Advertisement
E-Paper
BB_2025_Lead Zero Banner

টেলর ফ্রিৎজ়ের খেলার দর্শক টেলর সুইফ্‌ট, কিন্তু ইউএস ওপেন অপেক্ষায় দেশীয় চ্যাম্পিয়নের

আমেরিকান হিসাবে ২১ বছর পরে ইউএস ওপেনে পুরুষদের সিঙ্গলস জেতার সুযোগ ছিল টেলর ফ্রিৎজ়ের কাছে। কিন্তু এত কাছে গিয়েও পারলেন না তিনি। ফাইনালে হারতে হল ইয়ানিক সিনারের কাছে।

tennis

ইউএস ওপেনে রানার্স টেলর ফ্রিৎজ় (বাঁ দিকে) ও ইয়ানিক সিনার। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:১৪
Share
Save

গত ১৫ বছরে এত কাছে কেউ পৌঁছতে পারেননি। ইউএস ওপেনের ফাইনালে ইটালির ইয়ানিক সিনারের কাছে স্ট্রেট সেটে (৬-৩, ৬-৪, ৭-৫) হারার পরে এটা ভেবেই এখন নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারেন আমেরিকার টেলর ফ্রিৎজ়। খেলা শেষে ফ্রিৎজ় বলেন, “মনে হচ্ছে অনেককে হতাশ করলাম।” ক্যালিফর্নিয়ার ২৬ বছরের ফ্রিৎজ় পৌঁছে গিয়েছিলেন ট্রফি জেতার এত কাছে। ২১ বছর পরে আবার কোনও আমেরিকানের কাছে সুযোগ ছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলেন না তিনি।

২০০৯ সালে রজার ফেডেরারের বিরুদ্ধে ফাইনালে উঠেছিলেন অ্যান্ডি রডিক। সেই শেষ বার কোনও আমেরিকান ইউএস ওপেনের ফাইনালে উঠেছিলেন। আমেরিকান হিসাবে শেষ বার ইউএস ওপেন জিতেছিলেনও রডিক। ২০০৩ সালে এই আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামেই। তার পর থেকে আর দেশীয় তারকার হাতে ওঠেনি এই গ্র্যান্ড স্ল্যাম।

নিজের উপর বিশ্বাস ছিল ফ্রিৎজ়ের। সেটা করেও দেখিয়েছেন তিনি। ২৬ বছরে বেসলাইন থেকে যে ভাবে ধারাবাহিক ভাবে তিনি খেলেন তা তাঁর দেশের এখনকার যে কোনও খেলোয়াড়ের থেকে ভাল। এ বারের প্রতিযোগিতাতেই তা দেখা গিয়েছে। সেমিফাইনালে নিজের দেশেরই ফান্সিস টিয়াফোকে হারিয়েছেন তিনি। একটা সময়ে অবশ্য পিছিয়ে ছিলেন ফ্রিৎজ়। পায়ে ক্র্যাম্প ধরায় সমস্যায় পড়েন টিয়াফো। তারই সুযোগ নেন ফ্রিৎজ়।

তুলনায় সিনারকে অনেক কঠিন লড়াই করতে হয়েছে। চলতি বছরই অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছেন। ইউএস ওপেনের আগে সিনসিনাটিতেও জিতেছেন। ফলে প্রত্যাশার চাপ ছিল তাঁর উপর। অলিম্পিক্সে খেলার ধকলও ছিল। সে সব সামলে রবিবারের ফাইনালে উঠতে হয়েছিল ২৩ বছরের ইটালির টেনিস তারকাকে। শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ করেছেন তিনি।

তবে রবিবার আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে তিনিই একমাত্র টেলর ছিলেন না। সেখানে ছিলেন আমেরিকার পপ তারকা টেলর সুইফ্‌টও। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ফুটবলার প্রেমিক। এক টেলর কোর্টে খেলছিলেন। এক টেলর গ্যালারিতে ছিলেন। সেই কারণেই হয়তো দর্শকেরাও কিছুটা মজা করেন। তাঁদের বলতে শোনা যায়, “এগিয়ে চলো টেলর”, বা “টেলর তুমিই পারবে।”

টেলর সুইফ্‌টের পাশে দুই ফুটবল তারকা ট্রেভিস কেলসি ও প্যাট্রিক মাহোমেস ছিলেন দর্শকাসনে। তাঁদের সামনে এক মহাকাব্য লেখা হতে পারত। কারণ, এই কোর্টেই তো পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ফাইনাল হয়েছে। কিন্তু রবিবার মাত্র ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিটে ফ্রিৎজ়কে হারিয়ে দিলেন সিনার। ট্রেভিস, প্যাট্রিকেরা হয়তো ভাবলেন, বিরতির আগেই খেলা শেষ হয়ে গেল কী ভাবে? আসলে ফ্রিৎজ়ের থেকে ধার এবং ভারে তিনি যে অনেকটাই এগিয়ে, তা প্রমাণ করে দিলেন সিনার।

এ বারের ইউএস ওপেনে সিনারের লড়াই ছিল তাঁর নিজের সঙ্গেই। সিনার শুধু ইউএস ওপেন জিতলেন না সেই সঙ্গে জবাব দিলেন সমালোচকদেরও। এই গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেলতে নামার বিতর্কে জড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। মার্চে ইন্ডিয়ান ওয়েলস প্রতিযোগিতায় খেলার সময় সিনারের শরীরে ক্লোস্টেবল নামে একটি পদার্থ পাওয়া গিয়েছিল। টেনিস তারকার টেস্টস্টেরনে ওই পদার্থ ছিল। বিশ্ব অ্যান্টি ডোপিং এজেন্সি (ওয়াডা) ক্লোস্টেবল পদার্থটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক টেনিস ইন্টিগ্রিটি এজেন্সি (আইটিআইএ) সিনারের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। তারা জানিয়েছে, ইটালির টেনিস তারকা ইচ্ছাকৃত ভাবে ডোপিং করেননি। তাঁর ফিজিয়োথেরাপিস্ট না জেনে কোনও একটি ওষুধ দিয়েছিলেন, যেটির মধ্যে ক্লোস্টেবল ছিল।

১৫ অগস্ট সিনারের ডোপিং নিয়ে শুনানি ছিল। সেখানে টেনিস খেলোয়াড় বুঝিয়েছেন, তাঁর এক ফিজিয়ো মালিশ করার সময়ে একটি স্প্রে ব্যবহার করেছিলেন। একটি চোট সারানোর জন্য ওই স্প্রে ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই স্প্রের মধ্যে ক্লোস্টেবল ছিল। সেটাই সিনারের শরীরে ঢুকে যায়। সিনারের সেই দাবি মেনে নেয় আইটিআইএ। সেই কারণে তাঁকে কোনও শাস্তি দেওয়া হয়নি। যদিও কোনও কোনও তারকা সিনারের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। সে সবেরই জবাব দিলেন তিনি। প্রথম ইটালীয় হিসাবে জিতলেন ইউএস ওপেন।

এই মুহূর্তে পুরুষদের টেনিসে প্রথম সারিতে রয়েছেন তিন জন তারকা। নোভাক জোকোভিচ ও কার্লোস আলকারাজ়ের পাশাপাশি সেখানে জায়গা করে নিয়েছেন সিনার। তাঁদের পিছনের সারিতে রয়েছেন একঝাঁক খেলোয়াড়। ড্যানিল মেদভেদেভ, আলেকজ়ান্ডার জ়েরেভ, আন্দ্রে রুবলেভ, ক্যাসপার রুড, বেন শেল্টন, টেলর ফ্রিৎজ়, ফ্রান্সিস টিয়াফোরা সেই তালিকায় রয়েছেন। এই তালিকায় থাকা খেলোয়াড়ের মাঝেমধ্যে চমক দেখান। কিন্তু তাঁদের এক প্রজন্মের সেরাদের মধ্যে ধরা হয় না। সেই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন সিনার।

প্রথম টিনএজার হিসাবে সিনার এটিপি ৫০০ পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন ২০২১ সালের সিটি ওপেনে। জোকোভিচের পর সিনারই কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসাবে পাঁচটি এটিপি খেতাব জিতেছেন। পেশাদার টেনিসজীবনের শুরুতেই জোকোভিচের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দেওয়া সিনারের বাবা একটি রেস্তোরাঁর শেফ। মা ওই রেস্তরাঁরই কর্মী। উত্তর ইটালির সান ক্যানডিডোয় জন্ম সিনারের। মাত্র তিন বছর বয়স থেকে টেনিস শিখতে শুরু করা সিনারের পছন্দের খেলার তালিকায় রয়েছে স্কি এবং ফুটবল। আট বছর বয়সেই ইটালির অনূর্ধ্ব ১২ পর্যায়ের টেনিসে চ্যাম্পিয়ন হন সিনার। ১৩ বছর পর্যন্ত টেনিসের পাশাপাশি নিয়মিত ফুটবলও খেলতেন। পরে অবশ্য টেনিসকেই বেছে নিয়েছেন। সেই টেনিস র‌্যাকেট হাতে বিশ্বকে আগামী দিনে সিনার শাসন করবেন বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞই।

১৭ বছর বয়সেই টেনিসকে পেশা হিসাবে বেছে নেন সিনার। জুনিয়র পর্যায়ে অবশ্য কখনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেলেননি। সে সময় ক্রমতালিকাতেও তেমন উল্লেখযোগ্য জায়গায় ছিলেন না। ইউএস ওপেনজয়ী সিনারের সেরা জুনিয়র র‌্যাঙ্কিং ছিল ১৩৩। ১৩ বছর বয়স থেকে টেনিসকে গুরুত্ব দিতে শুরু করার পর থেকে ক্রমশ উন্নতি করেন তিনি। সে সময় তাঁর আট বছর বয়সের সাফল্যকে ব্যতিক্রম হিসাবেই ধরতেন অনেকে।

সিনারের খেলার সঙ্গে অনেকে আবার মিল পান রজার ফেডেরারেরও। ফেডেরারের মতোই অত্যন্ত দ্রুত টেনিস কোর্টের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে যেতে পারেন তিনি। শক্তিশালী ফোরহ্যান্ডের পাশাপাশি ব্যাকহ্যান্ডেও দক্ষ তিনি। ফেডেরার নিজেও সিনারের প্রশংসা করে এক বার বলেছিলেন, ‘‘সিনার আমার মতোই ফোরহ্যান্ড এবং ব্যাকহ্যান্ড মারে।’’

তবে সিনার যতটা ভাল খেলেছেন, ততটাই নিষ্প্রভ ছিল তাঁর পোশাক। তাঁর স্পনসরের উচিত ছিল, উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরাতে। সিনারকে দেখে এক এক সময় মনে হচ্ছিল জুনিয়র স্তরের কোনও টেনিস খেলোয়াড়। অন্তত রাফায়েল নাদাল যে ধরনের উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরতেন, তা-ও পরানো যেত সিনারকে। বিশ্বের এক নম্বরের গায়ে এমন নিষ্প্রভ রঙের পোশাক বেমানান। ফ্রিৎজ় অবশ্য ম্যাচ শেষে সিনারের খেলার প্রশংসা করলেও তাঁর পোশাক নিয়ে একটি কথাও খরচ করেননি।

ফ্রিৎজ়ও স্বীকার করে নিয়েছেন যে, কিছুটা ভাল খেলতে পারলে সিনারকে আরও একটু লড়াই দিতে পারতেন তিনি। খেলা শেষে ফ্রিৎজ় বলেন, “আমি আরও একটু ভাল খেলতে পারতাম। তা হলে হয়তো আমার সুযোগ বাড়়ত। আমি সত্যিই হতাশ।” এক সপ্তাহ পরেও হয়তো ফ্রিৎজ়ের মনে পড়বে যে, তিনি গত ২১ বছরে ইউএস ওপেন জেতার সবচেয়ে কাছে পৌঁছেছিলেন। কিন্তু পারেননি। দীর্ঘ সময় ধরে আমেরিকান চ্যাম্পিয়নের অপেক্ষায় রয়েছে ইউএস ওপেন। সেই প্রতীক্ষা এখনও শেষ হয়নি।

US Open 2024 Jannik Sinner Taylor Fritz Taylor Swift Tennis

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।