বাংলাদেশ বোলারদের শাসন করল কোহালির ব্যাট। ছবি— এএফপি।
১০৬ রানে শেষ বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। প্রথম দিনের শেষে ভারতের রান তিন উইকেটে ১৭৪ রান। বিরাট কোহালির দল এগিয়ে ৬৮ রানে। ঐতিহাসিক দ্বিতীয় টেস্টের রাশ নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে ভারত। এ কথা বললেও অত্যুক্তি হবে না।
শুক্রবার টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৩০.৩ ওভারেই দাঁড়ি পড়ল সফরকারী দলের ইনিংসে। ইডেনে গোলাপি বলের টেস্টে প্রথম ঘণ্টাতেই পড়ে গিয়েছিল চার উইকেট।সেই ঝটকা আর সামলাতে পারেনি বাংলাদেশ। সবাই ধরেই নিয়েছিলেন গোলাপি বলে হয়তো ‘জুজু’ রয়েছে। ভারতের ব্যাটিং দেখে মনে হল, সে সব নেই। অবশ্য এই বাংলাদেশ খুবই দুর্বল। আগুন জ্বালানোর মতো কোনও বোলার নেই। তাই খুব সহজেই প্রতিবেশি দেশের বোলিং সামলাল ভারত। ইডেন মাতালেন ভারত অধিনায়ক। ৫৯ রানে অপরাজিত রয়েছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন অজিঙ্ক রাহানে (২৩)।
বাংলাদেশের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৪ রানে ফেরেন ইনদওরে ডাবল সেঞ্চুরি করা ময়াঙ্ক আগরওয়াল (১৪)। আল-আমিন হোসেনের বলে গালিতে ক্যাচ দিলেন তিনি। চায়ের বিরতির পর ফিরলেন রোহিত শর্মা (২১)। পেসার এবাদত হোসেনের বলে কোনও শট না খেলে এলবিডব্লিউ হলেন তিনি। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি। চায়ের বিরতির আগে ১২ রানে পড়েছিল রোহিতের ক্যাচ। আবু জায়েদের বলে ফাইন লেগে তাঁর সহজ ক্যাচ ফেলে দিলেন আল-আমিন হোসেন। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেন না তিনি। ভারতের দুই উইকেট তুলে নেওয়ার পরে চেতেশ্বর পূজারা ও কোহালি ভারতের ইনিংস গোছানোর কাজ করেন। পূজারা আগে গোলাপি বলে খেলেছেন। এই বলের চরিত্র তাঁর ভালই জানা। ৫৫ রান করে ফেরেন পূজারা। কোহালির সঙ্গে পার্টনারশিপে ৯৪ রান জোড়েন তিনি। ব্যাটসম্যানদের দাপটের আগে ভারতের বোলাররা ইডেনে ফুল ফোটান।
ঐতিহাসিক ইডেন টেস্টে প্রথম বল করেছিলেন ইশান্ত শর্মা। আর প্রথম বলটা খেলেছিলেন শাদমান ইসলাম। সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসের অঙ্গ হয়ে গিয়েছিলেন এই দু’জন। ইশান্ত আবার গোলাপি বলে প্রথম উইকেটও নিয়েছিলেন। তাঁর বলে এলবিডব্লিউ হয়েছিলেন ইমরুল কায়েস (৪)। শেষ পর্যন্ত পাঁচ উইকেট নেন ইশান্ত। এটা তাঁর কেরিয়ারের দশম পাঁচ উইকেট। ইশান্তের বোলিং গড় ১২-৪-২২-৫। উমেশ যাদব (৩-২৯), মহম্মদ শামি (২-৩৬) থাকলেন সঙ্গতে। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে বলই করতে হল না। রবীন্দ্র জাডেজা করলেন মাত্র এক ওভার।
আরও পড়ুন: ফুটছে টইটম্বুর গ্যালারি, নতুন ইতিহাস গড়ল ইডেন
আরও পড়ুন: গোলাপি মিষ্টি! ঐতিহাসিক টেস্টের আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করলেন সৌরভ
১৫ রানে পড়েছিল বাংলাদেশের প্রথম উইকেট। পরের দুই উইকেট পড়ল দুই রানের মধ্যে। সেই শুরু। এর পর তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল পদ্মাপারের দল। বাংলাদেশের দ্বিতীয় উইকেটের নেপথ্যে বোলার উমেশ যাদবের চেয়েও অবশ্য কৃতিত্ব বেশি দ্বিতীয় স্লিপে থাকা রোহিত শর্মার। মোমিনুলের খোঁচা ডানদিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে অবিশ্বাস্য দক্ষতায় ধরলেন মুম্বইকর। কোনও রান না করেই ফিরলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এর দুই বল পরেই উমেশের বল ব্যাটের কাণায় লাগিয়ে বোল্ড হলেন মিঠুন। তিনিও খাতা খুলতে পারেননি। ম্যাচের ১১তম ওভারে বাংলাদেশ অধিনায়ক মোমিনুল হক ও মহম্মদ মিঠুন ফেরার পর ১২তম ওভারে ফিরলেন পাঁচ নম্বরে নামা মুশফিকুর রহিম। ব্যাটে লাগিয়ে বোল্ড হলেন তিনি। এক্ষেত্রে বোলার ছিলেন মহম্মদ শামি। মোমিনুল, মিঠুন ও মুশফিকুর— প্রত্যেকেই আউট হলেন শূন্য রানে।
মোমিনুলের ক্যাচ অবিশ্বাস্য দক্ষতায় ধরছেন রোহিত। ছবি ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
১৭ রানে পড়ে গিয়েছিল তিন উইকেট। চতুর্থ উইকেট পড়ল ২৬ রানে। এবং ড্রিঙ্কসের পরই পড়ল পঞ্চম উইকেট। স্কোরবোর্ডে তখন মাত্র ৩৮! বাংলাদেশের হয়ে কিছুটা লড়ছিলেন ওপেনার শাদমান। কিন্তু উমেশের বলে উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহাকে ক্যাচ দিলেন তিনি। ফিরলেন ব্যক্তিগত ২৯ রানে । হলেন উমেশের তৃতীয় শিকার। দলীয় ৬০ রানে ফিরলেন মাহমুদুল্লাহ। ইশান্তের বলে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে প্রথম স্লিপের সামনে থেকে তাঁর ক্যাচ ধরলেন ‘সুপারম্যান সাহা’। মাহমুদুল্লাহ করলেন মোটে ছয়।
মাহমুদুল্লাহর ক্যাচ দুর্দান্ত ভাবে নিলেন ঋদ্ধি। শুক্রবার ইডেনে। ছবি: বিসিসিআই।
এর পর লিটন দাস রিটায়ার্ড হার্ট হয়েছিলেন। মহম্মদ শামির বল হেলমেটে লেগেছিল বাংলাদেশের উইকেটরক্ষকের। পরের ওভারে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। তখন তাঁর রান ২৪। আম্পায়ারকে তিনি বললেন যে তাঁর অসুবিধা হচ্ছে খেলতে। ২১.৪ ওভারে বাংলাদেশের রান তখন ছয় উইকেটে ৭৩। বৃহস্পতিবারই ফিসফাস ছিল যে গোলাপি বল দেখতে সমস্যা হচ্ছে লিটনের। এদিন ব্যাট করার সময়ও সেটাই তাঁকে মুশকিলে ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। লিটনের পরিবর্তে ‘কনকাসন সাবস্টিটিউট’ হিসেবে এসেছিলেন মেহেদি হাসান। ইশান্তের বলে এবাদত হোসেন (১) বোল্ড হওয়ার পর ক্রিজে এলেন তিনি। ৮২ রানে পড়েছিল বাংলাদেশের সপ্তম উইকেট। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকলেন না মেহেদিও (৮)। ইশান্তের বলে মিড উইকেটে দাঁড়ানো চেতেশ্বর পূজারাকে ক্যাচ দিলেন তিনি। নাইম হাসানকে (১৯) বোল্ড করেন ইশান্ত। আবু জায়েদকে ফেরান শামি।
তার আগে ভারতে হওয়া প্রথম গোলাপি বলে দিনরাতের টেস্টে টস জিতেছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মোমিনুল হক। টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। খেলা শুরুর আগে দুই দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে মিলিত হন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দু’জনে ঘণ্টা বাজিয়ে সূচনাও করেন খেলার। সেখানে তখন ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ভিআইপি বক্সে আবার সচিন তেন্ডুলকরকে দেখা গেল হাসিনার পাশে বসে কিছু বোঝাতে।
ইডেনে ঘণ্টা বাজিয়ে গোলাপি বলে টেস্টের সূচনা করছেন হাসিনা-মমতা। রয়েছেন সৌরভও। নিজস্ব চিত্র।
ইনদওরে প্রথম টেস্ট ইনিংস ও ১৩০ রানে জিতে দুই টেস্টের সিরিজে এগিয়ে রয়েছে ভারত। বিরাট কোহালির দলের সামনে ইডেনে সিরিজ ২-০ করার হাতছানি। একই সঙ্গে এই টেস্ট জিতলে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পয়েন্টের নিরিখে অনেক এগিয়ে যাবে টিম ইন্ডিয়া।
A pumped up @ImIshant after he picks up his 5-wkt haul in the #PinkBallTest.#TeamIndia pacers have bowled out Bangladesh for 106 runs in the first innings. pic.twitter.com/Z3k0yvEwlM
— BCCI (@BCCI) November 22, 2019
এই টেস্টে ভারতের প্রথম এগারো অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে পাঁচজন বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান, তিনজন পেসার, দু’জন স্পিনার ও এক উইকেটকিপারেই খেলছে ভারত। কম্বিনেশনে কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। বাংলাদেশ দলে অবশ্য দুটো পরিবর্তন হয়েছে। বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও অফস্পিনার মেহেদি হাসান বাদ পড়েছেন। দলে এসেছেন পেসার আল-আমিন ও অফস্পিনার নাইম হাসান। ফলে, মুস্তাফিজুর রহমান থাকলেন দলের বাইরেই। নেটে গোলাপি বল দেখার ক্ষেত্রে সমস্যা হলেও উইকেটকিপার হিসেবে খেলছেন লিটন দাসই।
Bangladesh have won the toss and will bat first in the #PinkBallTest @Paytm #INDvBAN pic.twitter.com/LCTkWZ6bKM
— BCCI (@BCCI) November 22, 2019
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy