Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
union budget 2021

শুধুই কি কোহালিদের পকেট ভরবে? বাজেট দেখে প্রশ্ন মিলখাদের

প্রশ্নগুলো তুলে দিলেন কিংবদন্তি মিলখা সিংহ থেকে শুরু করে অলিম্পিয়ান জয়দীপ কর্মকার।

কেন্দ্রীয় বাজেটে  ব্রাত্য ‘খেলো ইন্ডিয়া’, সরব মিলখা সিংহ

কেন্দ্রীয় বাজেটে ব্রাত্য ‘খেলো ইন্ডিয়া’, সরব মিলখা সিংহ

সব্যসাচী বাগচী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:৫৯
Share: Save:

খেলার মাঠে দলের পারফরম্যান্স যাই হোক, দেশজুড়ে কি শুধু বিরাট কোহালি-রোহিত শর্মাদেরই জয়গান হবে? স্রেফ ক্রিকেটার ও কিছু সংখ্যক নামজাদা ফুটবলারই শুধু আর্থিক লাভের মুখ দেখবেন? অলিম্পিক স্পোর্টস কি বরাবরের মতো ব্রাত্যের তালিকায় থেকে যাবে? প্রশ্নগুলো তুলে দিলেন কিংবদন্তি মিলখা সিংহ থেকে শুরু করে অলিম্পিয়ান জয়দীপ কর্মকার। তাঁদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায়, স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, রামানুজ মুখোপাধ্যায়ের মতো কর্তারা যাঁরা অনেক বছর ধরে এই ধরনের খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত।

সোমবার বাজেট পেশ করা হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও ক্রীড়া ক্ষেত্রে বাজেট কমাল কেন্দ্রীয় সরকার। ২০২০-২১ আর্থিক বছরে ক্রীড়া ক্ষেত্রে বরাদ্দ হল ২৫৯৬.১৪ কোটি টাকা। গত আর্থিক বছর থেকে প্রায় ২৩০.৭৮ কোটি বরাদ্দ টাকা কমালেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। গত আর্থিক বছরের থেকে ৮ শতাংশ কম। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের প্রকল্প ‘খেলো ইন্ডিয়া’তেও ব্যাপক কাটছাঁট হয়েছে। এ বারের বাজেটে মোট ৬৬০.৪১ কোটি টাকা ‘খেলো ইন্ডিয়া’র জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। যদিও গত বছর এই ‘খেলো ইন্ডিয়া’-র জন্য বরাদ্দ ছিল ৮৯০.৪২কোটি টাকা। ফলে এ বার প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্পে প্রায় ২৩০.০১ কোটি টাকা কমানো হল। স্বভাবতই অলিম্পিক্স বছরে এই বৈষম্য মেনে নিতে পারছে না ক্রীড়া সমাজ। আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে ওঁরা নিজেদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরলেন।

প্রাক্তন অলিম্পিয়ান মিলখা সিংহ বললেন, তিনি ক্রিকেট-বিরোধী নন। কিন্তু তাঁর দাবি, বাকি খেলাগুলোকেও সরকার সমান গুরুত্ব দিক। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আগামী নভেম্বরে ৮৬ বছরে পা দেব। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে অনেক বাজেট দেখেছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও কেন্দ্রীয় সরকার অলিম্পিক্স স্পোর্টস নিয়ে ভাবল না। সেটা প্রতিবার ক্রীড়া বাজেট দেখলেই বোঝা যায়।’’ এরপরেই তিনি বলেন, ‘‘আমি ক্রিকেটের বিরোধী নই। কিন্তু দেশের বাকি খেলাধুলাকেও তো গুরুত্ব দিতে হবে। আর এবার এবার তো অজুহাত দেওয়ার জন্য করোনা ভাইরাস আছেই। সবচেয়ে অবাক লাগলো, ‘খেলো ইন্ডিয়া’র উপরেও কোপ পড়ল। আরে এটা তো খোদ প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। বিরোধী দল ছাড়ুন, দেশের শিক্ষিত সমাজও তো এই ক্রীড়া বাজেট দেখে হাসাহাসি করবে!

আরেক প্রাক্তন অলিম্পিয়ান জয়দীপ কর্মকারের মতে, ‘‘খেলো ইন্ডিয়া প্রকল্প এখনও পর্যন্ত ভারতের সেরা ক্রীড়া প্রকল্প। এটা খুবই দূরদর্শী চিন্তাভাবনার ফসল। এর আগে অলিম্পিক্স শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগে প্রতিযোগীদের নিয়ে ভাবত সরকার। তবে এই প্রকল্প কিন্তু একবারে তৃণমূল স্তর থেকে কাজ করছে। ফলে এই প্রকল্পের আওতায় প্রচুর ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা আছে। তাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো ভবিষ্যতে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে। তাই প্রকল্পের অর্থ কাটছাঁট হওয়ায় ভবিষ্যতে তাদের ওপর খারাপ প্রভাব পড়তেই পারে। স্বভাবতই ‘খেলো ইন্ডিয়া’তে আর্থিক কাটছাঁট হওয়ার জন্য আমি বেশ অবাক।’’ এখনকার থেকেও ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি চিন্তিত জয়দীপ। বলেন, ‘‘বাজেটে আর্থিক বরাদ্দ কমানোয় তার প্রতিফলন এ বার দেখা না গেলেও আগামী দুই বছরে কিন্তু এর প্রতিফলন অবশ্যই দেখা যাবে। কারণ এই প্রকল্পের উপর নির্ভর করে অনেক ছেলে-মেয়ে স্বপ্ন দেখছে। পরবর্তী দুই বছরেও যদি ‘খেলো ইন্ডিয়া’তে অর্থ কাটছাঁট হয়, তাহলে আগামী প্রজন্মের উপর খুব খারাপ প্রভাব পড়বে। আমিও ক্রিকেট পছন্দ করি। ভারতীয় দল জিতলে বেশ আনন্দ পাই। তবে এটাও সত্য যে ক্রিকেট কিন্তু মাত্র ১০টা দেশ খেলে। আর অলিম্পিক্স স্পোর্টসে কিন্তু ২০০টা দেশের প্রতিযোগীদের সঙ্গে পাল্লা দিতে হয়। আর সেই লড়াই করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সাহায্য খুবই জরুরি।’’

বেঙ্গল টেনিস সংস্থার সভাপতি হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায়ও একমত। বলেন, ‘‘অলিম্পিক্স বর্ষে ক্রীড়া বাজেট কমিয়ে দেওয়া মোটেও ভাল বিজ্ঞাপন নয়। এই প্রতিযোগিতা খেলতে যাওয়ার জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়, সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় সেগুলোও এবার কমিয়ে দেওয়া হল। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে খেলাধুলা যে প্রাধান্য পাচ্ছে না, সেটা স্পষ্ট। ক্রীড়া বাজেট থেকে প্রায় ২৩০.৭৮ কোটি টাকা কমে যাওয়া কিন্তু সোজা কথা নয়। তাই বাজেটের পর দেশের খেলাধুলা আরও পিছিয়ে গেল।’’

সর্ব ভারতীয় সাঁতার সংস্থার সহ-সভাপতি রামানুজ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর ‘খেলো ইন্ডিয়া’ প্রকল্প ও তার উপযোগিতা নিয়েই তো একাধিক প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। এই প্রকল্প এখর নও পরীক্ষার স্তরে রয়েছে। ছেলে-মেয়েদের বাছাই নিয়েই তো নিজেদের মধ্যে বিবাদ লেগেছে। তাই এই প্রকল্পের অর্থ কাটছাঁট হওয়ার জন্য মোটেও অবাক হইনি। তবে ‘খেলো ইন্ডিয়া’র মধ্যে কোন কোন খাতে টাকা কমানো হল, সেটাও দেখতে হবে। তাই সব মিলিয়ে এই বাজেট মোটেও খেলাধুলাকে এগিয়ে নিয়ে গেল না।’’

বেঙ্গল অলিম্পিক্স সংস্থার প্রধান স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়বললেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতির জন্য নিশ্চিতভাবে একটা ঘাটতির সময় গিয়েছে। যদিও জিনিসপত্রের দাম কিন্তু কমেনি। গত কয়েক মাসে গোটা দুনিয়ায় খেলাধুলা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের সেই দিকগুলো দেখে ক্রীড়া বাজেট পেশ করা উচিত ছিল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Joydeep Karmakar Budget Khelo India Milkha Singh Niramala Sitharaman PM Narendra Modi union budget 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy