সৌজন্য: ম্যাচের পরে শেই হোপকে অভিনন্দন কোহালির। এএফপি
আর কয়েক দিন পরেই কলকাতায় আইপিএলের নিলাম। আমি নিশ্চিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বেশ কয়েক জন ক্রিকেটারকে নিয়ে সেই নিলামে ভালই লড়াই হবে। যেমন শিমরন হেটমায়ার বা ওদের ফাস্ট বোলার শেল্ডন কটরেল। বিশেষ করে হেটমায়ারের এই ইনিংসের পরে ১৯ তারিখ ওকে নিয়ে আইপিএলের দলগুলোর মধ্যে টানাটানি হলে আদৌ অবাক হব না।
চেন্নাইয়ের যে পিচে রবিবার ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচটা হল, সেটা বেশ মন্থরই লেগেছে। সেখানে ভারত যখন এক বার আট উইকেটে ২৮৭ রান তুলে ফেলে, তখন মনে হচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে এই রান তাড়া করা কঠিন হবে।
কিন্তু শেই হোপ আর হেটমায়ার আমাদের সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করল। দু’জন পুরোপুরি দুই ঘরানার ব্যাটিং করল। দুই ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরিতে প্রথম ওয়ান ডে আট উইকেটে জিতে নিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হেটমায়ার ১০৬ বলে ১৩৯ রান করে ফিরে গেলেও হোপ অপরাজিত থাকল ১০২ রানে।
আরও পড়ুন: জাডেজা বিতর্ক নিয়ে কোহািল: এমন আউট দেখিনি কখনও
হোপ হল একেবারে মুম্বই ঘরানার ব্যাটসম্যান। নিজের উইকেটের দামটা বোঝে। কোনও সময় উইকেট ছুড়ে দেয় না। ম্যাচ শেষ করে ওঠে। পাওয়ার হিটারে ভরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিংয়ে ও-ই একমাত্র ধ্রুপদী ক্রিকেটার। টেকনিকের দিক দিয়েও সেরা।
এ দিন অবশ্য শিল্পকেও ছাপিয়ে গেল শক্তি। হোপকে পিছনে ফেলে দিল হেটমায়ার। এই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান নিখাদ পাওয়ার হিটার। প্রতিটা বড় শটের পিছনে রয়েছে শক্তির ছাপ। ব্যাকফুটে খুবই শক্তিশালী। একটা শট তো এখনও চোখে ভাসছে। রবীন্দ্র জাডেজাকে মারা একটা ছয়। বোলারের মাথার উপর দিয়ে গ্যালারিতে ফেলে দিল। কিন্তু ছয়টার বিশেষত্ব হল, হেটমায়ার ব্যাকফুটে শটটা খেলেছিল। ফ্রন্টফুটে বোলারের মাথার উপর দিয়ে ছয় মারাটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু ব্যাকফুটে, বাঁ-হাতি স্পিনারের বলে কেউ এ রকম শট মারছে, ভাবাই যায় না। ওর শক্তি সম্পর্কে একটা আঁচ পাওয়া যায় এই শটেই। এ রকম মন্থর উইকেটে এই ধরনের স্ট্রোক প্লে দেখা কিন্তু খুবই বিরল অভিজ্ঞতা।
আরও পড়ুন: নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক স্টার্ক
এই শক্তি আর শিল্পের মিশেলকে সামলাতে পারল না ভারতীয় বোলিং। মাঝের ওভারগুলোয় বিপক্ষের উপরে একেবারেই চাপ রাখতে পারল না কেউ। আমার মনে হয়েছে, এই ধরনের পিচে যুজবেন্দ্র চহালকে বাইরে রাখাটা ঠিক হয়নি। লেগস্পিনার যে কোনও সময় উইকেট তুলে নিতে পারে। শিবম দুবে বা কেদার যাদবকে দিয়ে পাঁচ নম্বর বোলারের কাজটা চালাতে চেয়েছিল ভারত। যেটা কৌশল সফল হল না। কেদারকে এক ওভারের বেশি দেওয়া গেল না। শিবম তো ৭.৫ ওভারে ৬৮ রান দিয়ে চলে গেল।
হেটমায়ার বাঁ-হাতি হলেও চহাল ওকে সমস্যায় ফেললেও ফেলতে পারত বলেই আমার মনে হয়। কারণ চহালের হাতে ভাল গুগলি আছে। ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা চায় বলটা তাড়াতাড়ি ব্যাটে আসুক। কিন্তু চহাল হাওয়ায় বলটা ভাসিয়ে রাখতে পারত। হয়তো তা হলে এত সহজে শট নিতে পারত না হেটমায়াররা।
তবে এই হারেও ভারতকে স্বস্তি দিতে পারে একটা ব্যাপার। প্রথম তিন ব্যাটসম্যান (রোহিত, রাহুল এবং কোহালি) বড় রান না পেলেও ভারত পৌঁছে যায় প্রায় তিনশোর কাছাকাছি। আর অনেক দিন পরে রানে ফিরল ঋষভ পন্থ।
ছেলেটা যে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে আছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওকে এ দিন এক জন নিখুঁত ব্যাটসম্যানের মতোই খেলতে দেখলাম। শুরু থেকেই উড়িয়ে দেব, এই মনোভাবটা ছিল না। আরও একটা জিনিস করতে দেখলাম ঋষভকে। কখনও পপিং ক্রিজের দু’পা সামনে দাঁড়িয়ে ব্যাট করল, কখনও আবার দু’পা ভিতরে ঢুকে। এই ভাবে বোলারদের লেংথটা ও নিজের মতো ছোট-বড় করে নিতে পারছিল। ক্রিজের ভিতরে ঢুকে পোলার্ডকে যে কভার ড্রাইভটা মারল, সেটা ভোলা যাবে না। এই ইনিংসে কিন্তু আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া উচিত ঋষভের।
এ দিন ম্যাচ জেতাতে না পারলেও শ্রেয়স আইয়ার একটা জিনিস পরিষ্কার করে দিয়েছে। সাদা বলের ক্রিকেটে চার নম্বর জায়গায় ওই সেরা লোক। প্রথম তিন জন ফিরে যাওয়ার পরে ঋষভকে নিয়ে ইনিংসটা গড়তে শুরু করে। প্রথম দিকে সতর্ক ছিল, পরের দিকে রানের গতি ভালই বাড়াল।
৩৫ বলে ৪০ রান করে কেদার যাদবও ছয় নম্বরে নেমে ওর কাজটা ঠিকঠাক করে গেল। জাডেজার দুর্ভাগ্য, বিতর্কিত রান আউট হল। দেখে মনে হল, কায়রন পোলার্ডের কথা শুনে তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য নেন মাঠের আম্পায়ার। সে রকমটা হলে কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক নয়। ফিল্ডার কখনও আম্পায়ারকে প্রভাবিত করতে পারে না।কিন্তু শিবম দুবের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আমার প্রশ্ন থাকছে। বল-ব্যাট কিছুতেই দাগ কাটতে পারল না।
আগের দিন দেখছিলাম, অধিনায়ক পোলার্ড বলেছে ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে ক্যালিপসোর সুর ফেরাতে চায় ও। এ দিন সেই সুর ফিরল দুই ব্যাটসম্যানের হাত ধরে। হোপ যদি ধ্রপদী সঙ্গীত হয়, তা হলে হেটমায়ার ছিল জীবনমুখী গান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy