম। কিছু দিন আগেই হিচার আরাজির (মরক্কোর প্রাক্তন খেলোয়াড়) সঙ্গে কথা বলছিলাম। ও আমাকে বলল, আরবীয়রা বরাবর কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যায়। আমরা ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। তুমি অন্তত এই ইতিহাসটা বদলাও। আমি বলেছিলাম, চেষ্টা করব। অবশেষে পেরেছি।”

২০১১ সালটা সম্ভবত ভুলতে পারবেন না জাবেউর। প্রথম বার কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম ট্রফিতে হাত রেখেছিলেন তিনি। হোক না জুনিয়র গ্র্যান্ড স্ল্যাম, মাহাত্ম্য তো তারও কম নয়। তাঁর দেশ টিউনিশিয়ার কাছেও ২০১১ বছরটা তাৎপর্য্যপূর্ণ। কারণ টিউনিশিয়া থেকেই শুরু হয়েছিল শাসকের বিরুদ্ধে বিপ্লব, গোটা দুনিয়ার কাছে যা পরিচিত ‘আরব স্প্রিং’ নামে। নানা উত্থান-পতনের মধ্যে আরব বসন্ত শেষ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু জাবেউরের জীবনে বসন্ত এখনও শেষ হয়নি। টেনিস র‌্যাকেটের সাহায্যে কোর্টে একের পর এক ফুল ফোটাচ্ছেন তিনি। এই বিপ্লব এখনই থামার নয়।

এমন দেশ থেকে এসেছেন জাবেউর, যেখানে এখনও মহিলাদের ছোট পোশাক পরা নিষেধ। প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করা ছোটবেলা থেকেই তাঁর স্বভাব। তাই কোনও চোখরাঙানি তাঁর এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। পরিবারে সবার থেকে ছোট জাবেউর। তাঁর উপরে দুই দাদা এবং এক দিদি রয়েছেন। মাত্র তিন বছর থেকে টেনিসে হাতেখড়ি। সেটাও মায়ের ইচ্ছাতেই। মেয়ে টেনিস খেলোয়াড় হোক এটা শুরু থেকেই চেয়েছিলেন রিধা জাবেউর। তিনি নিজেও শখের টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন।

তেরো বছর পর্যন্ত স্থানীয় স্তরে কোচ নাবিল ম্লিকার অধীনে টেনিস শিখেছেন জাবেউর। উন্নতি করতে গেলে দরকার ছিল উন্নত পরিকাঠামোরও। তাই মা রিধা তাঁকে নিয়ে চলে আসেন রাজধানী টিউনিসে। জাতীয় ক্রীড়া বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। তত দিনে জাবেউরের প্রতিভার বিকাশ ঘটতে শুরু করেছে। বেলজিয়াম এবং ফ্রান্সের মতো দেশে খেলার ডাক পাচ্ছেন। নিজের দেশ ছেড়ে যেতে রাজি হননি জাবেউর। এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমার পরিবার অনেক কিছু ত্যাগ করেছে আমাদের জন্য। মা গোটা দেশে আমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খেলাবেন বলে। বিশেষ স্কুলে আমাকে পড়তে পাঠিয়েছিলেন। সাফল্য নিশ্চিত ছিল না। তা সত্ত্বেও ওঁদের এই আত্মত্যাগ ভোলার নয়। আমার উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন ওঁরা।”

১৩ বছর বয়সে ২০০৭ থেকে জুনিয়র সার্কিটে খেলা শুরু। ধাপে ধাপে উন্নতি। প্রথম জুনিয়র সার্কিটে দাপিয়েছেন। এর পর ধীরে ধীরে বড়দের টেনিসে ঢুকে পড়েন। ২০১৭-তেই মহিলাদের টেনিসে প্রথম একশোতে ঢুকে পড়েছিলেন জাবেউর। পরের বছর প্রথম একশো থেকে বেরিয়েও যান। জাবেউরের জীবনে এখনও পর্যন্ত সব থেকে কঠিন প্রতিযোগিতা হয়তো ২০২০-র অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। প্রথম দুই রাউন্ডে জোহানা কন্টা এবং ক্যারোলিন গার্সিয়াকে হারানোর পর তৃতীয় রাউন্ডে হারান বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বর ক্যারোলিন ওজনিয়াকিকে। সেটাই ছিল ওজনিয়াকির পেশাদার টেনিসের শেষ ম্যাচ। এরপর ওয়াং কিয়াংকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ইতিহাস তৈরি করেন। আরবের প্রথম মহিলা হিসেবে কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের কোয়ার্টারে ওঠেন।

পাঁচ বছর আগে প্রাক্তন ফেন্সার করিম কামুনকে বিয়ে করেছেন জাবেউর, যিনি আদতে রাশিয়ার হলেও বর্তমানে টিউনিশিয়ার নাগরিক। স্বামীই জাবেউরের ব্যক্তিগত ট্রেনার হিসেবে কাজ করেন। অবসর সময়ে ফুটবল খেলেন। রিয়াল মাদ্রিদের অন্ধ ভক্ত। ভালবাসেন সাইকেলে ঘুরতে। তাঁর ইনস্টাগ্রামে একাধিক ছবি পাওয়া যাবে। টেনিসে আদর্শ মানেন অ্যান্ডি রডিককে। লকডাউনের সময় নিজেকে ফিট রাখতে বাড়িতেই নাচের অনুশীলন চালিয়েছেন, যা অন্যতম সেরা পছন্দের কাজ।

জাবেউরের এখন একটাই স্বপ্ন। তাঁকে দেখে যেন এ বার আরবের খুদে টেনিস খেলোয়াড়রা অনুপ্রাণিত হয়। টিউনিশিয়া, মরক্কো, আলজেরিয়া থেকে আরও প্রতিভা উঠে আসুক, এটাই চান তিনি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE