ফাইল চিত্র।
একত্রিশ বছর আগে সোল অলিম্পিক্সে এই দিনটাতেই কার্ল লুইসকে হারিয়ে সোনা জেতেন বেন জনসন। তার কয়েক ঘণ্টা পরেই আছড়ে পড়ে সেই সংবাদ— ডোপ পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন বেন।
তিন দশক পরেও ডোপের অভিশাপমুক্ত হতে পারেনি ক্রীড়াজগত। বরং অলিম্পিক্সের খেলাধুলোর ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় দৈত্যের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। যেমন জনসনের সেই অভিশপ্ত দৌড়ের তিরিশতম বার্ষিকীতেই ফিরে এসেছে রাশিয়াকে নিয়ে সন্দেহের মেঘ। আবারও ডোপিং নীতি লঙ্ঘণ করার দায়ে বহিষ্কৃত হতে পারে তারা।
দোহায় অ্যাথলেটিক্সের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ হচ্ছে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর। রাশিয়াকে সেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি, সন্দেহজনক ডোপিং কার্যকলাপের জন্য সামনের বছর টোকিয়ো অলিম্পিক্সে অংশগ্রহণ করাও অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে পুটিনের দেশের সামনে।
বিশ্ব ডোপ-বিরোধী সংস্থার (ওয়াডা) সুনজের কখনওই ছিল না রাশিয়া। বিশেষ করে ২০১৬ সালে সোচিতে শীতকালীন অলিম্পিক্সে রাষ্ট্র-পরিচালিত ডোপিংয়ের মারাত্মক অভিযোগ ওঠার পরে তাদের অবস্থা আরওই খারাপ হয়। আন্তর্জাতিক ক্রীড়া থেকে তারা নির্বাসিতও ছিল এর জন্য। পরে শর্তসাপেক্ষে রাশিয়াকে ফিরিয়ে নেওয়া হলেও তারা সম্পূর্ণ ভাবে সেই শর্ত পালন করতে পারছে না বলে ফের অভিযোগ উঠেছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে ওয়াডার হাতে ডোপ-বিরোধী প্রক্রিয়া নিয়ে যে সমস্ত তথ্য তুলে দেওয়ার হয়েছে, তার মধ্যে নানা রকম অসঙ্গতি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। ওয়াডার সন্দেহ, তথ্যগুলি নিজেদের মতো করে ওলটপালট করে নিয়েছে তারা। যা সম্পূর্ণ ভাবেই আইনবিরুদ্ধ এবং মারাত্মক অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত হবে। রাশিয়াকে তিন সপ্তাহ দেওয়া হয়েছে এই অসঙ্গতিগুলির ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য।
রাশিয়াকে বলা হয়েছিল, মস্কোতে তাদের যে ডোপ-বিরোধী ল্যাবরেটরি রয়েছে, তা যে সত্যিই ওয়াডার সমস্ত আইন এবং বিশুদ্ধতা মেনে চলে, তার প্রমাণ দাখিল করতে হবে। একাধিকবার সেই তথ্যপ্রমাণ দেওয়ার সময়সীমা লঙ্ঘণ করেছে তারা। অবশেষে ওয়াডার হাতে তথ্য তুলে দিলেও সেগুলির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিজের দেশের সংবাদসংস্থা ‘তাস’-কে রাশিয়ার ক্রীড়ামন্ত্রী পাভেল কোলোবকভ যদিও পাল্টা বলেছেন, ‘‘অসঙ্গতিগুলি ঠিক কী, সেটাও আমাদের জানানো হোক। দু’পক্ষের লোকেরাই বিষয়টি গভীরে গিয়ে দেখার চেষ্টা করছে।’’ আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট ক্রেগ রিডি বলেছেন, ‘‘বিষয়টি হতাশাজনক কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, অসৎ খেলোয়াড়দের চিহ্নিত করা।’’ খেলোয়াড়দের নানা সংস্থা ওয়াডার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। তাদের প্রতিবাদ, বিশ্ব ডোপ-বিরোধী সংস্থা বিষয়টিকে সামলাতেই পারেনি। আখেরে লাভবান হবে রাশিয়াই।
নিজেদের দেশে সোচি অলিম্পিক্সের সময় রাতের অন্ধকারে নমুনা পাল্টে ফেলার অভিযোগ উঠেছিল রাশিয়ার বিরুদ্ধে। সেই সময়ে পুটিনের দেশে ডোপিং সংক্রান্ত কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তিই ফাঁস করে দেন হলিউড থ্রিলারের কায়দায় চলা সেই অপরাধের কাহিনি। তার পরেই রাশিয়ার ডোপ-বিরোধী সংস্থাকে বাতিল করে দেয় ওয়াডা। নির্বাসিত করা হয় রাশিয়াকেও। তিন বছর নির্বাসিত থাকার পরে রাশিয়ার ডোপ-বিরোধী সংস্থাকে পাকাপাকি ভাবে ফিরে আসার জন্য রাশিয়াকে দু’টো শর্ত পূরণ করার কথা বলেছিল ওয়াডা। এক) মেনে নিতে হবে তারা সত্যিই রাষ্ট্র পরিচালিত ডোপিং কার্যকলাপ ঘটিয়েছিল এবং দুই) মস্কোর ডোপ-বিরোধী ল্যাবরেটরিতে ওয়াডাকে সরেজমিনে সব কিছু দেখার অনুমতি দিতে হবে।
এর পরেই আশ্চর্যজনক ভাবে ওয়াডা সুর নরম করে এবং গত সেপ্টেম্বরে রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফেরার অনুমতি দিয়ে দেয়। অথচ, তখনও মস্কোর ল্যাবরেটরিতে ঢোকার ছাড়পত্রই পায়নি বিশ্ব ডোপ-বিরোধী সংস্থা। ক্রীড়া বিশ্ব তোলপাড় হয়ে যায় সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে। ডিসেম্বরের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও রাশিয়া তাদের ল্যাবরেটরি সংক্রান্ত শর্ত মানেনি। জানুয়ারিতে ওয়াডার একটি দলকে তথ্য যাচাইয়ের অধিকার দেয় তারা। অনেকেই তখন অভিযোগ করেছিলেন যে, রাশিয়ার প্রতি সুর নরম করছে ওয়াডা। কিন্তু ওয়াডার শীর্ষ কর্তারা সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, তাঁরা ঠিক পথেই এগোচ্ছেন এবং অপরাধীরা কেউ ছাড়া পাবে না।
প্রশ্ন এবং পাল্টা সওয়াল এখানেই থামছে না। ক্রীড়া বিশ্ব মনে করছে, গত পাঁচ বছর ধরে চলা এই নাটকের উপর যবনিকা এত তাড়াতাড়ি পড়ার নয়। ওয়াডার অন্দরমহলে কর্তারা দাবি করছেন, এই কারণেই রাশিয়াকে সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল কারণ এর ফলে তথ্য সংক্রান্ত যে কারচুপি ছিল, সেটাকেই আরও ভাল ভাবে সামনে আনা যাবে। মস্কোর ল্যাবরেটরিতে তাঁরা হাত দিতে না পারলে সেই সব সন্দেহজনক তথ্য ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকত বলে তাঁদের বক্তব্য। ওয়াডা কর্তারা বলে চলেছেন, যদি রাশিয়া অসঙ্গতি নিয়ে সঠিক ব্যাখ্যা না দিতে পারে, তারা ফের নির্বাসিত হবে। সেক্ষেত্রে সামনের বছর অলিম্পিক্সেও তারা অংশ নিতে পারবে না। নির্বাসিত হলে রাশিযা যদিও তার পরে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে (ক্যাস) যেতে পারে। তখন ক্যাস যা রায় দেবে, সেটাই চূড়ান্ত হবে। বিশেষজ্ঞরা যদিও বলছেন, এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে আরও এক বার দেখিয়ে দিয়ে গেল, রাশিয়াকে বিশ্বাস করলে ঠকতে হবে। প্রশ্ন উঠছে, রুসাডা অর্থাৎ রাশিয়ার ডোপ-বিরোধী সংস্থাকে ফের অনুমোদন দেওয়ার আগে ওয়াডা তথ্য সংক্রান্ত সত্যতা যাচাই করে নিল না কেন?
বেন জনসন কেলেঙ্কারির একত্রিশ বছর পরেও ডোপিংকে ঘিরে সেই প্রশ্নই বেশি, উত্তর কম!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy