বিধ্বংসী: ওয়াংখেড়েতে বিরাট-ঝড়। মারলেন সাতটি ছক্কা। দেখালেন, টি-টোয়েন্টিতেও শাসন করতে পারেন। এপি
ওয়াংখেড়েতে বুধবার যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক কায়রন পোলার্ড টস জিতে ফিল্ডিং নিল, তখন মনটা চিন্তায় ভরে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল, শেষ ম্যাচেও বোধহয় রান তাড়া করার সুবিধা নেবে ক্যারিবিয়ানরা!
কিন্তু যে দলে বিরাট কোহালি রয়েছে, সেই দলের কাছে টস জেতা বা হারাটা অনেক সময় গৌণ হয়ে দাঁড়ায়। মোদ্দা কথাটা হল, কোহালিকে তুমি থামাতে পারছ কি না। যা ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলাররা করতেই পারেনি। শুরুতে দুই ওপেনারের ঝড়। তার পরে বিরাটের সেই পরিচিত ব্যাটিং বিক্রম। দুইয়ের যোগফলে ২০ ওভারে ভারতের রান দাঁড়াল ২৪০।
বল পড়ে পিচে আসছিল। ২২ গজে অল্প ঘাস ছিল। পিচের চরিত্র দেখে মনে হল, সেই ঘাস ভিজে। তাই শুরুতে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলাররা নিজেদের ছন্দেই বল করবে, তা বুঝতে পেরেছিলাম। ভারতীয় ইনিংসে শেল্ডন কটরেলের প্রথম বলটাই ছিল ইনসুইং ইয়র্কার। রোহিত শর্মা তা খেলেছিল রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে। কিন্তু পরের বলেই মিড অফের বাঁ দিক দিয়ে যে ড্রাইভটা করেছিল, তাতেই ছন্দ পেয়ে যায় রোহিত (৭১)। ওর খেলার ধরনটাই এ রকম। শুরুতে চার-পাঁচটা বল ঠিক মতো মারতে পারলেই স্বমূর্তি ধারণ করে। এ দিনও দেখলাম সে ভাবেই মিডঅনের উপর দিয়ে ছক্কা মারল। অর্ধশতরানও করল ছক্কা মেরে। সঙ্গে কে এল রাহুলের (৯১) শট নির্বাচন ও সময়জ্ঞানেরও প্রশংসা করতেই হচ্ছে। ব্যাটের ‘ফেস’ খুলে রেখে কভারের উপর দিয়ে বা আপার কাটে যে ছক্কাগুলো মারল তা দুর্দান্ত।
কিন্তু ওয়াংখেড়েতে এ দিন ভারতের দুই ওপেনারের দাপট যেন নায়কের আগমনের আগের চমক। আসল বিনোদন শুরু হল ১২.৩ ওভারে কোহালি ক্রিজে আসার পরে। তার আগে দুই ওপেনার যখন আরব সাগরের তীরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ব্যাটে ঝড় তুলেছে, তখন টিভি ক্যামেরা মাঝে মাঝে ধরছিল বিরাটকে। দেখছিলাম, কখনও যুজবেন্দ্র চহাল, কখনও রবীন্দ্র জাডেজা বা সঞ্জু স্যামসনের সঙ্গে হাসিঠাট্টা করছে। এতে বোঝা যায়, নিজের প্রতি ওর আত্মবিশ্বাস ঠিক কোন পর্যায়ে রয়েছে! সিরিজ ১-১। আগের ম্যাচে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ দিন টস জিতে ফিল্ডিংও করছে তারা। কিন্তু বিরাটকে দেখে মনে হচ্ছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবির থেকে আসা কোনও চাপই ওকে বিব্রত করতে পারবে না।
এ দিন যে শটগুলো বিরাটকে খেলতে দেখলাম, তা বর্ণনা করা খুব কঠিন কাজ। অবিশ্বাস্য কিন্তু প্রত্যেকটা ক্রিকেটীয় শট। আর তা কাজে লাগিয়েই সাতটি ছক্কা ও চারটি চার সহযোগে ২৯ বলে অপরাজিত ৭০। ক্রিকেটের ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করব, বিরাটের এই অবিশ্বাস্য ছন্দের উৎকর্ষ আগামী অক্টোবর মাসে যেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময়ে আরও বাড়ে। তা হলে কুড়ির বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখতেই পারি।
জেসন হোল্ডারকে মিডউইকেট ও মিডঅনের মাঝামাঝি জায়গা দিয়ে মাঠের বাইরে পাঠাল। কেসরিক উইলিয়ামসকে মিড অনের উপর দিয়ে ছক্কা দেখে মনে হল এগুলো বিরাটের কাছে যেন ‘ব্রেকফাস্ট শট’। এতটাই সহজ! সঙ্গে উইকেটের মধ্যে দৌড়। ক্রিকেটের বিনোদন এখন বিরাট কোহালি-ই। টেস্ট, ওয়ান ডে-তে ওর দাপট এতদিন দেখতাম। এ বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এগারো মাস আগে থেকে যেন বিরাট-ইঞ্জিন ছুটতে শুরু করেছে। ওর খেলা দেখে মনে হচ্ছে, পিং পং বলে ক্রিকেট নয়, টেবল টেনিস খেলছে। ১৯তম ওভারে বল করতে এসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক কায়রন পোলার্ড। সেই ওভারে দুই অধিনায়কের দ্বৈরথে ২৭ রান উঠল। শেষ হাসি বিরাটের মুখেই।
বিরাট এ রকম দুরন্ত ছন্দে খেলছে বলে ভাববেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজ খারাপ বল করেছে। ওরা কিন্তু পরিকল্পনা ঠিকই করেছিল। বিশেষ করে উইলিয়ামসকে তো আমার দারুণ বুদ্ধিমান লাগছিল। ও স্লোয়ার দিচ্ছিল। ক্রস সিমে বল ধরে গতির হেরফের ঘটিয়ে বিব্রত করছিল ভারতীয়দের। কিন্তু ব্যাটসম্যানের নাম যে বিরাট কোহালি। তাই বেচারা উইলিয়ামসকে সাধারণ মনে হচ্ছিল। ও একটা বলও বিরাটের পায়ের সামনে করেনি। কিন্তু বিরাটকে দেখলাম ওকে খেলার সময়ে ডান পা অফ স্টাম্পের বাইরে নিয়ে গিয়ে শরীরের সামনে থেকে বলটাকে খেলছে। ফলে অনসাইডে ফ্লিক বা মিড উইকেটের উপর দিয়ে বলগুলো বাইরে ফেলতে অসুবিধা হচ্ছিল না বিরাটের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy