Advertisement
E-Paper

চায়নাম্যান জিয়াসকে খেলে বিশ্বকাপে চমক ক্যারির

বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিদায়ের পরে দেশে ফিরে এসেছেন চায়নাম্যান জিয়াস এবং লেগস্পিনার সাহু। তবে এই ফেরা সাময়িক। এখন প্রায়ই এই দুই স্পিনারকে দেখা যাবে অস্ট্রেলিয়ার কোচিং স্টাফের অঙ্গ হিসেবে।

তৃপ্ত: অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক ফিঞ্চের সঙ্গে চায়নাম্যান জিয়াস। নিজস্ব চিত্র

তৃপ্ত: অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক ফিঞ্চের সঙ্গে চায়নাম্যান জিয়াস। নিজস্ব চিত্র

কৌশিক দাশ

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯ ০৪:৪৬
Share
Save

ইদানীং অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের স্পিনের বিরুদ্ধে দাপট দেখানোর পিছনে অনেকটাই রয়েছেন তাঁরা। অ্যালেক্স ক্যারির অনবদ্য ব্যাটিং সাফল্যের পিছনেও তাঁদের অবদান কম নয়। তাঁরা হলেন ভারতের দুই রিস্ট স্পিনার— কে কে জিয়াস এবং প্রদীপ সাহু। যাঁরা প্রায় দেড় মাস ধরে সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডে কাটিয়ে এলেন অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অঙ্গ হয়ে।

বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিদায়ের পরে দেশে ফিরে এসেছেন চায়নাম্যান জিয়াস এবং লেগস্পিনার সাহু। তবে এই ফেরা সাময়িক। এখন প্রায়ই এই দুই স্পিনারকে দেখা যাবে অস্ট্রেলিয়ার কোচিং স্টাফের অঙ্গ হিসেবে। অস্ট্রেলিয়ার কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার তো এ-ও ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন, অ্যাশেজেও কোনও একটা সময় ডেকে নেওয়া হতে পারে এই দুই ভারতীয় স্পিনারকে। বুধবার কোচি থেকে ফোনে জিয়াস বলছিলেন, ‘‘ল্যাঙ্গার তো আমাকে বলেই দিয়েছেন, তুমি এখন অস্ট্রেলিয়া দলের দ্বাদশ ব্যক্তি হয়ে গিয়েছো। তৈরি থেকো, যে কোনও সময় তোমাকে আবার ডেকে নেবো।’’

এই দুই ভারতীয় স্পিনারকে ডেভিড ওয়ার্নারদের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনাটা অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার ভারতীয় বোলিং পরামর্শদাতা শ্রীধরন শ্রীরামের। দু’বছর আগে প্রথমে শুধু জিয়াসকে তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্র্যাক্টিসে নিয়ে আসেন। অনেক পরে আসেন সাহু। তার পরে ভারতের মধ্যে তো বটেই, দুবাইয়ে পাকিস্তান সিরিজের সময় তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়। এই স্পিনার জুটির বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নিয়ে সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে দেখে ল্যাঙ্গার এবং অস্ট্রেলীয় বোর্ড জিয়াসদের উড়িয়ে নিয়ে যায় ইংল্যান্ডেও। বিশ্বকাপের মঞ্চে।

জিয়াস মনে করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে খেলে যে ব্যাটসম্যান সব চেয়ে বেশি উন্নতি করেছেন, তাঁর নাম অ্যালেক্স ক্যারি। ‘‘ক্যারিকে আমি প্রথমে দুবাইয়ে দেখেছিলাম। প্রথম দিকে কিন্তু ও এত ভাল ব্যাটসম্যান ছিল না। স্পিনারদের বিরুদ্ধে সে রকম স্বচ্ছন্দ ছিল না,’’ বলছিলেন জিয়াস। তা হলে কী ভাবে এল এই পরিবর্তন? কী ভাবে দুরন্ত ব্যাটিংয়ের সুবাদে ক্যারি জায়গা করে নিলেন আইসিসি-র বিশ্ব একাদশেও? জিয়াসের মন্তব্য, ‘‘প্রচণ্ড পরিশ্রম করে। ল্যাঙ্গার, পন্টিং ওকে নিয়ে বিশেষ করে পড়ে থাকত। আমিও প্রচুর বল করেছি ওকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্র্যাক্টিস করে যেত। আমার বিরুদ্ধে নানা রকম শট খেলতে বলা হয়েছিল ক্যারিকে। ভারতের বিরুদ্ধে দেখলেন তো কত সহজে যুজবেন্দ্র চহাল আর কুলদীপ যাদবকে খেলে দিল।’’ ভারতের বিরুদ্ধে ওই ম্যাচে ৩৫ বলে অপরাজিত ৫৫ করেন ক্যারি। অনায়সে সামলে দেন ‘কুল-চা’ জুটিকে। কুলদীপ ওই ম্যাচে ন’ওভারে ৫৫ রান দেন। চহাল দিয়েছিলেন ১০ ওভারে ৬২।

বিশ্বকাপের সময় কী ভাবে স্পিনের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া? কেনই বা ইংল্যান্ডের মাটিতে এই রকম প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ল? জানা যাচ্ছে, শ্রীরাম এবং অস্ট্রেলিয়া থিঙ্ক ট্যাঙ্ক মনে করেছিল, ইংল্যান্ডের মাটিতে এ বার বল ভাল স্পিন করবে। যে কারণে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় জিয়াসদের।

অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে কী ভাবে নেটে বল করতে হবে তাও জিয়াসদের বলে দিয়েছিলেন শ্রীরাম। জোর দেওয়া হয়েছিল বৈচিত্রে। প্রত্যেক ওভারে চায়নাম্যান, গুগলি এবং স্লাইডার করতে বলা হয়েছিল জিয়াসকে। যাতে ব্যাটসম্যানরা খেলে খেলে রপ্ত করতে পারেন স্পিন-বৈচিত্র। আরও একটা জিনিস করেছিলেন শ্রীরাম। অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের বারবার বলে দিয়েছিলেন, বল ছাড়ার সময় জিয়াসদের কব্জিটা দেখতে। কেরলের এই চায়নাম্যান বোলার বলছিলেন, ‘‘আগে দেখতাম, অস্ট্রেলিয়ার অনেক ব্যাটসম্যান বলটা পড়ার পরে স্ট্রোক খেলার চেষ্টা করছে। এখন ব্যাপারটা অনেক বদল হয়েছে। ব্যাটসম্যানদের বলে দেওয়া হচ্ছে, আমাদের কব্জিটা দেখে বুঝতে বলটা কী হবে।’’

নেটে ক্যারি যেমন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাট করেছেন, তেমনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বল করেছেন জিয়াসও। ক্যারির মধ্যে কী বিশেষত্ব নজরে পড়ল? জিয়াস বলছিলেন, ‘‘ক্যারির ফুটওয়ার্ক খুব ভাল। সে রকম ক্রিকেট মস্তিষ্কও। আমার বল প্রথম দিকে বুঝতে পারছিল না। কিন্তু আস্তে আস্তে সে সমস্যা কাটিয়ে ওঠে। গ্রিপ আর কব্জি দেখে বুঝে যাচ্ছিল, কী রকম বল আসবে। দেখলেন না, ভারতীয় স্পিনারদের কী সহজে খেলছিল। স্টেপ আউট করে ছয়ও মেরেছিল।’’

দ্বিপাক্ষিক সিরিজের পরে বিশ্বকাপ। তা হলে তো বলা যায়, আপনারা এখন অস্ট্রেলিয়া দলের একটা অংশ হয়ে উঠেছেন? ‘‘অবশ্যই,’’ বলে উঠলেন জিয়াস, ‘‘ল্যাঙ্গার, পন্টিং, ব্র্যাড হ্যাডিন— সবাই আমাদের প্রশংসা করেছেন। অত সব সুপারস্টার, কিন্তু আমরা খুব সহজে ওদের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলাম। আমাদের বক্তব্যও ওঁরা শুনতেন। হ্যাডিন তো আমাকে আলাদা করে অনেক পরামর্শও দিয়েছেন।’’

জিয়াস আরও একটা কথা বলছেন, যা হয়তো বিপক্ষ দলের স্পিনারদের একেবারেই ভাল লাগবে না। ‘‘অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা আগে আমাকে খেলতে খুব সমস্যায় পড়ত। এখন কিন্তু সহজেই খেলে দিচ্ছে। আমি কী বল করতে চাই, গ্রিপ আর কব্জির মোচড় দেখে বুঝে ফেলছে।’’ শুধু প্র্যাক্টিসেই নয়, ইদানিং ম্যাচেও স্পিনের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের সাফল্য প্রমাণ করে দিচ্ছে, তাঁরা নিজেদের কতটা বদলে ফেলছেন।

বছর কয়েক আগে ভারতের ‘কুল-চা’ জুটি সমস্যায় ফেলে দিয়েছিল ল্যাঙ্গারের দলকে। এখন দেখা যাচ্ছে আর এক ভারতীয় স্পিন জুটি সেই সমস্যার সমাধান বার করে ফেলেছে ফিঞ্চ-ওয়ার্নারদের জন্য!

Cricket Australia Alex Carrey Chinaman Bowler

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}