ব্রোঞ্জ কেড়ে নেওয়া হল বিনোদ কুমারের। ছবি: টুইটার থেকে
৩২ বছরের বিনোদ কুমার হরিয়ানার রোহতকে একটা মুদির দোকান চালাতেন। রাজীব গাঁধী স্পোর্টস কমপ্লেক্সের সামনে তাঁর দোকান। রোজ দেখতেন অ্যাথলিটরা অনুশীলন করতে স্টেডিয়ামে ঢুকছেন। দেখতেন আর কষ্ট পেতেন। মনের মধ্যে তাঁরও যে খেলোয়াড় হওয়ার ইচ্ছা ছিল! কিন্তু তত দিনে শিরদাঁড়ার চোটে প্রায় অচল বিনোদ।
এমন যদিও হওয়ার কথা ছিল না ভারতের এই সেনাকর্মীর সঙ্গে। কিন্তু একটা দুর্ঘটনা বদলে দেয় বিনোদের জীবন। সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে (বিএসএফ) যোগ দেওয়ার সাত মাসের মধ্যে ঘটে যায় অঘটন। ২০০২ সালে লেহতে পাহাড় থেকে পড়ে যান বিনোদ। বড় চোট পান শিরদাঁড়ায়। প্রায় ১২ বছর বিছানায় শুয়ে থাকতে হয় তাঁকে। সঙ্গী হয় হুইলচেয়ার।
সংসার চালাতে বাড়ির কাছে মুদির দোকান খোলেন বিনোদ। তাঁর দোকানে আসতেন তিরন্দাজির কোচ সঞ্জয় সুহাগ। তিনিই বলেছিলেন প্যারা স্পোর্টসে যোগ দেওয়ার কথা। যেমন কথা তেমন কাজ। ডিসকাস থ্রো-কে বেছে নিলেন বিনোদ। তবে খরচের কথা ভেবে কিছুটা দোটানায় ছিলেন তিনি।
Tokyo Paralympics Technical Delegates decide Vinod Kumar is not eligible for Discus F52 class, his result in the competition is void and he loses the bronze medal pic.twitter.com/m5zzaaINZX
— ANI (@ANI) August 30, 2021
সেই দোটানা দূর করে দেন বর্তমানে প্যারালিম্পিক কমিটির প্রধান দীপা মালিক। ২০১৬ সালে প্রথম মহিলা হিসাবে প্যারালিম্পিক্সে দেশকে পদক এনে দিয়েছিলেন দীপা। তাঁর সাফল্য অনুপ্রেরণা দেয় বিনোদকে। টোকিয়ো পৌঁছে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “দীপার রুপো জয় আমাকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল। মনে হয়েছিল আমিও পারব।” অ্যাথলেটিক্স কোচ অমরজিত সিংহের সঙ্গে বিনোদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সঞ্জয়।
বিনোদ বলেন, “অনুশীলন শুরু করলাম। পরের বছর সাফল্য পেলাম জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে। ব্রোঞ্জ জিতেছিলাম। ২০১৮ সালে ফের ব্রোঞ্জ জিতি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে। কোচ সত্যনারায়ণ ২০১৯ সালে প্যারিস নিয়ে গেলেন। সেখানে আন্তর্জাতিক প্যারালিম্পিক্স কমিটি আমাকে বেছে নেয় এফ ৫২ বিভাগে।”
কিন্তু প্যারালিম্পিক্সে যোগ দেওয়াই কঠিন হয়ে গিয়েছিল বিনোদের জন্য। ২০১৯ সালে বিশ্ব প্যারা অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন তিনি। এই প্রতিযোগিতার ফলাফলের ভিত্তিতেই প্যারালিম্পিক্সে যোগ্যতা পাওয়ার কথা। দুবাই যাওয়ার জন্য যে কাগজপত্র দরকার ছিল তা নিয়ে গণ্ডগোল দেখা যায়। ফলে দেরি হয় দুবাইয়ের বিমান ধরতে। ইভেন্ট শুরু হওয়ার ঘণ্টা খানেক আগে দুবাই পৌঁছন বিনোদ। চতুর্থ স্থান অর্জন করেন সেই প্রতিযোগিতায়। প্যারালিম্পিক্সের দরজা খুলে যায় তাঁর জন্য।
২০১২ সালে বিয়ে করেন বিনোদ। স্ত্রী অনিতা এবং তাঁর দু’টি কন্যাও রয়েছে। সংসার চালানো, খেলার খরচ সবই বাড়তে থাকে। কিন্তু আয় ছিল সীমিত। প্যারিস যাওয়ার আগে বোনের থেকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন বিনোদ। যা এখনও শোধ করতে পারেননি। বিনোদ বলেন, “ধারে ডুবে আছি। প্রচুর ত্যাগ করেছি এখানে পৌঁছনোর জন্য। প্যারালিম্পিক্সে পদক জিততে পারলে তবেই সব কিছু শোধ করতে পারব।” সেই পদক তিনি জিতেছিলেন, কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।
সাইয়ের পক্ষ থেকে ২০২০ সালে বেঙ্গালুরুতে অনুশীলনের অনুমতি দেওয়া হয় বিনোদকে। ১৮ অগস্ট টোকিয়োর বিমান ধরার আগে অবধি সেখানেই ছিলেন তিনি। দু’বার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়। বিনোদ যখন প্যারালিম্পিক্সে যোগ দেওয়ার স্বপ্নে বিভোর, তাঁর স্ত্রী তখন দোকান আর সংসার সামলাচ্ছেন। সেই সব লড়াইয়ের দাম দিতে টোকিয়ো যান বিনোদ।
বিনোদের লক্ষ্য ছিল টোকিয়ো প্যারালিম্পিক্সে নিজের সেরাটা দেওয়া। সেটাই করেছিলেন রবিবার। ১৯.৯১ মিটার দূরে ডিসকাস ছুড়ে ব্রোঞ্জ এনে দিয়েছিলেন দেশকে। কিন্তু সোমবার প্যারালিম্পিক্স কমিটির তরফে জানানো হল, ডিসকাসের এফ ৫২ বিভাগে যোগ দেওয়ার যোগ্যতাই নেই বিনোদের। পদক কেড়ে নেওয়া হল তাঁর। টোকিয়োতে পদক জিতে লড়াইয়ের দাম দিতে চাওয়া বিনোদ ফের অনিশ্চয়তার অন্ধকারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy