ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজ ভুষণ শরন সিংহ। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। —ফাইল চিত্র
ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজ ভুষণ শরন সিংহের বিরুদ্ধে কুস্তিগিরদের যৌন নিগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর গ্রেফতারি চেয়ে দিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্নায় বসেছেন বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগটের মতো কুস্তিগিররা। এর মাঝেই তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলেছেন ব্রিজ ভুষণ। পাল্টা প্রশ্ন করেছেন তিনি।
একটি সর্বভারতীয় চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্রিজ ভুষণ বলেছেন, ‘‘প্রথমে ওরা অভিযোগ করল আমি ১০০ নাবালিকাকে যৌন নিগ্রহ করেছি। এখন বলছে আমি ১০০০ নাবালিকাকে যৌন নিগ্রহ করেছি। আমি কি রোজ শিলাজিত দিয়ে বানানো রুটি খেতাম?’’ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন ব্রিজ ভুষণ। তিনি জানিয়েছেন, সব ধরনের তদন্তে সহযোগিতা করবেন তিনি। কিন্তু পদত্যাগ করবেন না। কারণ, তা হলে কুস্তিগিরদের অভিযোগকেই মান্যতা দেওয়া হবে।
২৩ এপ্রিল থেকে ধর্নায় বসেছেন কুস্তিগিররা। ব্রিজ ভুষণের পাশাপাশি দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা। শনিবার বজরং অভিযোগ করেছেন, দিল্লি পুলিশ যন্তর মন্তরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এতে তাঁদের ধর্না বন্ধ করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। একটি ভিডিয়ো বার্তায় টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জজয়ী বজরং অভিযোগ করে বলেছেন, ‘‘দিল্লি পুলিশ যন্তর মন্তরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। চারিদিকে ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে। খাবার, জল ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।’’
অভিযোগের পাশাপাশি আরও কড়া আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। বজরং বলেছেন, ‘‘এ ভাবে আমাদের থামানো যাবে না। আন্দোলন আরও বাড়বে। ব্রিজ ভুষণ গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।’’
এর আগে কুস্তিগিররা অভিযোগ করেছিলেন, ব্রিজ ভুষণের বিরুদ্ধে এফআইআর নিচ্ছে না দিল্লি পুলিশ। বিক্ষোভের মধ্যে পড়ে অবশেষে জাতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতির বিরুদ্ধে এফআইআর নিতে বাধ্য হয়েছে দিল্লি পুলিশ। দু’টি এফআইআর হয়েছে ব্রিজ ভুষণের বিরুদ্ধে। একটি নাবালিকাকে যৌন হেনস্থার জন্য পকসো আইনে করা হয়েছে। অন্যটি সম্মানহানির অভিযোগে করা হয়েছে।
দিল্লি পুলিশ এফআইআর নেওয়ার পরে সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বজরং বলেছেন, ‘‘প্রথম পদক্ষেপে জয় হল। তবে আমরা জাতীয় কুস্তি সংস্থার পদ থেকে ব্রিজ ভূষণের অবিলম্বে পদত্যাগ চাই।’’ বিনেশ বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অনুরোধ করব ওকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য। ওর মতো মানুষের থাকা উচিত হাজতে। দিল্লি পুলিশের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকেও আমাদের নজর থাকবে।’’
বিনেশদের প্রতিবাদকে সমর্থন জানিয়ে মুখ খুলেছেন টোকিয়ো অলিম্পিক্সে সোনা জয়ী জ্যাভলিন থ্রোয়ার নীরজ চোপড়া। ক্রিকেটার কপিল দেব সমাজমাধ্যমে রাস্তায় বসে প্রতিবাদ জানানো বিনেশ, সাক্ষীদের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘এরা কি আদৌ কোনও সুবিচার পাবে?’’ বীরেন্দ্র সহবাগের টুইট, ‘‘যারা আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের জাতীয় পতাকার মর্যাদা বাড়িয়েছে, তাদের এই অবস্থা কল্পনা করতে পারি না।’’ কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়িয়েছেন টেনিস তারকা সানিয়া মির্জাও।
এর মধ্যেই শনিবার ধর্নামঞ্চে গিয়েছিলেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী সন্দীপ সিংহ। এই ঘটনা নিয়ে সমাজমাধ্যমে ববিতা লেখেন, ‘‘প্রিয়ঙ্কা তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীকে নিয়ে ধর্নামঞ্চে গিয়ে কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরা মহিলা কুস্তিগিরদের ন্যায়বিচার চাইছেন। কিন্তু সন্দীপ নিজেই তো এক দলিত মহিলার শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত। তিনি কী ভাবে মহিলাদের হয়ে কথা বলছেন।’’
এই মন্তব্যের পাল্টা একটি টুইট করেন বিনেশ। সেখানে তিনি লেখেন, ‘‘তুমি যদি মহিলা কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়াতে না পারো, তা হলে আমি অনুরোধ করব, দয়া করে আমাদের আন্দোলন দুর্বল করে দিয়ো না। হাত জোড় করে অনুরোধ করছি। এত বছর পরে মহিলা কুস্তিগিররা প্রতিবাদ করছে। তুমিও তো এক জন মহিলা। আশা করি তুমি আমাদের কষ্টটা বুঝবে।’’
ববিতার দিদি গীতা অবশ্য কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি টুইটে লিখেছেন, ‘‘আমি প্রত্যেক দেশবাসীকে অনুরোধ করছি, আপনাদের যে মেয়ে-বোনরা নিজেদের অধিকারের দাবিতে আন্দোলন করছে, তাঁদের পাশে দাঁড়ান। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। এর সঙ্গে রাজনীতি মেলাবেন না। সবাই এসে একসঙ্গে প্রতিবাদ করুন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy