Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
সুখ-দুঃখের ওয়াংখেড়েতে সিরিজ ফয়সালার দ্বৈরথ

ক্যালিপসো শক্তি নাকি ভারতীয় শিল্প, মুম্বই আজ কার

যদিও সেই ম্যাচের থেকে এই ভারতীয় দলে রয়েছেন শুধু তিন জন। বিরাট কোহালি, যিনি সেই সেমিফাইনালেও ৪৭ বলে ৮৯ নট আউট করে ভারতের সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন। বাকি দু’জন রোহিত শর্মা এবং রবীন্দ্র জাডেজা। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দলে সেই বিশ্বকাপ থেকে আছেন দু’জন। লেন্ডল সিমন্স এবং দিনেশ রামদিন।

যুযুধান: পরিচিত ওয়াংখেড়েতে নতুন কীর্তির সামনে দাঁড়িয়ে কায়রন পোলার্ড। পিটিআই

যুযুধান: পরিচিত ওয়াংখেড়েতে নতুন কীর্তির সামনে দাঁড়িয়ে কায়রন পোলার্ড। পিটিআই

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:০৯
Share: Save:

ওয়াংখেড়ে বিরাট কোহালিদের জন্য যেমন সুখস্মৃতির, তেমনই আতঙ্কের দাগও রয়েছে!

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জয় যে মাঠে, সেখানেই যে রয়েছে কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের যন্ত্রণা। সারা জীবন মনে রাখার ছবি উঠেছিল ২ এপ্রিল, ২০১১। সে ছিল বিশ্বজয়ের রাত। আর ভুলে যাওয়ার ছবি ধরা ছিল ৩১ মার্চ, ২০১৬। স্বপ্নভঙ্গের রাত। ধোনির ভারত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছিল সেমিফাইনালে হেরে। প্রতিপক্ষ? ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

যদিও সেই ম্যাচের থেকে এই ভারতীয় দলে রয়েছেন শুধু তিন জন। বিরাট কোহালি, যিনি সেই সেমিফাইনালেও ৪৭ বলে ৮৯ নট আউট করে ভারতের সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন। বাকি দু’জন রোহিত শর্মা এবং রবীন্দ্র জাডেজা। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দলে সেই বিশ্বকাপ থেকে আছেন দু’জন। লেন্ডল সিমন্স এবং দিনেশ রামদিন। ভারতীয় দলের সর্বোচ্চ স্কোরার যেমন ছিলেন কোহালি, তেমনই ৫১ বলে ৮২ নট আউটের সাইক্লোন তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিতিয়েছিলেন সিমন্স। তাঁর সাত ছক্কা সেই রাতে নিস্তব্ধ করে দিয়েছিল ওয়াংখেড়েকে।

আরও অনেক বদলই ঘটে গিয়েছে। কোহালিদের ছিটকে দিয়ে তিন বছর আগে সে বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল ক্রিস গেল, আন্দ্রে রাসেলদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তার পর অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে তারা। এই মুহূর্তে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে দশ নম্বর কায়রন পোলার্ডের দল। তার পরেও তারা দেখিয়ে দিয়েছে, অন্তত কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে যে কোনও মুহূর্তে চমকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে ক্যারিবিয়ানরা। ক্রিস গেল নেই। আন্দ্রে রাসেল নেই। ব্র্যাভো ভাইরা নেই। কিমো পল নেই। তবু ভারতে এসে প্রথম ম্যাচ হারার পরে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছে তারা।

আজ, বুধবার ওয়াংখেড়েতে সিরিজ ফয়সালার ম্যাচে তাই পুরনো স্মৃতি ফিরে আসতে বাধ্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হাল্কা ভাবে নিয়ে বোকা বনতে চাইবে কে? বিশেষ করে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে। সারা বিশ্বের সমস্ত টি-টোয়েন্টি লিগ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। এ বারের দলটার দিকে এক ঝলক দেখলেও বোলারদের আতঙ্কিত হয়ে পড়তে হতে পারে। দলের প্রথম ছ’জন ব্যাটসম্যানের প্রত্যেকেই পাওয়ারহিটার। তাঁদের ব্যাটের ঘায়ে ঘায়েল হতে পারেন যে কোনও বোলার। লেন্ডল সিমন্স, এভিন লুইস, ব্র্যান্ডন কিং, শিমরন হেটমায়ার, নিকোলাস পুরান, কায়রন পোলার্ড।

তিরুঅনন্তপুরমে ছক্কা বৃষ্টি ঘটিয়ে তুলনামূলক ভাবে আরও ছোট ওয়াংখেড়েতে এই ক্যাবিরিয়ান ব্যাটিং লাইন আপ আরও বিধ্বংসী রূপ ধারণ করতে পারে। আর মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলা পোলার্ড, এভিন লুইস, লেন্ডল সিমন্সরা রয়েছেন তাঁদের দলের নকশা সাজানোর জন্য। হায়দরাবাদে সিরিজ শুরুর আগে ওয়াংখেড়েতেই প্র্যাক্টিস করে গিয়েছেন পোলার্ডরা। আদর্শ ব্যাটিং উইকেট এবং ছোট বাউন্ডারির সুবিধা তুলতে ক্যারিবিয়ান ফর্মুলাই হবে— ছক্কার বর্ষণে ভরিয়ে দাও। ভারতের হাতে অত পাওয়ারহিটার নেই। শিবম দুবেকে কিছুটা ধরা যেতে পারে। তাই কোহালি, রোহিতদের ধ্রুপদী ভঙ্গির উপর নির্ভর করেই বাজিমাত করার চেষ্টা করতে হবে। ট্রফির দ্বৈরথে তাই ফের সেই শক্তি বনাম শিল্প।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোচ ফিল সিমন্স মনে করিয়ে দিতে ছাড়েননি, ‘‘কায়রন (পোলার্ড) এই মাঠে প্রচুর খেলেছে। দশ বছর ধরে ও এখানে খেলছে। তাই এখানকার সব কিছু সম্পর্কেই অবহিত। ওর পরামর্শ বিশেষ করে আমাদের বোলারদের জন্য অমূল্য হয়ে উঠবে।’’ রাতের ম্যাচে প্রচুর ক্যাচ পড়া নিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি যোগ করেন, ‘‘ক্যাচ পড়লে ম্যাচ জেতা যাবে না। তবে আমি আলোর অজুহাতে সন্তুষ্ট নই। আমার মনে হয়, ক্যাচ ফেলা মানে সেই ফিল্ডারের ভুল। আলোকে দায়ী করা যেতে পারে কিন্তু আরও পরিশ্রম করা উচিত যাতে ক্যাচ না পড়ে।’’ বিশেষ করে ভারতের ফিল্ডারদের ক্যাচ ফেলার প্রদর্শনী চিন্তার কারণ। তিরুঅনন্তপুরমে বিরক্ত কোহালিও বলে দিয়েছিলেন, যত রানই করো এ রকম ফিল্ডিং করলে হারতেই হবে। কারও কারও মত, ফাইনাল-সম এই ম্যাচেও কুলদীপ যাদবের রহস্যময় বোলিং নিয়ে এসে পাল্টা চমক সৃষ্টি করো ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের জন্য। কিন্তু যা ইঙ্গিত, সেই সম্ভাবনা কম। একই প্রথম একাদশ খেলানোর কথাই ঘুরছে।

নিজেদের দেশে ২০১৯ ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দুই নতুন তারকা ব্যাটসম্যান ব্র্যান্ডন কিং এবং লেগস্পিনার হেডেন ওয়ালশ জুনিয়র। জোরে বোলারদের বিরুদ্ধেও আক্রমণাত্মক হওয়ার ক্ষমতা ধরেন কিং। পোলার্ড বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্ব করছেন। দুই পেসার কেসরিক উইলিয়ামস এবং স্যালুট মাস্টার শেল্ডন কটরেল ভাল বল করছেন। ভারতের পরিবেশে এসেও সুইং এবং কাট করাচ্ছেন কটরেল। কে আর বলার সাহস দেখায় যে, এটা ভাঙাচোরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy