Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Lovlina Borgohain

Lovlina Borgohain: শঙ্কায় টিভি চলেনি বাড়িতে, সোনার শপথ লাভলিনার

ই ঠান্ডা মাথা আর পা মাটিতে রাখার স্বভাবটাই রিংয়ের ভিতরে হোক বা বাইরে, এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে অজানা-অখ্যাত গ্রামের মেয়েটাকে।

বক্সিংয়ে সেমিফাইনালে উঠে পদক নিশ্চিত করলেন লাভলিনা বরগোহাঁই।

বক্সিংয়ে সেমিফাইনালে উঠে পদক নিশ্চিত করলেন লাভলিনা বরগোহাঁই।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২১ ০৮:২৬
Share: Save:

ভয় পাবে না। খোলা মনে থাকো। নিজের উপরে বিশ্বাস রাখলে সাফল্য আসবেই।

সাধারণত পরীক্ষার আগে বাবা-মা ছেলেমেয়েদের এই কথাগুলো বলেন। কিন্তু, বারোমুখিয়ায় উলট পুরাণ! অলিম্পিকের কোয়ার্টার ফাইনালে লড়তে নামার আগে, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় ফোন করে আশীর্বাদ নেওয়া মেয়েটাই উপরের কথাগুলো টিকেন ও মামনি বরগোহাঁইকে পই পই করে বোঝাচ্ছিলেন!

কিন্তু মা-বাবার মন, তাই ভয় তো হবেই। মেয়ে যখন টোকিয়োয় বক্সিং রিং-এ ঘাম ঝরাচ্ছেন, তখন অসমে গোলাঘাট জেলার গ্রামের বাড়িতে ঘামতে ঘামতে শুধুই ভগবানের কাছে প্রার্থনা চালিয়ে গিয়েছেন টিকেন ও মামনি। সকলে মিলে খেলা দেখা দূরের কথা, বক্সিংয়ের উত্তেজনা সহ্য হবে না বলে সকাল থেকে বরগোহাঁই বাড়িতে টিভিই চলেনি।

৪-১ ব্যবধানে চিনা তাইপের নিয়েন চিন চেনকে পরাস্ত করেছেন লাভলিনা, পড়শির ফোনে সেই খবর পেয়েই আনন্দে ফেটে পড়েন টিকেন-মামনি। অবশ্য উচ্ছাসের মেয়াদ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সময় মিলতেই টোকিয়ো থেকে ফোনে লাভলিনা বাড়ির লোককে বলে দেন, “এখনও উৎসবের সময় আসেনি। আগে সোনার পদক পাই। তারপর আনন্দ করার অনেক সময় পাবে।”

এই ঠান্ডা মাথা আর পা মাটিতে রাখার স্বভাবটাই রিংয়ের ভিতরে হোক বা বাইরে, এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে অজানা-অখ্যাত গ্রামের মেয়েটাকে। অসমের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে অলিম্পিক্স পদক নিশ্চিত করার পরে তাই গ্রামের মানুষ, রাজ্যের মানুষকে লাভলিনার বার্তা, “আমার কাছে পদকের অর্থ একটাই, সোনা। বক্সিং শুরু করার পর থেকেই লক্ষ্য ছিল অলিম্পিক্স পদক। তাই সব আনন্দ-উপভোগ এড়িয়ে চলেছি। পদক আনার পরে চুটিয়ে আনন্দ করার সময় পাব।” কিন্তু আবেগকে কি শাসনে বাঁধা যায়! যে গ্রামে আসার একটা পাকা রাস্তা নেই, পানীয় জলের পাইপলাইন নেই— সেখানকার মেয়ে অলিম্পিক্সে পদক পাচ্ছে! তাই বরপথারজুড়ে আতসবাজির শব্দ! রাস্তাঘাটে শুরু হয় বিহু নাচ।

বাবা বলেন, “মেয়ে অলিম্পিক্সে পদক পাবে, সেই স্বপ্ন দেখারও সাধ্য ছিল না। কিন্তু মেয়েটার বড় সাধ অলিম্পিক্সে সোনা পাবে। এখন আমরাও বিশ্বাস করি, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল জিতে দেশকে আরও গর্বিত করবে ও।”

২০১২ সালে প্রতিভা অন্বেষণ শিবিরে সাইয়ের বক্সিং কোচ পদুম বড়ো বরপথার গার্লস হাই স্কুলের মাঠে ট্রায়াল দিতে আসা লাভলিনার প্রতিভা চিনে নেন। তখন কিক বক্সিং অনুশীলন করতেন লাভলিনা। পদুম বলেন, “দেখেই বুঝতে পারি ঘষেমেজে নিলে মেয়েটা বক্সিংয়ের অনেকদূর যাবে।” তার পর থেকে এখন পর্যন্ত টানা ৯ বছর পদুমের প্রশিক্ষণেই আছেন লাভলিনা। পছন্দের বক্সার মহম্মদ আলির ফুটওয়ার্ক ও পাঞ্চ লাভলিনাকে টানে। সেই সঙ্গে টানে লড়াই চালানোর অদম্য ইচ্ছাটা। কিক বক্সিংও লাভলিনাকে অনেকটাই সাহায্য করেছে। ২০১৮ সালের পর থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পদক পেলেও লাভলিনার মাথা ঘুরে না যাওয়াটাই সাফল্যের চাবিকাঠি বলে মনে করেন পদুম।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy