Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Tokyo Olympics

Tokyo Olympics: উদ্বোধনে নাৎসি বিতর্ক, বিক্ষোভ ঠিক চালিয়ে যাব

আশঙ্কার কারণ সেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি। বৃহস্পতিবারেও জাপানে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন দু’হাজারেরও বেশি।

প্রতীক্ষা: অলিম্পিক্সের উদ্বোধনের আগের দিন টোকিয়োর সূর্যাস্ত। ছবি রয়টার্স।

প্রতীক্ষা: অলিম্পিক্সের উদ্বোধনের আগের দিন টোকিয়োর সূর্যাস্ত। ছবি রয়টার্স।

সাতোকো ইতানি
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২১ ০৭:১৪
Share: Save:

আবেগ ও আশঙ্কা এই দু’য়ের মাঝেই আজ শুক্রবার থেকে আমার শহর টোকিয়োয় শুরু হচ্ছে অলিম্পিক্স।

আবেগের কথা উঠছে ঠিক এই কারণেই যে জাপানের মাটিতে এই ব্রহ্মাণ্ডের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এ বার নিয়ে দ্বিতীয় বার হচ্ছে। সেই ১৯৬৪ সালে যখন টোকিয়োয় অলিম্পিক্স হয়েছিল তখন আমার বাবা-মা দু’জনেই ছাত্র ছিলেন। ওঁদের থেকে সে সময়ের বহু মজাদার গল্প শুনেছি। এ বার এশিয়ায় প্রথম শহর হিসেবে আমার টোকিয়ো দ্বিতীয় বার অলিম্পিক্স আয়োজন করতে চলেছে। এক বছর আগে অতিমারির কারণে যখন অলিম্পিক্স স্থগিত হয়ে গিয়েছিল তখন প্রশ্ন উঠেছিল, টোকিয়োয় অলিম্পিক্স হবে তো? শেষ পর্যন্ত গেমস এক বছর পিছিয়ে হওয়ায় সাধারণ মানুষের একটা অংশ অলিম্পিক্সের আবেগে গা ভাসিয়েছে।

আশঙ্কার কারণ সেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি। বৃহস্পতিবারেও জাপানে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন দু’হাজারেরও বেশি। চিকিৎসকদের মতে, কয়েক দিনের মধ্যেই এই সংখ্যাটা তিন হাজার ছুঁতে পারে। গত জানুয়ারির পরে ফের সংক্রমণের লেখচিত্র উর্ধ্বমুখী। এই অবস্থায় অতিমারির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অলিম্পিক্স সফল ভাবে শেষ পর্যন্ত হবে কি না তা নিয়েই চিন্তিত জাপানের মানুষ। আশঙ্কা আরও বেড়েছে গেমস ভিলেজে এই মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোয়। শুনেছি, মার্কিন জিমন্যাস্টিক্স দল-সহ বেশ কয়েকটি দেশের খেলোয়াড়েরা গেমস ভিলেজ ছেড়ে সুরক্ষার কারণে হোটেলে গিয়ে থাকছেন। এ পর্যন্ত আট খেলোয়াড় আক্রান্ত!

এমনিতেই জাপানের নাগরিকদের একটা বড় অংশ এই সময়ে অলিম্পিক্সের বিরোধী। আর সাধারণের সেই বিক্ষোভের সূত্রপাত অনেক আগে থেকেই। ২০১১ সালে ফুকুশিমায় ভূমিকম্প ও সুনামির পরে ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সরকারি ভাবে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক্স কমিটি জানায়, ২০২০ সালের অলিম্পিক্স টোকিয়োতে হবে। তার পরেই এই বিক্ষোভ অল্প অল্প করে দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। যা চূড়ান্ত রূপ পেয়েছে, গত বছর করোনা সংক্রমণ বাড়ার পরে। চিকিৎসক সংগঠন, বিজ্ঞানী থেকে দেশের মানুষ পথে নেমে প্রতিবাদ করেছে এ বার অলিম্পিক্স আয়োজনের। করোনার পাশাপাশি অলিম্পিক্স আয়োজনের বিশাল ব্যয়ভার নিয়েও প্রশ্ন আছে। দেশে তিন মাস ধরে জরুরি অবস্থা চলছে। তাই সাধারণের বিক্ষোভ চূড়ান্ত পর্যায়ে। যে বিক্ষোভে আমিও একজন অংশগ্রহণকারী। এই বিক্ষোভ চলবে। জানা নেই, অলিম্পিক্সের পরে টোকিয়ো, ওসাকায় সংক্রমণের মাত্রা আরও বাড়লে কী হবে।

এরই মাঝে বৃহস্পতিবার গোটা জাপানে তোলপাড় ফেলেছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ডিরেক্টর কান্তারো কোবায়াশিকে বরখাস্ত করার খবর। এই রঙ্গশিল্পী নাৎসি জমানার গণহত্যার প্রসঙ্গ তুলে এনে কৌতুক করাতেই এই শাস্তি। প্রথমে শোনা গিয়েছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সঙ্গীত পরিচালকও নাকি বরখাস্ত হয়েছেন। পুরো অনুষ্ঠানই নাকি নতুন করে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিকেলে জানলাম, তা গুজব। সে রকম কিছু হচ্ছে না।

আশঙ্কার মাঝেও শুক্রবার রাতের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে কিছু মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। গেমস ভিলেজের আশেপাশে কঠোর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়োজিত। টোকিয়োর রাস্তায় অলিম্পিক্সের ফেস্টুন, পতাকা থাকলেও, অলিম্পিক্স শুরু হওয়ার আগের দিনে উচ্ছ্বাসটা খুব কম। শুনছি, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে করোনায় প্রাণ হারানো মানুষ ও বিশ্ব জুড়ে সমানাধিকারের জন্য বার্তা থাকবে। যা দেখতে ৬৮ হাজারের অলিম্পিক্স স্টেডিয়ামে হাজির থাকবেন মাত্র ৯৫০ জন। বৃহস্পতিবারেই টোকিয়ো অলিম্পিক্সে হাজির থাকতে জাপানে এলেন মার্কিন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন। জাপানের বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ অবশ্য এই জাঁকজমকের চেয়েও বেশি চিন্তিত নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে অলিম্পিক্স সফল ভাবে শেষ করার ব্যাপারে। আগামী কয়েক সপ্তাহ সেটাই কঠিন পরীক্ষা।

(লেখক কানসাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। এই মুহূর্তে টোকিয়োতে রয়েছেন)

অন্য বিষয়গুলি:

Tokyo Olympics 2020 Tokyo Olymopics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE