দৃষ্টান্ত: দ্বৈরথ শেষ। সৌজন্যের ছবি হয়ে থাকলেন স্মিথ, আর্চার। রয়টার্স
নির্বাসন কাটিয়ে অ্যাশেজ লড়াইয়ে তিনি যখন প্রথম মাঠে পা রেখেছিলেন, বিদ্রুপে বিদ্রুপে বিদ্ধ হয়েছিলেন স্টিভ স্মিথ। অ্যাশেজ লড়াইয়ের শেষে তিনি যখন মাঠ ছাড়ছেন, করতালিতে তাঁকে বরণ করে নেয় ইংল্যান্ডের দর্শকরাই।
চার টেস্ট, সাত ইনিংস, ৭৭৪ রান। একটি ডাবল সেঞ্চুরি-সহ তিনটি সেঞ্চুরি। গড় ১১০.৫৭। নিজের অভিষেক সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে চার টেস্টে করা সুনীল গাওস্কের ৭৭৪ রানের সেই চিরস্মরণীয় সীমারেখা ছুঁয়ে ফেললেন স্মিথ। পাশাপাশি একবিংশ শতাব্দীতে এক টেস্ট সিরিজে সর্বাধিক রান করার রেকর্ডও ভেঙে দিলেন তিনি। এর আগে অবশ্য স্মিথেরই এই রেকর্ড ছিল। ভারতের বিরুদ্ধে ২০১৪-১৫ সালে ৭৬৯ রান করেছিলেন তিনি। অল্পের জন্য স্মিথ ভাঙতে পারেননি চার টেস্টে করা ভিভ রিচার্ডসের সর্বাধিক রানের রেকর্ড। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৯৭৬ সালে চার টেস্টে ভিভ করেছিলেন ৮২৯ রান।
অবিস্মরণীয় এই সিরিজ শেষে এখন কী মনে হচ্ছে? কিছুটা ক্লান্ত স্মিথ ওভাল টেস্টের পরে বলেছেন, ‘‘দীর্ঘ ১৮ মাস ক্রিকেট থেকে দূরে ছিলাম। এই ভাবে ফিরে আসার জন্য অনেককেই ধন্যবাদ দিতে চাই। বিশেষ করে আমার স্ত্রীকে।’’ সিরিজ শেষে ওভালে হাজির ছিলেন স্মিথের স্ত্রী ডানি উইলিসও।
সিরিজের কোন সময় মনে হয়েছিল নিজের সেরা ছন্দে ফিরেছেন? স্মিথ বেছে নিচ্ছেন এজবাস্টন টেস্টের প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরি। যখন অস্ট্রেলিয়া ১২২ রানে আট উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল। স্মিথের মন্তব্য, ‘‘অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্ট সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। আর দলকে ওই অবস্থা থেকে টেনে তুলতে পারায় আত্মবিশ্বাস এক লাফে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। এই সিরিজে ওটাই আমার সব থেকে পছন্দের ইনিংস।’’
এর পরে লর্ডস টেস্টে জোফ্রা আর্চারের বিষাক্ত বাউন্সারে আহত হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় স্মিথকে। অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞের মতে, সদ্য সমাপ্ত অ্যাশেজে স্মিথ বনাম আর্চারের দ্বৈরথ একটি স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে থাকবে। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিয়ে স্মিথ বলছেন, ‘‘গত বছর আইপিএলে আমি জোফ্রাকে দেখেছিলাম। তখনই বুঝেছিলাম, ও অত্যন্ত প্রতিভাবান। ওর ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল।’’ অ্যাশেজের প্রতিদ্বন্দ্বী আবার আইপিএলে স্মিথেরই সতীর্থ। দু’জনেই খেলেন রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে। নিজের অভিষেক সিরিজে চারটে টেস্ট খেলে ২২টি উইকেট নিয়েছেন আর্চার। সেরা বোলিং ৪৫ রানে ছয় উইকেট। কিন্তু ক্রিকেটপ্রেমীরা আর্চারকে সম্ভবত মনে রেখে দেবেন তাঁর একটা বাউন্সারের জন্য। যে বাউন্সার আহত করেছিল স্বয়ং স্মিথকে।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের ব্যাটিং দেখে তাঁর সঙ্গে বারবার তুলনা করা হয়েছে ডন ব্র্যাডম্যানের। এমনকি, এও বলা হয়েছে, তিনটি ইনিংসের (লর্ডসের দ্বিতীয় এবং হেডিংলে টেস্টের দু’টি ইনিংস) জন্য তিনি বাইরে চলে না গেলে হয়তো এক অ্যাশেজ সিরিজে ব্র্যাডম্যানের ৯৭৪ রানের রেকর্ডও তাড়া করার সুযোগ পেতেন স্মিথ। ব্র্যাডম্যানের ওই রান এসেছিল সাত ইনিংস থেকে। এই মুহূর্তে ৬৮ টেস্ট খেলা স্মিথের গড় ৬৪.৫৬। ব্র্যাডম্যানের অবিশ্বাস্য ৯৯.৯৪ গড়ের পরেই।
অনেকের কাছেই তাই স্মিথের এই সিরিজ শাপমুক্তির অ্যাশেজ। ওভালের দর্শকদের আচরণও বুঝিয়ে দিয়েছে, তাঁরা ঠিক কী চোখে এখন দেখছেন এই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানকে। স্মিথ বলছেন, ‘‘মাঠ ছাড়ার সময় দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখে আমি খুশি। তবে শেষ টেস্টে আরও কিছু রান করে দলকে জেতাতে পারলে ভাল লাগত।’’ ওভালে ইংল্যান্ড ১৩৫ রানে জেতায় সিরিজ ২-২ অবস্থায় শেষ হল। তবে আগের বারের সিরিজজয়ী হিসেবে অ্যাশেজ রেখে দিল অস্ট্রেলিয়াই।
সিরিজ চলাকালীন বাইশ গজে তাঁদের যতই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকুক না কেন, রবিবার ওভাল টেস্টের পরে দু’দলের ক্রিকেটারদেরই দেখা গিয়েছে এক জায়গায় জড়ো হয়ে আড্ডা মারছেন। ইংল্যান্ডের বাঁ-হাতি স্পিনার জ্যাক লিচকে ব্যঙ্গ করার জন্য এর আগে সমালোচিত হয়েছিলেন স্মিথ। সেই লিচের সঙ্গে আলাদা করে ছবি তুললেন অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান। গল্প করলেন প্রতিপক্ষ ক্রিকেটারদের সঙ্গে। স্মিথ-আর্চার যুগলবন্দিও ধরা পড়ল এক ফ্রেমে।
দেড় মাসের নাটকীয় উত্থান-পতনের পরে এখন স্মিথের রাস্তাতেই সম্ভবত হাঁটবেন দু’দলের ক্রিকেটারেরা। ‘‘মানসিক এবং শারীরিক ভাবে আমি খুব ক্লান্ত হয়ে আছি। এখন দু’সপ্তাহ স্রেফ ছুটি কাটাতে চাই,’’ বলে গেলেন স্মিথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy