কৃতজ্ঞতা: ট্রফি নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ ভারতীয় দলের। সমর্থনের জন্য ইডেনের দর্শকদের দিকে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানালেন ভারত অধিনায়ক কোহালি। রবিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
যে কোনও বড় ক্রিকেট লাইব্রেরিতেই বিখ্যাত সেই ছবিটা পাওয়া যেতে পারে। সিডনিতে ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া টেস্টের পঞ্চম দিনের খেলা চলছে আর মাঠে হাজির মাত্র এক জন দর্শক। ঘটনাটা ৭ ডিসেম্বর, ১৯৩২ সালে।
ওই টেস্টের পঞ্চম দিনে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল এক রান। যে খেলা দেখতেও মাঠে চলে এসেছিলেন ওই ক্রিকেটপ্রেমী। এবং, জায়গা করে নিয়েছিলেন ক্রিকেট রোমান্সের পাতায়।
২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর, বাংলাদেশের শেষ চার উইকেট পড়া দেখতে ইডেনমুখী হয়েছিলেন প্রায় হাজার চল্লিশেক মানুষ! জানা যাবে না, নব্বই বছর আগের সেই দিনটায় ওই এক জন দর্শককে মাঠে দেখে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ক্রিকেটারদের। কিন্তু এটা জানা যাচ্ছে, রবিবার ইডেনের দর্শক দেখে কী রকম অবাক হয়ে গিয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি স্বয়ং।
ম্যাচের পরে বিস্মিত কোহালিকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি ভাবতে পারিনি শেষ দিনে এত মানুষ মাঠে আসবেন খেলা দেখতে। ওঁরা জানতেন, ম্যাচ বেশি সময় গড়াবে না। তাও এসেছিলেন। তা ছাড়া প্রথম দু’দিন তো মাঠ ভরেই গিয়েছিল।’’ এই গ্যালারি ভর্তি জনতার সামনে খেলাটাই যে ভারতীয় ক্রিকেটারদের কাছে বড় প্রেরণা, সেটা বলছিলেন হেড কোচ রবি শাস্ত্রীও।
রবিবার মাঠমুখী জনতার একটাই প্রার্থনা ছিল। বাংলাদেশ যেন কিছু সময় ব্যাট করতে পারে। এমনকি, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা রান নিলেই তাঁদের তুমুল উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছিল ইডেন। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। মাত্র ৪৭ মিনিটেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়া মাহমুদুল্লা আর ব্যাট করতে নামেননি। উমেশ পাঁচটি, ইশান্ত শর্মা চারটি উইকেট তুলে নিলেন দ্বিতীয় ইনিংসে।
ইডেন যেমন ভারতীয় দলের জন্য দু’হাতে উজাড় করে দিয়েছিল ভালবাসা, আপ্লুত কোহালিও চেয়েছিলেন সে রকম কিছু ফিরিয়ে দিতে। তাই ট্রফি নিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে মাঠ প্রদক্ষিণ করলেন ভারত অধিনায়ক। গ্যালারির দিকে তাকিয়ে হাতের ইশারায় বোঝাতে চাইছিলেন, আরও জোরে গর্জন করো, আরও জোরে। মাঝে মাঝে হাতটা কানের কাছে নিয়ে গিয়ে ইঙ্গিত করছিলেন, কই শুনতে পাচ্ছি না তো! যা দেখে ইডেন আরও জোরে গর্জে উঠছিল।
গোলাপি বলের এই টেস্ট যে পাঁচ দিনের ক্রিকেটের প্রতি দর্শকের টান বাড়িয়ে তুলেছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই কোহালির। পাশাপাশি টেস্ট ক্রিকেটের আকর্ষণ বাড়াতে কয়েকটি রাস্তাও দেখিয়েছেন কোহালি। যেমন, এক, টেস্টের বাণিজ্যকরণ আরও বেশি করে করতে হবে। দুই, মাঠের পাশে দর্শকদের জন্য বিশেষ কোনও খেলার ব্যবস্থা রাখতে হবে। তিন, লাঞ্চে খুদে স্কুল পড়ুয়াদের মাঠে এনে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দিতে হবে। ‘‘আমার মনে হয়, এ সব ঠিক মতো করতে পারলে টেস্ট ক্রিকেটের হারানো আকর্ষণ ফিরে আসবে। লোকে মাঠে ভিড় করবে,’’ বলে দিচ্ছেন কোহালি।
এ দিন ইডেন টেস্ট এক ইনিংস ও ৪৬ রানে জিতে নিল ভারত। সিরিজ জিতল ২-০। পাশাপাশি নতুন করে লেখা হল রেকর্ড বইও। যেমন, কোহালির নেতৃত্বে টানা সাতটি টেস্ট জয়ের রেকর্ড গড়ল ভারত। প্রথম দল হিসেবে টানা চারটে টেস্ট জিতল ইনিংসে। টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও বাকিদের থেকে অনেক এগিয়ে কোহালির দল। এ দিন ঘরের মাঠে আরও একটি অভূতপূর্ব ব্যাপার দেখা গিয়েছে। বাংলাদেশের ১৯টি উইকেটের (মাহমুদুল্লা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করেননি) সব ক’টি পেয়েছেন ভারতীয় পেসাররা!
অপ্রতিরোধ্য: আড়াই দিনেরও কম সময়ে জয় বিরাট ব্রিগেডের। ট্রফি হাতে নবাগত সদস্য কে এস ভরত (মাঝখানে)। রবিবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের এই আধিপত্য কি মনে করিয়ে দিচ্ছে স্বর্ণযুগের সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা অস্ট্রেলিয়া দলকে? কোহালি এই তুলনায় যেতে চান না। তিনি পরিষ্কার বলে দিচ্ছেন, ‘‘সাতটা টেস্ট জেতা দিয়ে কিছু বলা যায় না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দল ১৫ বছর ধরে শীর্ষে ছিল। তাই এখন নয়, আমার অবসর নেওয়ার সময় এই প্রশ্নটা করতে পারেন।’’
কোহালির সাংবাদিক বৈঠক শুরুর আগে এক ফ্রেমে পাওয়া গিয়েছিল তাঁদের দু’জনকে। প্রাক্তন এবং বর্তমান ভারত অধিনায়ক। এক জনের হাতে ইডেনের এই গোলাপি টেস্টের জন্ম হয়েছে। অন্য জনের হাতে তা স্মরণীয় হয়ে থাকল। তাঁরা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিরাট কোহালি।
সৌরভ চেয়েছিলেন, ভরা গ্যালারির সামনে যেন খেলার সুযোগ পান ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। কোহালি চেয়েছিলেন, বাংলাদেশকে সিরিজে ২-০ হারিয়ে যেন হাসিমুখে মাঠ ছাড়তে পারেন তাঁরা।
কোহালিকে জিতিয়ে দিলেন তাঁর পেসাররা। সৌরভকে জেতালেন ইডেনের দর্শকরা।
স্কোরকার্ড
বাংলাদেশ ১০৬ এবং ১৯৫
ভারত ৩৪৭-৯ ডি. (৮৯.৪)
বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস)
(শনিবার ১৫২-৬ এর পরে)
মুশফিকুর ক জাডেজা বো উমেশ ৭৪•৯৬
এবাদত ক কোহালি বো উমেশ ০•৪
আল আমিন ক ঋদ্ধিমান বো উমেশ ২১•২০
জায়েদ ন. আ. ২•২
অতিরিক্ত ২২
মোট ১৯৫ (৪১.১)
পতন: ৭-১৫২ (এবাদত, ৩৪.১), ৮-১৮৪ (মুশফিকুর, ৩৯.৩), ৯-১৯৫ (আল আমিন, ৪১.১)।
বোলিং: ইশান্ত শর্মা ১৩-২-৫৬-৪, উমেশ যাদব ১৪.১-১-৫৩-৫, মহম্মদ শামি ৮-০-৪২-০, আর অশ্বিন ৫-০-১৯-০, জাডেজা ১-০-৮-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy