মগ্ন: লকডাউনের সময় বাড়িতে এক পায়ে মহড়া রুটের। নিজস্ব চিত্র
ক্রিকেট বিশ্ব অবাক হয়ে গিয়েছে তাঁর সুইপ শটের জৌলুসে। তাঁর রান করার ধারাবাহিকতায়। উপমহাদেশের ঘূর্ণি পিচ এবং বিশ্বসেরা স্পিনাররাও থামাতে পারেনি জো রুটকে। কিন্তু ক্রিকেট বিশ্ব দেখেনি কী ভাবে লকডাউনের মধ্যে, সবার চোখের আড়ালে অস্ত্রে শান দিয়ে উপমহাদেশে পা রেখেছেন ইংল্যান্ডের অধিনায়ক।
ব্যাটিংকে ধারালো করতে লকডাউনের সময় এক পায়ে ক্রমাগত অনুশীলন করেছেন রুট। কখনও বাঁ-পা, কখনও ডান-পা শূন্যে তুলে ব্যাট করেছেন। যে কথা শুক্রবার আনন্দবাজারকে জানালেন রুট ক্রিকেট অ্যাকাডেমির এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর বেন স্টিভন।
কেন ওই অভিনব পদ্ধতিতে অনুশীলন করেছিলেন রুট? ইংল্যান্ড থেকে জ়ুম কলে বেন বলছিলেন, ‘‘এটা এক রকমের ক্লান্তিজনিত ট্রেনিং। অর্থাৎ, শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়বে, কিন্তু তাও অনুশীলন চলবে নিজেকে নিখুঁত করার জন্য।’’ এক পা শূন্যে তুলে দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন রুট। লক্ষ্য ছিল, এক পায়েও শরীরের ভারসাম্যটা পুরো ঠিক রাখা। ওই অবস্থায় সুইপ-সহ নানা ধরনের শট খেলে গিয়েছেন তিনি। বল মেরেছেন নিখুঁত লক্ষ্যে। অ্যাকাডেমির কোচিং সদস্যদের রুট বলেছিলেন, ‘‘আমি যদি এক পায়ে ভাল শট খেলতে পারি, তা হলে দু’পায়ে নিশ্চয়ই আরও ভাল মারতে পারব।’’ বেনের কথায়, ‘‘এক পায়ে অনুশীলন করতে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হত রুটের। যে পা মাটিতে থাকত, তাতে ভীষণ চাপ পড়ত। কিন্তু নিয়মিত এই অনুশীলন করে গিয়েছে।’’ তাতে পায়ের পেশি-শক্তি যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে শট খেলার জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক ভারসাম্য। কখনও বাড়িতে, কখনও অ্যাকাডেমিতে চলেছে রুটের এই অভিনব মহড়া।
নিজের অ্যাকাডেমিতে রুট তাঁর সুইপের প্রস্তুতিতে একটা বিশেষ মেশিন ব্যবহার করেন। যাকে বলা হয় ‘বল ফিডার।’ লকডাউনে এক পায়ে অনুশীলনের সময় এই ‘ফিডার’ মেশিন কাজে লাগান। বোলিং মেশিনের চেয়ে এটি আলাদা। বোলিং মেশিনে যেমন বাইশ গজ দূর থেকে দ্রুত গতিতে বল ছুটে আসে, এটা তেমন নয়। প্র্যাক্টিস পিচের মাঝামাঝি বসানো থাকে এই ফিডার মেশিন। স্পিনাররা ফ্লাইট করলে বল যে ভাবে ‘ডিপ’ করে নামে, সে ভাবেই বলটা আসে রুটের কাছে। আর তার পরে তিনি সুইপ এবং রিভার্স সুইপ টানা খেলে যান। একটা স্পটে পড়া বলে বিভিন্ন ধরনের সুইপ খেলেন রুট। আর অনুশীলনটা চলে বিশেষ করে টেনিস বলে। বেন বলছিলেন, ‘‘যে কারণে বলের বাউন্সটা বেশি থাকে। আর সেটা সামলানোর অনুশীলনও হয়ে যায়। অনুশীলনে টেনিস বলের বাউন্স সামলে দিলে মাঠে নেমে সমস্যায় পড়তে হয় না।’’
যাঁরা নিয়মিত রুটের অনুশীলন দেখেন, তাঁরা জানেন, মাঠের চার ভাগের তিন ভাগ জুড়েই তিনি সুইপ খেলতে পারেন। বেন বলছেন, ‘‘এতটাই রুটের নিয়ন্ত্রণ যে, মাঠের বিশাল অংশ জুড়ে ও সুইপটা খেলতে পারে। প্র্যাক্টিসও করে সে ভাবেই। যে ব্যাটসম্যান উইকেটের দু’দিকেই সুইপ মারতে পারে, তাকে থামানো কিন্তু খুবই কঠিন।’’
মনোজ তিওয়ারি একটা বিশেষ ফিল্ডিং-ছক টুইট করেছিলেন। মনোজের মতে, ঘূর্ণি পিচে অফস্পিনের বিরুদ্ধে অফসাইডে দু’জন এবং অনসাইডে সাত জন রেখে ফিল্ডিং সাজালে রুটের সুইপ থামানো যেতে পারে। রুটের কোচিং টিমের অন্যতম সদস্য বেন মনে করছেন, ব্যাপারটা অত সহজ হবে না। এর পিছনে দুটো কারণের কথা বলছেন তিনি।
এক, রুট যখন অনুশীলন করেন, তখন মাঠ জুড়ে মার্কার লাগানো থাকে। প্রথাগত সুইপ মারার ক্ষেত্রে অনসাইডে এমন সাত-আটটা মার্কার রাখেন রুট। এবং, সেই মার্কারের মধ্যে দিয়ে বল গলিয়ে দেন। রিভার্স সুইপের ক্ষেত্রে উল্টোটা। দুই, ছোটবেলায় রুট যখন বাড়িতে অনুশীলন করতেন, তখন নানা জায়গা নির্দিষ্ট করা থাকত। কোথাও গাছ, কোথাও গেট, কোথাও ফুলের টব। এ সব জায়গায় না লাগিয়ে বল মারতে হত তাঁকে। যে কারণে অনেক ফিল্ডারের মধ্যে দিয়েও বল বাউন্ডারিতে পাঠানোটা ভালই রপ্ত করেছেন বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান।
অন্তরালে যে পরিশ্রম তিনি প্রতিনিয়ত করে চলেছেন, সেটাই আজ রুটকে ক্রিকেট দুনিয়ায় শিকড় মেলতে সাহায্য করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy