উইম্বলডনের সেমিফাইনালে নামা অনিশ্চিত নাদালের ছবি: টুইটার
পায়ে চোট। তলপেটের পেশিতে অসহ্য যন্ত্রণা। খেলার মাঝে বার বার মনে হয়েছে হাল ছেড়ে দেবেন। দর্শকাসন থেকে বাবা, বোন চিৎকার করে বলেছেন অবসর নিতে। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। চিকিৎসার জন্য বিরতি নিয়েছেন। আবার কোর্টে ফিরেছেন। লড়াই করেছেন। ১২ বছরের ছোট টেলর ফ্রিৎজকে ৪ ঘণ্টা ২০ মিনিটের ম্যারাথন লড়াইয়ে হারিয়ে উইম্বলডনের সেমিফাইনালে উঠেছেন রাফায়েল নাদাল। ১২ বছর পরে ফের ঘাসের কোর্টের রাজা হওয়ার হাতছানি। কিন্তু তার আগে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার নিক কিরিয়সের বিরুদ্ধে নাদালের নামা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তিনি নিজেই জানেন না, শুক্রবার সেন্টার কোর্টে নামতে পারবেন কি না।
ফ্রিৎজকে হারিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে নাদাল বলেছেন, ‘‘ভাবতে পারিনি জিতব। ফ্রিৎজ খুব ভাল খেলেছে। তবে শেষ পর্যন্ত জিততে পেরে খুশি।’’ কোয়ার্টার ফাইনালে জিতলেও সেমিফাইনালে কিরিয়সের বিরুদ্ধে নামার আগে চিন্তায় রয়েছেন রাফা। বলেছেন, ‘‘আমি জানি না, সেমিফাইনালে খেলতে পারব কি না। এখন আমি কোনও উত্তর দিতে পারব না। কারণ, এখন হয়তো আমি একটা কথা বললাম, তার পর কাল অন্য কিছু হল, তখন আমি মিথ্যাবাদী হয়ে যাব।’’
তলপেটের পেশিতে যন্ত্রণা নিয়ে বেশি চিন্তায় নাদাল। কয়েক দিন ধরে যন্ত্রণা হলেও কোয়ার্টার ফাইনাল চলাকালীন তা এতটা বেড়ে যাবে, ভাবতে পারেননি রাফা। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘‘কোনও না কোনও সমস্যা লেগেই রয়েছে। কয়েক দিন ধরে পেটে যন্ত্রণা হচ্ছে। কোয়ার্টার ফাইনাল চলাকালীন যন্ত্রণা খুব বেড়ে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার কয়েকটা পরীক্ষা হবে। চোট খতিয়ে দেখে তার পরে খেলতে নামার সিদ্ধান্ত নেব।’’
পেশিতে যন্ত্রণা হওয়ায় সার্ভিসের সময় সমস্যা হচ্ছিল নাদালের। উইম্বলডনের আগের রাউন্ডের তুলনায় কোয়ার্টার ফাইনালে তাঁর সার্ভিসের গতি কমে গিয়েছিল। তাতেও হাল ছাড়েননি তিনি। নাদাল বলেন, ‘‘প্রথম তিন সেটে সার্ভিস করতে গিয়ে যন্ত্রণা হচ্ছিল। ফলে স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারছিলাম না। বার বার মনে হচ্ছিল, খেলা শেষ করতে পারব না। কিন্তু কোর্ট, দর্শক, পরিবেশ, জানি না কোথা থেকে শক্তি পেলাম। খেলা শেষ করলাম। জিতলাম।’’
নাদালের পায়ের চোট অবশ্য আজকের নয়। ব্যথা কমানোর ওষুধ খেয়ে, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে পেশি অবশ করে কয়েক সপ্তাহ আগে ফরাসি ওপেন জিতেছেন তিনি। নাদাল জানেন, এই চোট নিয়েই তাঁকে লড়াই করতে হবে। তাই প্রতিটি ম্যাচ জীবনের শেষ ম্যাচ ভেবে খেলতে নামেন। নিজেকে আরও এক বার সুযোগ দেন। শেষ পর্যন্ত লড়াই করেন। ঘাসের কোর্টেও সেই লড়াইটাই দেখা গিয়েছে।
ব্যথা নিয়ে ফ্রিৎজকে হারিয়ে উঠে ২২ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক তাই বলেছেন, ‘‘আমি নিজেকে একটা সুযোগ দিতে চেয়েছি। উইম্বলডনের মতো প্রতিযোগিতা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া সহজ নয়। তাই যন্ত্রণা নিয়েও খেলেছি। শুধু খেলাটা শেষ করতে চেয়েছি। লড়াই করেছি। তার জন্য গর্বিত।’’
নাদালকে কড়া চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন ফ্রিৎজ। ১-২ সেটে পিছিয়ে থাকার পরে শেষ দুই সেট জিতে ম্যাচ জিতেছেন রাফা। অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছেন। কিরিয়সের বিরুদ্ধে লড়াইটা সহজ হবে না, এ কথা জানেন তিনি। সতর্ক নাদাল বলেছেন, ‘‘ঘাসের কোর্টে কিরিয়স খুব ভাল খেলোয়াড়। ওকে হারানো কঠিন। নিজের ১০০ শতাংশ দিয়ে খেলতে হবে। কোর্টে নামলে সেই চেষ্টাই করব।’’
নিজের তৃতীয় উইম্বলডন ট্রফি থেকে মাত্র দু’কদম দূরে নাদাল। চলতি বছর ইউএস ওপেন ও ফরাসি ওপেন জিতেছেন। উইম্বলডনের পরে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতলে ক্যালেন্ডার স্ল্যাম হবে নাদালের। তবে সে সব নিয়ে আপাতত ভাবতে রাজি নন তিনি। একটা করে ম্যাচ ধরে খেলছেন। প্রতিটি ম্যাচ জীবনের শেষ ম্যাচ ধরে খেলছেন। লড়াই করছেন। যন্ত্রণাকে হারাচ্ছেন। কিরিয়সের বিরুদ্ধেও হয়তো নামবেন তিনি। পড়বেন। ঘুরে দাঁড়াবেন। কিন্তু লড়াইটা ছাড়বেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy