Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Wrestling

চার বার পালালেন, যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত ব্রিজভূষণের মুখ খুলতে আরও দু’দিন

নিজে না এসে শুক্রবার সন্ধেয় সাংবাদিকদের সামনে ব্রিজভূষণ পাঠিয়ে দিলেন ছেলেকে। ছেলে বললেন, আগামী ২২ জানুয়ারির আগে কিছু বলা হবে না। অর্থাৎ সভাপতি পদে আরও অন্তত ৪৮ ঘণ্টা দেখা যাবে ব্রিজভূষণকে, যদি না মাঝে কিছু ঘটে।

২২ জানুয়ারি জাতীয় কুস্তি সংস্থার বার্ষিক সাধারণ সভা রয়েছে। তার পরেই ব্রিজভূষণ মুখ খুলতে পারেন।

২২ জানুয়ারি জাতীয় কুস্তি সংস্থার বার্ষিক সাধারণ সভা রয়েছে। তার পরেই ব্রিজভূষণ মুখ খুলতে পারেন। ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:৫৯
Share: Save:

জাতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতির পদ থেকে ব্রিজভূষণ শরন সিংহ পদত্যাগ করবেন কিনা বা তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে শুক্রবার গোটা দিন ধরে টানাপড়েন চলল। শেষ পর্যন্ত সন্ধেয় সাংবাদিকদের দেখে ‘পালিয়ে গেলেন’ ব্রিজভূষণ। সাংবাদিকদের সামনে পাঠিয়ে দিলেন ছেলেকে। ছেলে বললেন, আগামী ২২ জানুয়ারির আগে কিছু বলা হবে না। অর্থাৎ সভাপতি পদে আরও অন্তত ৪৮ ঘণ্টা দেখা যাবে ব্রিজভূষণকে, যদি না মাঝে কিছু ঘটে। উল্লেখ্য, ২২ জানুয়ারি জাতীয় কুস্তি সংস্থার বার্ষিক সাধারণ সভা রয়েছে। তার পরেই ব্রিজভূষণ মুখ খুলতে পারেন।

এ দিনও যন্তরমন্তরের ধর্নায় সারা দিন ধরে বিনেশ ফোগত, বজরং পুনিয়ারা দাবি করেন ব্রিজভূষণের পদত্যাগের। কিন্তু তাঁর দিক থেকে কোনও জবাব আসেনি। প্রথমে বলা হয়, তিনি দুপুর ১২টায় সাংবাদিক সম্মেলন করবেন। পরে তা পিছিয়ে বিকেল ৪টে এবং আরও পিছিয়ে ৫টায় করা হয়। তার আগে জানা যায়, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক্স কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে বিকেল ৫.৪০-এ। তাই ৫টাতেও সাংবাদিক সম্মেলন করেননি ব্রিজভূষণ। সবাই ভাবেন, বৈঠকের পরে হয়তো কথা বলবেন। শোনা যায়, ৬টায় সাংবাদিক বৈঠক করবেন। কিন্তু বৈঠক সেরে বেরনোর পর সাংবাদিকদের ক্যামেরার মুখোমুখি হননি। পাঠিয়ে দেন ছেলে প্রতীককে। প্রতীক এসে বলেন, ২২ জানুয়ারি মুখ খুলবেন ব্রিজভূষণ। মাঝে তিনি আর কোনও মন্তব্য করতে চান না। তবে পরের দিকে জানা গিয়েছে, জাতীয় কুস্তি সংস্থার তরফে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রককে জবাব দিয়েছেন তিনি। কী বলেছেন তা জানা যায়নি।

উত্তরপ্রদেশে যখন এই কাণ্ড চলছে, তার মাঝে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করতে যান বজরং, রবি দাহিয়া, বিনেশ ফোগতরা। সেই বৈঠক থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও রফাসূত্র মেলেনি।

গত দু’দিন ধরেই জাতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণকে সরানোর ব্যাপারে অনড় ছিলেন কুস্তিগিররা। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। ব্রিজভূষণকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যদিও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা কোনও অভিযোগই স্বীকার করতে চাননি তিনি।

গত বুধবার ধর্নায় বসে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদকজয়ী বিনেশ ফোগত দাবি করেছিলেন, লখনউয়ে জাতীয় শিবিরে মহিলা কুস্তিগিরদের নিয়মিত যৌন হেনস্থা করতেন কোচেরা। এমনকী, ব্রিজভূষণের ভয় দেখিয়ে জোর করে কুস্তিগিরদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ারও চেষ্টা করতেন তাঁরা। বিনেশ যদিও জানিয়েছিলেন, নিজে কোনও দিন এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হননি। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে খুনের হুমকি পেয়েছেন।

সংবাদ সংস্থাকে বিনেশ বলেছিলেন, “আমি অন্তত ১০-১২ জন মহিলা কুস্তিগিরকে জানি যারা সভাপতির যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছে। ওরা এই সমস্যার কথা আমাকে বলেছে। এখন ওদের নাম নিতে পারব না। কিন্তু যদি প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়, তা হলে সবার নাম বলে দেব।”

ধর্নায় ছিলেন টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জজয়ী বজরং পুনিয়াও। তিনি সাফ জানিয়েছিলেন, সভাপতিকে সরানো না হলে তাঁরা কেউ কোনও প্রতিযোগিতায় নামবেন না। বজরংয়ের কথায়, “আমাদের লড়াই স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (সাই) বিরুদ্ধে নয়। এটা জাতীয় কুস্তি সংস্থার বিরুদ্ধে। হয় এসপার, না হয় ওসপার। যত ক্ষণ না সভাপতিকে সরানো হচ্ছে, তত ক্ষণ আমরা প্রতিবাদ করে যাব। ওঁকে না সরানো পর্যন্ত আমরা কোনও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেব না। এটা ভারতের কুস্তিকে বাঁচানোর লড়াই।”

ব্রিজভূষণ অবশ্য নিজের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “অভিযোগের কোনও সত্যতা নেই। কেন আমি পদ ছাড়ব? যদি একজনও এসে আমার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ প্রমাণ করতে পারে, তা হলে আমি ফাঁসিকাঠে চড়তে রাজি। একজন শিল্পপতির চক্রান্ত এটা। সিবিআই বা পুলিশ এর তদন্ত করুক। কোনও একনায়কতন্ত্র চলছে না। এক সপ্তাহ আগে এই কুস্তিগিররাই আমার সঙ্গে দেখা করেছে। তখন কেউ কেন কিছু বলেনি?” বিনেশকে দেওয়া খুনের হুমকির প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, “কেন বিনেশ আমার সঙ্গে কথা বলেনি বা তখন পুলিশকে এ কথা জানায়নি। কেন প্রধানমন্ত্রী বা ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে এত দিন দেখা করেনি। এখন এ সব বলার কী অর্থ?”

তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলেছিলেন ব্রিজভূষণ। বলেছিলেন, ‘‘আমি শুনেছি দিল্লিতে আমার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। আমি বুঝতেই পারছি না কেন এই অভিযোগ করা হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে বিনেশ অভিযোগ করেছে। কিন্তু তার আগে কি অন্য কোনও কুস্তিগির এই অভিযোগ তুলেছিল? কেউ এগিয়ে এসেছিল? হঠাৎ করে এখন কেন অভিযোগ উঠছে? সবটাই ষড়যন্ত্র। এই অপবাদ নিয়ে থাকা যায় না। দরকার পড়লে পদত্যাগ করব।’’

পরে বৃহস্পতিবার আবার মুখ খুলেছিলেন ব্রিজভূষণ। জানিয়েছিলেন, ফেডারেশনকে বলির পাঁঠা করা হচ্ছে। এমন ভাবে দেখানো হচ্ছে যে ফেডারেশন জোর করে সব কিছু করছে। তিনি বলেছেন, ‘‘কেউ ট্রায়াল দেয় না, জাতীয় স্তরে প্রতিযোগিতায় নামে না। কিন্তু তার পরেও ওদের কিছু বলা যাবে না। ফেডারেশন নিয়ম তৈরি করে। আমরা সেই নিয়ম মেনে চলি। যারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে তারা কেউ জাতীয় স্তরে একটাও প্রতিযোগিতায় নামেনি। আমি সেটা নিয়ে কথা বলেছি বলেই আমার উপর রাগ। তাই আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy