দাবিদার: ব্যাটিং কোচের ত্রিমুখী লড়াইয়ে রয়েছেন রাঠৌর। ফাইল চিত্র
বিরাট কোহালিদের হেড কোচ নির্বাচন ঠিক যতটা প্রত্যাশিত রাস্তা ধরে এগিয়েছে, ততটাই তর্ক-বিতর্ক এসে পড়তে পারে ব্যাটিং কোচ বাছাই নিয়ে। আনন্দবাজারের খেলার পাতায় আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, সঞ্জয় বাঙ্গারকে সরিয়ে বিক্রম রাঠৌর হতে পারেন কোহালিদের নতুন ব্যাটিং কোচ। ১৯ অগস্ট থেকে ২২ অগস্টের মধ্যে রবি শাস্ত্রীর সহকারী কোচেদের ইন্টারভিউ সেরে ফেলা হবে। সেখানে সব চেয়ে বেশি চর্চা হতে চলেছে ব্যাটিং কোচ নিয়ে এবং যত সময় যাচ্ছে, বাঙ্গার বনাম রাঠৌর লড়াই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
এমনিতে হেড কোচ হিসেবে শাস্ত্রীকে বেছে নেওয়ার দিনে সহকারী বাছাই কারা করবে, তা নিয়ে নতুন এক জট তৈরি হয়েছিল। কপিল দেব, অংশুমান গায়কোয়াড় এবং শান্তা রঙ্গস্বামীর তিন সদস্যের নতুন ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটি হেড কোচ নিয়োগের দায়িত্বে ছিল। কপিলেরা প্রশ্ন তোলেন, সহকারী বাছাইয়ের প্রথাও কেন তাঁদের মাধ্যমে হবে না? ওদিকে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স নতুন গঠনতন্ত্র বানিয়ে ফেলেছে লোঢা সংস্কার মেনে। সেই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচক কমিটির সহকারী কোচ বাছার কথা। এটাও এক বিস্ময়কর পরিবর্তন। জাতীয় নির্বাচকেরা বরাবর ক্রিকেটারদের নির্বাচনই করে এসেছেন। সহকারী কোচ তাঁরা বেছে দিচ্ছেন, কখনও এমন আশ্চর্য নিয়ম শোনা যায়নি। কপিলদের আবেদনের পরে সিওএ নতুন করে ভেবে দেখছিল, অ্যাডভাইসরি কমিটি এবং নির্বাচকদের মিলিয়ে যৌথ দায়িত্ব দিয়ে সহকারী কোচের নির্বাচন প্রথা সেরে ফেলা যায় কি না। কিন্তু তাতে আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে জানা গিয়েছে। শনিবার রাত পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, এম এস কে প্রসাদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটিই শাস্ত্রীর সহকারীদের বেছে নেবে। এই সহকারীদের মধ্যে ব্যাটিং কোচ, বোলিং কোচ, ফিল্ডিং কোচ ছাড়াও থাকছেন ফিজিয়ো এবং ট্রেনার। কোহালিদের আগের ফিজিয়ো প্যাট্রিক ফারহার্ট এবং ট্রেনার শঙ্কর বাসু দু’জনেই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। তাই নতুন ফিজিয়ো এবং ট্রেনারও নিয়োগ করতে হবে। যদিও বোর্ড সূত্রে খবর, ফিজিয়ো এবং ট্রেনারের নিয়োগের ক্ষেত্রে দুই বিভাগের বিশেষজ্ঞদেরও ডাকা হতে পারে।
কারও কারও মনে হচ্ছিল, সব চেয়ে বেশি লড়াই হয়তো দেখা যাবে ফিল্ডিং কোচ নিয়োগের ক্ষেত্রে। যে-হেতু জন্টি রোডসের মতো তারকা আবেদন করেছেন। প্রভাবশালী মহলে কারও কারও সমর্থন রয়েছে জন্টির দিকে, তবে শনিবার রাত পর্যন্ত জন্টি সমর্থকেরা সংখ্যালঘু। গত কয়েক বছরে ফিল্ডিংয়ে অসামান্য উন্নতির কারণে বর্তমান ফিল্ডিং কোচ শ্রীধরকে নক-আউট করা জন্টির মতো বড় নামের পক্ষেও খুব সহজ হবে না। তার উপর কোচিং টিমকে দেশি রূপে সাজানোর কথাই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, হেড কোচ নিয়োগের পরে সহকারী নির্বাচন নিয়ে শাস্ত্রীর সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা বলেছে ভারতীয় বোর্ড। তিনি ভারতীয় কোচ নিয়ে কাজ করতেই বেশি আগ্রহী, এমন বার্তাই দিয়েছেন বলে খবর। হেড কোচকে যে-হেতু আগামী ছাব্বিশ মাস সহকারীদের নিয়ে ঘর করতে হবে, তাঁর বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। এবং, ঘটনা হচ্ছে ২০১৪-তে ডিরেক্টর হিসেবে ভারতীয় দলে যোগ দেওয়া ইস্তক বরাবর দেশি সহকারীদের নিয়েই কাজ করতে চেয়েছেন শাস্ত্রী।
জটিলতা: বিপন্ন ব্যাটিং কোচ বাঙ্গারের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে শাস্ত্রী এবং কোহালির মতামতের উপরে। ফাইল চিত্র
বোলিং কোচ অরুণ এবং ফিল্ডিং কোচ শ্রীধর তাঁদের পদ ধরে রাখার লড়াইয়ে ফেভারিট। এই দুই বিভাগেই ভারত এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা। যেটা অতটা জোরের সঙ্গে বলা যাচ্ছে না বাঙ্গারের ক্ষেত্রে। শোনা যাচ্ছে, বর্তমান ব্যাটিং কোচের ক্রিকেটীয় প্রজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি কয়েকটি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলি ঠিক কী ধরনের, তা নিশ্চিত ভাবে জানা না গেলেও কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যাটিং অর্ডার জাতীয় বিষয় নিয়ে মতভেদ তৈরি হয়ে থাকতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। বাঙ্গার সম্ভবত নিজেও বুঝতে পেরেছেন, তাঁর জায়গা টলমল। সেই কারণে প্রভাবশালী মহলে বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করছেন, গত কয়েক বছরে ব্যাটিং গ্রুপকে নিয়ে তাঁর কাজের ফিরিস্তি দিয়ে।
বাঙ্গারকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলতে চলেছেন বিক্রম রাঠৌর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দারুণ কিছু না করলেও জাতীয় অ্যাকাডেমির কোচিং সিস্টেম থেকে উঠে এসেছেন। নির্বাচক কমিটির সদস্যদের মধ্যে তাঁর সমর্থকের অভাব নেই। এবং, অবশ্যই ভারতীয় বোর্ড তথা বিজেপিতে প্রভাবশালী এক ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ তিনি। রাঠৌরকে নিয়ে আগেও বিতর্ক হয়েছে এবং ব্যাটিং কোচের পদে নিযুক্ত হলে আর এক দফা বিতর্কের তুফান উঠলে অবাক হওয়ার নেই। ব্যাটিং কোচের পদে ডার্ক হর্স প্রবীণ আমরে। তিনি রাঠৌরের চেয়ে দৌড়ে পিছিয়ে থাকলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে যথেষ্ট সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন।
আবার প্রভাবশালী মহলে কারও কারও পর্যবেক্ষণ, বাঙ্গার এই মুহূর্তে কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও একেবারে সমর্থনহীন নয়। শোনা যায়, বিরাট কোহালির তাঁর প্রতি আস্থা রয়েছে। স্বয়ং অধিনায়ক নাকি মনে করেন, ভারতীয় ব্যাটিং ঠিক পথেই এগিয়েছে এবং ব্যাটিং কোচ হিসেবে বাঙ্গার মোটেও খুব একটা ব্যর্থ নন।
শাস্ত্রীকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন করায় প্রকাশ্যেই তাঁর পছন্দের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন কোহালি। ব্যাটিং কোচ নিয়োগের ক্ষেত্রে কি অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলতে পারেন নির্বাচকেরা? কোহালি কি বাঙ্গারের প্রতি আস্থার কথা ব্যক্ত করবেন? তাঁর মতামতকেই কি প্রাধান্য দেবেন নির্বাচকেরা?
এই তিনটি প্রশ্নের সমাধানের উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে ব্যাটিং কোচ নিয়ে ত্রিমুখী লড়াইয়ের ভবিষ্যৎ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy