বিরাটদের ম্যানেজার সুনীল সুব্রহ্মণ্যম। ফাইল চিত্র
ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ম্যাচ জেতার আবহের মধ্যে আচমকাই বিতর্ক-বিদ্ধ ভারতীয় দল। এবং, সচরাচর যিনি বিদেশ সফরে বিতর্ক তৈরি হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য দায়িত্বশীল পদে থাকেন, ঘটনাচক্রে তিনিই এ বার বিতর্কের কেন্দ্রে। বিরাট কোহালিদের টিমের প্রশাসনিক ম্যানেজার।
তিনি— সুনীল সুব্রহ্মণ্যম, এমন এক অপ্রত্যাশিত ঝড় তুলে দিয়েছেন, যা নজিরবিহীন। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ভারতীয় দূতাবাসের উচ্চ পদস্থ কর্তাকে অপমান করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। মামলা গড়িয়েছে প্রধানমন্ত্রীর অফিস পর্যন্ত। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের হাইকম্যান্ড জড়িয়ে গিয়েছেন।
বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, সরকারের উচ্চ মহল থেকে এই ঘটনার জন্য তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে ফোন যায় ভারতীয় বোর্ডে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্সের প্রধান বিনোদ রাইয়ের কাছে। এবং, ভারতীয় সময় বেশি রাতের দিকের খবর, কোহালিদের ম্যানেজারকে ফেরানো হতে পারে। সম্ভবত আজ, বুধবারই দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে তাঁর।
ঘটনার সূত্রপাত একটি বিজ্ঞাপনকে কেন্দ্র করে। ঠিক কী নিয়ে ছিল এই বিজ্ঞাপন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। কারও কারও ব্যাখ্যা, ওয়েস্ট ইন্ডিজে ভারত সরকারের উদ্যোগে জল সংরক্ষণ নিয়ে একটি বিশেষ বিজ্ঞাপন করার কথা ছিল বিরাট কোহালি-সহ কয়েক জন ভারতীয় ক্রিকেটারের।
কথা ছিল, ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে ম্যানেজার সুনীলকে যোগাযোগ করা হবে। তার পরে তিনিই সমস্ত কিছুর ব্যবস্থা করবেন। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজে একাধিক জায়গার দূতাবাসের কাছে ভারতীয় দলের ম্যানেজারের নামই দেওয়া হয়েছিল যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে। ধরে নেওয়াই যায়, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছিল ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে কথা বলার পরেই।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগোতে ভারতীয় দূতাবাস থেকে যখন এক উচ্চ পদস্থ কর্তা কোহালিদের প্রশাসনিক ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তখন অত্যন্ত ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাবে তিনি দূতাবাসের সেই শীর্ষ কর্তার সঙ্গে কথা বলেন। এমনকি, মোবাইলে ঘন-ঘন বার্তা পাঠানো নিয়েও এসএমএসে অপমানজনক মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ। শীর্ষকর্তা যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি নাকি মেসেজ পাঠিয়ে বলেন, ‘‘বারবার আমায় বিরক্ত করবেন না।’’ এর পরেই সাংঘাতিক আকার নেয় ঘটনা। যদিও ভারতীয় দলের প্রশাসনিক ম্যানেজার সুব্রহ্মণ্যমকে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। চাপে পড়ে শুটিংয়ের ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত ছিলেন তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে ত্রিনিদাদ এবং টোব্যাগো আবার ভারতীয়দের জন্য সব চেয়ে জনপ্রিয় স্থান। সেখানেই বরাবর ভারতীয় ক্রিকেটারদের জন্য সব চেয়ে বেশি সমর্থন হাজির থেকেছে। ঐতিহাসিক ভাবে ত্রিনিদাদের মাঠ পোর্ট অব স্পেনে অবিশ্বাস্য সব মাইলস্টোন রয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটের। একাত্তরে অজিত ওয়াড়েকরের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সেই ঐতিহাসিক প্রথম টেস্ট জয়। এর পরে চতুর্থ ইনিংসে চারশোর উপর রান তাড়া করে গাওস্কর, বিশ্বনাথদের অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে ক্লাইভ লয়েডের দলকে হারানো। যা ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা কোহিনুর হয়ে থেকে গিয়েছে। বর্তমান দলের ম্যানেজার সেই ইতিহাসকে সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে ত্রিনিদাদে ভারতীয় দূতাবাসের অফিসারকে অপমান করে বসেছেন বলে অভিযোগ।
তাঁর আচরণে এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছে দূতাবাস যে, তাদের পক্ষ থেকে সরাসরি যোগাযোগ করা হয় ভারতে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে। শোনা যাচ্ছে, নরেন্দ্র মোদীর দফতরের পাশাপাশি সরকারে প্রধানমন্ত্রীর পরেই সব চেয়ে ক্ষমতাশালী অমিত শাহের কানে পর্যন্ত ঘটনাটি তোলা হয়েছে। সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব ভারতীয় দূতাবাসের প্রতি এমন ব্যবহারে প্রবল ক্ষুব্ধ এবং অবিলম্বে এর হেস্তনেস্ত করার বার্তা পৌঁছয় ক্রিকেট বোর্ডের কাছে। তার পরেই বোর্ডের পক্ষ থেকে ঠিক করা হয় যে, ম্যানেজারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাতের দিকে বোর্ড সূত্রের খবর, ভারতীয় দলের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ম্যানেজারকে ফিরে আসতে হতে পারে। তাঁর পরিবর্তে যদি নতুন কাউকে ম্যানেজার করে পাঠাতে হয়, তাই করা হবে। নয়তো বিনা ম্যানেজারেই কাজ চালাবে দল। প্রশাসনিক কাজকর্মের ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য আরও এক জন রয়েছেন কোহালিদের সঙ্গে। তাঁকে দিয়েই কাজ চালানো হতে পারে। সাধারণত শৃঙ্খলাভঙ্গ বা বিতর্ক জড়ানোর জন্য ক্রিকেটারদের ফিরিয়ে আনা হয়। এক্ষেত্রে ম্যানেজারকেই ফিরে আসতে হতে পারে।
ওদিকে, ওয়েস্ট ইন্ডিজে ফোন করে জানা গেল, ম্যানেজার সুনীল সুব্রহ্মণ্যম এ দিন ভারতীয় দলের প্র্যাক্টিসে গিয়েছিলেন। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, তাঁর চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, ঝড় বয়ে চলেছে মাথার উপর দিয়ে। রাতারাতি বাক্স গুছিয়ে ফিরে তো আসতেই হবে, এর পরে ম্যানেজার হিসেবে তাঁর ভবিষ্যৎও অন্ধকারে। কোচ বাছাইয়ের পাশাপাশি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পরে নতুন ম্যানেজারও ঠিক করা হবে। সেখানে সুনীল সুব্রহ্মণ্যম নিশ্চয়ই আশাবাদী ছিলেন, তাঁকেই হয়তো রেখে দেওয়া হবে। কিন্তু এমন এক বিতর্কের পরে তিনি ম্যানেজারের পদ ধরে রাখতে পারলে বছরের সেরা অঘটন হবে।
তড়িঘড়ি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ম্যানেজার অবশ্য অধিনায়ক কোহালিকে দিয়ে মাঠেই বিজ্ঞাপনের শুট করানোর ব্যবস্থা করিয়েছেন। অনুশীলনের চেয়েও শুটিংই মঙ্গলবার বেশি হয়েছে। কিন্তু তাতে বরফ গলবে বলে মনে হয় না। কারণ শুধু ত্রিনিদাদের দূতাবাস নয়, এর আগে গায়ানাতেও ভারতীয় দলের ম্যানেজারের দিক থেকে সম্মানজনক ব্যবহার পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ জমা পড়েছে। ত্রিনিদাদে ভারতীয় দলকে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানাতে চেয়েও যোগাযোগ করেছিল দূতাবাস। তার কোনও ইতিবাচক জবাব যায়নি তাদের কাছে। নানা মহল থেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে যে, ম্যানেজার সম্পূর্ণ ভাবেই প্রশাসনিক কাজকর্ম সামলাতে ব্যর্থ হয়েছেন। দূতাবাসের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে ফিরিয়ে আনাতেই হয়তো নিষ্পত্তি হবে না ম্যানেজার-বিতর্ক এপিসোডের। জল গড়াতে পারে আরও অনেক দূর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy