Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Ballon D’or

মেসি, রোনাল্ডোর সাম্রাজ্যে ভাগ বসাতেন লেওনডস্কি? কে পেতে পারতেন এ বারের ব্যালন ডি’অর

ব্যালন ডি'অর মানেই কিন্তু চর্চায় চির প্রতিদ্বন্দ্বী মেসি-রোনাল্ডো। কেমন ছিল তাঁদের ২০১৯-’২০ মরসুম?

মেসি, লেওনডস্কি নাকি রোনাল্ডো, কার ভাগ্যে উঠতে পারতো এ বারের ব্যালন ডি'অর?

মেসি, লেওনডস্কি নাকি রোনাল্ডো, কার ভাগ্যে উঠতে পারতো এ বারের ব্যালন ডি'অর?

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২০ ১২:১০
Share: Save:

করোনার জেরে বাতিল হয়েছে এ বারের ব্যালন ডি’অর। ফরাসি ফুটবল পত্রিকার এই সম্মান, বিশ্ব ফুটবলের সেরা পুরষ্কার হিসেবে ধরা হয়। গত বছর ষষ্ঠ বার এই পুরষ্কার জিতে, চির প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন লিয়োনেল মেসি। ২০ জুলাই ফরাসি পত্রিকার সম্পাদক পাসকাল ফেরে ঘোষণা করেন, এই বছর দেওয়া হবে না পুরষ্কার। তিনি বলেন, “করোনাকালে ছন্দ নষ্ট হয়েছে ফুটবলের। বাতিল হয়ে গিয়েছে বিশ্বের বহু ফুটবল লিগ। খেলা শুরু হলেও স্টেডিয়াম থেকেছে দর্শকহীন। এই সময় ব্যালন ডি’অর দেওয়া উচিত হবে না।”

ব্যালন ডি’অর বিজেতা ঠিক হয় ভোটের মাধ্যমে। বিভিন্ন দেশের কোচ, অধিনায়ক এবং সাংবাদিকদের দেওয়া ভোটে ঠিক করে নেওয়া হয় কে পাবেন এই শিরোপা। দু’মাসের বেশি সময় খেলা বন্ধ থাকায় যে পুরষ্কার দেওয়া গেল না, সব কিছু স্বাভাবিক থাকলে কে পেতে পারতেন তা? মেসি কি পারতেন সপ্তম বার এই পুরষ্কার পেতে? নাকি রোনাল্ডো সুযোগ হারালেন মেসিকে ব্যালন ডি’অরের সংখ্যায় ছুঁয়ে ফেলার? নাকি এমন কেউ এ বার পেতে পারতেন যিনি আগে কখনও জেতেননি?

২০০৮ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত মেসি-রোনাল্ডো বাদে এই পুরষ্কার এক মাত্র পেয়েছিলেন ক্রোয়েশিয়ার লুকা মদ্রিচ (২০১৮)। বিশ্বকাপে নজরকাড়া পারফরম্যান্স মদ্রিচকে এনে দেয় এই পুরষ্কার। এই বারে যদিও তিনি স্বপ্নের ফর্মের ধারে কাছেও ছিলেন না। চোটের জন্য বাদ যাওয়া এবং অধিকাংশ ম্যাচে পুরো ৯০ মিনিট না খেলা পুরষ্কার থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদের মাঝমাঠের প্রাণভোমরাকে। এই বছর ৪০টি ম্যাচে গোল করেছেন পাঁচটি আর গোলের পাস বাড়িয়েছেন মাত্র ১১টি।

আরও পড়ুন: পিএসজি ভয়ঙ্কর, বায়ার্নকে সতর্কবার্তা বেকেনবাউয়ারের

গত বছর পুরষ্কার পাওয়ার খুব কাছে এসে ফিরে যাওয়া ভির্জিল ফান জাইক কি এই বার পেতে পারতেন এই পুরষ্কার? ৩৮টি প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচের মধ্যে ১৫টি ম্যাচে তাঁকে পার করতে পারেনি বিপক্ষের স্ট্রাইকাররা। দলের সাহায্য আক্রমণে গিয়ে করেছেন পাঁচটি গোলও। লিভারপুলের ৩০ বছর পর প্রিমিয়ার লিগ জেতার অন্যতম কাণ্ডারী ছিলেন জাইক। প্রাক্তন মোহনবাগান তারকা ফ্রান গঞ্জালেজ বলছেন, আরেক ডিফেন্ডারের কথা। সবুজ-মেরুনকে আই লিগ দেওয়া ফ্রান বলেন, “স্ট্রাইকারদের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া ডিফেন্ডারদের মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদ অধিনায়ক সার্জিও র‍্যামোসও পেতে পারতেন এই বারের ব্যালন। আমার দেখা সেরা ডিফেন্ডার র‍্যামোস। দলের জয়ে ওঁর গুরুত্ব অপরিসীম।”

তবে ব্যালন ডি'অর মানেই কিন্তু চর্চায় চির প্রতিদ্বন্দ্বী মেসি-রোনাল্ডো। কেমন ছিল তাঁদের ২০১৯-’২০ মরসুম?

এ বছর কি ব্যালন ডি'অর জিততে পারতেন মেসি কিংবা রোনাল্ডো?

এই মরসুমে ৪৪টি ম্যাচ খেলেছেন মেসি, করেছেন ৩১টি গোল। গোল করিয়েছেন ২৬টি। তবে বার্সেলোনাকে লা লিগা জেতাতে ব্যর্থ তিনি। লিগে তাঁর করা ২৫টি গোল এবং ২১টি গোলের পাস মলিন হয়ে গিয়েছে লিগ না পাওয়ার ব্যর্থতায়। করোনার প্রকোপের আগে বার্সেলোনা ভক্তরা নিশ্চিত ছিলেন লিগ আসছেই। রোনাল্ডো-হীন রিয়াল মাদ্রিদ আজও খুঁজে পায়নি গোল করার লোক। তাঁদের হারিয়ে লিগ আসবে ক্যাম্প ন্যু-তে। এই আশায় বুক বাঁধছিলেন ভক্তরা। কিন্তু লিগ ফের শুরু হতেই দেখা গেল অন্য চিত্র। শেষ ১১ ম্যাচের মধ্যে ১০ ম্যাচ জিতে লিগ পকেটে পুড়ে নিল জিদান-বাহিনী। অন্য দিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ আট থেকেই বিদায় নিতে হল মেসিদের। শেষ ম্যাচে লজ্জার হার যেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন ফুটবল রাজপুত্র। বায়ার্নের গতির কাছে আত্মসমর্পণ করল তিকিতাকা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মেসির এই মরসুমে গোলের সংখ্যা তিন। গোল করিয়েছেন বেশি (৪টি)। এই পারফরম্যান্সে কি তিনি জিততে পারতেন ব্যালন ডি’ অর?

রিয়াল ছেড়ে জুভেন্টাসে পাড়ি দেওয়া রোনাল্ডোও যেন আগের মতো আগুনে ফর্মে নেই। জুভেন্টাসের সিরি আ জয়ের কাণ্ডারী লিগে করেছেন ৩১টি গোল। নিজেদের লিগে সমপরিমাণ ম্যাচ খেলে মেসির থেকে ছয় গোল বেশি। কিন্তু লিগের সর্বোচ্চ গোলের মালিক হতে পারেননি পর্তুগিজ মহাতারকা। তাঁকে টপকে ৩৬টি গোল করে সেরি আ-র টপ স্কোরার ইটালির সিরো ইমমোবাইল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জুভেন্টাসের যাত্রা শেষ হয়ে যায় শেষ ১৬তেই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এই মরসুমে তাঁর ঝুলিতে মাত্র চারটি গোল।

এ বারের ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠিত না হওয়ায় সব থেকে বঞ্চিত বোধ হয় পোল্যান্ডের রবার্ট লেওনডস্কি। এটিকে মোহনবাগানের কোচ আন্তোনিও হাবাসের মতে, এ বারে এই পুরস্কারের প্রবল দাবিদার ছিলেন বায়ার্ন স্ট্রাইকার। তিনি বলেন, “শুধু যে নিজের গোলের সংখ্যা বাড়িয়েছেন লেওনডস্কি তাই নয়, দলের জয় বড় অবদান রেখেছেন প্রতি ম্যাচেই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গোলের রেকর্ডে ও ছাপিয়ে যেতে পারে রোনাল্ডোকেও।” এখনও পর্যন্ত মরসুমে তিনি করেছেন ৫৫টি গোল। বায়ার্নের বুন্দেশলিগা জয়ের পিছনে রয়েছে ৩১ ম্যাচে তাঁর ৩৪টি গোল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও তিনি অপ্রতিরোধ্য। এখনও পর্যন্ত ৯ ম্যাচে ১৫ গোল করেছেন। টপকে গিয়েছেন মেসির এক মরসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সব চেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড। সামনে শুধু রোনাল্ডোর ১৭ গোল। পারবেন কি নেমারদের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করে সেই রেকর্ড টপকে যেতে? এ বারের ব্যালন ডি’ অরের জোরালো দাবিদার ছিলেন পোলিশ তারকা।

এই মরসুমের তিন দাবিদার। গ্রাফিক্স- শৌভিক দেবনাথ

বিশ্ব ফুটবলের বিভিন্ন লিগে আরও অনেক ফুটবলারই হয়ে উঠতে পারতেন ব্যালন ডি’ অরের দাবিদার। দাবিদারদের মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদেককে লিগ জেতানো ফ্রান্সের করিম বেঞ্জিমা (মরসুমে ২৭ গোল) যেমন আছেন, তেমনই আছেন আরেক ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপে (মরসুমে ৩০ গোল)। বাদ দেওয়া যাবে না লিভারপুলকে লিগ জেতানো সাদিয়ো মানেকেও। সেনেগাল তারকার মরসুমে ৪৭ ম্যাচে রয়েছে ২২ গোল, সঙ্গে ১২টি গোলের পাস। 'দ্য রেডস'-দের মাঝ মাঠে তিনি যেন ছুটে বেড়ান চারটি ফুসফুস নিয়ে। আসতে পারতো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা জেমি ভার্ডের নামও। কোচ, অধিনায়ক, সাংবাদিকদের ভোটে কিছুটা প্রাধান্য পায় কারিশ্মাও। তাই বার বার আলোচিত নামগুলোই উঠে আসে প্রথম তিনে। যদিও এ বারের মরসুমে চোটের কারণে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছিলেন ব্রাজিলের ‘ওয়ান্ডার কিড’ নেমার। এখনও পর্যন্ত মরসুমে তিনি করেছেন মাত্র ১৯টি গোল। সুযোগ রয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোলের সংখ্যা বাড়ানোর। করোনার কারণে বাতিল হয়ে যাওয়া ফরাসি লিগে তাঁর গোল সংখ্যা বাড়াতে দেয়নি। ইস্টবেঙ্গল কোচ মারিয়ো রিভেরা অবশ্য ব্যালন ডি’অরের জন্য বেছে নিচ্ছেন নেমার, এমবাপে, লেওনডস্কি এবং মুলারকে। যদিও তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে ব্যালন ডি’ অর পাওয়া উচিত নেমারের। যদিও এখনও সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটাই বাকি। নতুন নেমার এখন অনেক বেশি আক্রমণাত্মক পজিশনে খেলছে। উইং ছেড়ে ওঁর ভিতরে ঢুকে আসা বিপদে ফেলবে বিপক্ষকে।”

প্রথম বারের জন্য ব্যালন ডি'অর বাতিল হল। অনেকের মনেই থেকে যাবে আক্ষেপ। খেলোয়াড় জীবনে এক একটা মরসুম যে কতটা দামি তা প্রত্যেক খেলোয়াড়ই বোঝেন। চলে যাওয়া এই বছর আর ফিরবে না। কে জানে পরের মরসুমেও তাঁদের স্কিল, ভাগ্য সব আগের মতোই তাঁদের সঙ্গে থাকবে কিনা। যদিও ৩৫-এর রোনাল্ডো প্রতি মরসুমে বুঝিয়ে দেন বয়স শুধুই একটা সংখ্যা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy