সমর্থন: ইডেনে বাংলাদেশের ভক্তেরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
গোলাপি আলোয় সেজে ওঠা ইডেনের গ্যালারিতে আজ শুক্রবার কত পতাকা উড়বে বাংলাদেশের? কত দর্শক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে এসেছেন গোলাপি বলের দিনরাতের টেস্টের সাক্ষী হতে?
কেউ বলছেন ছয় হাজার, কারও হিসাবে সংখ্যাটা দশ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়েছে, সংখ্যাটা বলা সম্ভব নয়। তাদের কাছে কোনও নির্দিষ্ট হিসাব নেই।
কিন্তু শহরে বাংলাদেশের থাকার আস্তানা বলে পরিচিত সদর স্ট্রিট, মার্কো স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের পঁচিশটি হোটেল ও গেস্ট হাউসে ঢুঁ মেরে দেখা গেল, কোথাও কোনও ঘর খালি নেই। বন্ধু ও পরিবার নিয়ে শহরে পৌঁছে ঢাকার বস্ত্র ব্যবসায়ী ফারুক চৌধুরী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দমদম বিমানবন্দরে নেমে প্রচণ্ড বিপদে পড়েছেন। হাতে ম্যাচ দেখার টিকিট রয়েছে। অথচ ইডেনের কাছাকাছি অঞ্চলে কোনও হোটেলে বেশি ভাড়া দিয়েও জায়গা পাচ্ছেন না। ধর্মতলার পাঁচ তারা হোটেল থেকে সদর স্ট্রিটের গেস্ট হাউস—কোথাও একটি ঘরও তিনি পাননি রাত পর্যন্ত। ময়দানের এক পরিচিত কর্তাকে ধরেছেন, একটা হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে। বলছিলেন, ‘‘ঢাকায় বসে শুনেছি কলকাতা নাকি গোলাপি হয়ে গিয়েছে। সেই উত্তেজনার আঁচ নিতেই ইডেনের কাছে হোটেল খুঁজছি। কী অবস্থা!’’
আরও পড়ুন: শেষ মুহূর্তে বাতিল প্যারাট্রুপার শো
তাঁর সঙ্গী আবু হাসান চৌধুরী পরিচিত ফুটবল-কর্তা। নিয়মিত ঢাকা-কলকাতা করেন। তিনিও বললেন, ‘‘শুনছিলাম অনেক লোক আসছে আমাগো দেশ থাইক্যা। কিন্তু এমন হাল কখনও দেখি নাই। কী যে করসে ‘দাদা’, কে জানে?’’
গোলাপি বল ও দিন-রাতের টেস্ট নিয়ে এগুলো জানেন?
ইতিহাসের ইডেন গার্ডেন্স সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানেন?
আরও পড়ুন: টি-টোয়েন্টিতে শামি, থেকে গেলেন ঋষভ
বাংলাদেশ অধিনায়ক মোমিনুল হকের সম্পর্কে শ্বশুর আবু জুবায়েল রানা এসেছেন খেলা দেখতে। তিনি ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন গোলাপি আলোর মালায় সেজে ওঠা গ্র্যান্ড হোটেলের সামনের রাস্তা। ম্যাচের আগের সন্ধ্যায় তিনি মোহরকুঞ্জ থেকে গঙ্গার পাড়ের গোলাপি আলোর আভা দেখেই ফিরবেন হোটেলে। বলছিলেন, ‘‘গোলাপি বলের দিনরাতের টেস্ট তো কখনও দেখিনি। সেটা দেখতেই আসা।’’ বাংলাদেশের বাঁ-হাতি ওপেনার ইমরুল কায়েসের দাদা মহম্মদ আরিফ কায়েসকে পাওয়া গেল মার্কো স্ট্রিটের একটি হোটেলে। দুপুরের খাওয়া সেরে ভাইয়ের কাছে টিকিট আনতে যাবেন। মেহেরপুর থেকে এসেছেন। বন্ধু মানিক শীলকে নিয়ে বিকেলে যাবেন বাংলাদেশের টিম হোটেলে। বলছিলেন, ‘‘আমাদের দেশে অনেক ক্রিকেট ম্যাচ দেখেছি। কিন্তু গোলাপি বলে দিনরাতের টেস্ট দেখিনি কখনও। দশ দিন আগে ভিসা পেয়েছি। আজই কলকাতায় এসেছি ট্রেনে-বাসে করে। আগে থেকে অগ্রিম দিয়ে হোটেলের ঘর বলে রেখেছিলাম বলে সমস্যা হয়নি। কোথাও তো ঘর নেই।’’ মহম্মদ আরিফ আগে কখনও ইডেন দেখেননি। ভাই ভাল রান করবেন সেটাই তাঁর আশা। তবে তাঁর বন্ধু মানিক দু’বার ইডেনে খেলা দেখেছেন। বলছিলেন, ‘‘গোলাপি বলে খেলা। সেটা কী রকম, তা দেখতে চাই। পাশাপাশি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইডেনে ঘণ্টা বাজিয়ে খেলা শুরু করবেন, এটাও তো আমাদের কাছে গর্বের ব্যাপার।’’ দেশের জন্য গলা ফাটাতে শরীরে সবুজ-লাল পতকা জড়িয়ে দেশের জন্য গলা ফাটাবেন বলে ঠিক করেছেন দু’জনেই। দল জিতবে এটা না বললেও দু’জনেই বললেন, ‘‘খেলাটা জমবে।’’
আরও পড়ুন: বল কাঁপলেই কিন্তু কঠিন পরীক্ষায় পড়বে ব্যাটসম্যানরা
সারা বছরই চিকিৎসা বা নানা প্রয়োজনে বাংলাদেশ থেকে মানুষ আসেন কলকাতায়। তাঁদের প্রায় সবারই আস্তানা হয় ওই সদর-মার্কো স্ট্রিট অঞ্চল। সে রকমই একজন ফরিদপুরের মহম্মদ মানিক এসেছেন স্ত্রী-র চিকিৎসা করাতে। গত দু’দিনের চেষ্টায় একদিনের একটা টিকিট জোগাড় করেছেন দ্বিগুণ টাকা দিয়ে। বলছিলেন, ‘‘স্ত্রী সুস্থ হয়ে উঠেছে। আবার কবে এ দেশে আসব। আমি ক্রিকেট ভালবাসি। সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইনি। এক হাজার টাকা দিয়ে একদিনের টিকিট কেটেছি।’’ এ রকম নানা কাজে শহরে আসা বাংলাদেশিরা টিকিটের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন।
আরও পড়ুন: বলের রংই বুঝছেন না, লিটনকে নিয়ে উৎকণ্ঠা
ইডেনের ইতিহাসে ভারত-বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচ। তার উপরে গোলাপি বলে খেলা। ময়দান চত্বরে তো বটেই, শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলায় মার্কারির নিয়ন আলোও যেন ঢাকা পড়েছে গোলাপি আভায়। শহরের সব চেয়ে উঁচু তিনটি বহুতলের রং তো বদলেছেই, শহিদ মিনারের শরীর থেকে যেন গড়িয়ে পড়ছে গোলাপি রং। দেখা গেল, নতুন এই দৃশ্য মোবাইলে তুলে রাখতে শহরের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসেছেন ম্যাচের আগের বিকেলে। নিজস্বী তুলছেন মোহরকুঞ্জে, উপভোগ করছেন শহরের নতুন শোভা। তাতে গা ভাসিয়েছেন পড়শি দেশের মানুষজনও। হোটেলে প্রিয় ‘ভুনা খিচুড়ি’ খেয়ে তাঁরাও গোলাপি বলের দিনরাতের টেস্ট দেখতে আজ ভিড় জমাবেন ইডেনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy