সংশয়: সাইনির পাশে ব্রিসবেনের লড়াইয়ে অশ্বিন, বুমরাকেও যাতে দেখা যায় তার মরিয়া চেষ্টা করছে দল। ফাইল চিত্র
গ্যাবার বাউন্স ভরা পিচে যশপ্রীত বুমরাকে খেলানোর মরিয়া চেষ্টা শেষ পর্যন্ত চালিয়ে গেল ভারতীয় শিবির। তেমনই অশ্বিনকে নিয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তারা শুক্রবার সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করল।
সিডনি টেস্টের পরে বুমরাকে পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ দেখাচ্ছিল। তাঁকে ব্রিসবেনে খেলাতে গেলে বড়সড় কোনও চোটের ধাক্কা আসতে পারে বলেও আবার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যে-হেতু সামনে লম্বা ক্রিকেট মরসুম রয়েছে, বুমরার মতো প্রধান অস্ত্রকে নিয়ে ঝুঁকিও নিতে চায় না দল। তেমনই অশ্বিনের পিঠের ব্যথা পুরোপুরি সারেনি। সকালে মাঠে গিয়ে দু’জনকেই তাই দেখার সিদ্ধান্ত হয়। চলতি সিরিজে ভারতীয় দল আগের দিনই তাদের প্রথম একাদশ ঘোষণা করে দিচ্ছিল। বুমরা-অশ্বিনকে নিয়ে অপেক্ষা করা হবে বলে এ দিন প্রথম একাদশ জানানো হয়নি। বুমরা না পারলে শার্দূল ঠাকুরকে খেলানো হতে পারে। হনুমা বিহারী নেই বলে ঋষভ পন্থকে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলিয়ে ঋদ্ধিমান সাহাকে দিয়ে উইকেটকিপিং করানো হতে পারে। কুলদীপ যাদব, ওয়াশিংটন সুন্দরেরাও রয়েছেন আলোচনায়।
গ্যাবায় ভারতীয় দল আজ পর্যন্ত কোনও টেস্ট জেতেনি। এক বার ড্র করতে পেরেছিল, যখন ২০০৩ সালে অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় দুর্ধর্ষ ১৪৪ করে পাল্টা বার্তা দিতে পেরেছিলেন অস্ট্রেলীয় শিবিরকে। তবে এ বারে চোট-আঘাতে ভাঙাচোরা ভারতীয় দল হলেও অনেকে লড়াইয়ের আশা ছাড়ছেন না। ব্রেট লি যেমন বলেছেন, এই ভারতীয় দল যদি গ্যাবায় জেতে, তিনি অবাক হবেন না। ব্রিসবেনের স্থানীয় সংবাদপত্রগুলিতেও আচমকাই দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় দল নিয়ে প্রশংসা। সাধারণত যা অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যমের থেকে দেখা যায় না। এমনকি, কোভিড আতঙ্ক নিয়ে থরহরিকম্প পরিস্থিতির মধ্যে গ্যাবায় খেলতে আসতে রাজি হওয়ার জন্য অস্ট্রেলীয় সংবাদপত্রে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে অজিঙ্ক রাহানের দলের প্রতি।
আরও খবর: ইচ্ছেপূরণ ফাওলারের, অবশেষে কথা য়ুর্গেন ক্লপের সঙ্গে
আরও খবর: চোটের কারণে ঘোষণা করা গেল না ভারতীয় দল, অনিশ্চিত বুমরা
যদিও সর্বস্তরে এমন সৌহার্দ্যের পরিবেশ নেই। সিডনি থেকেই দু’দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে উত্তপ্ত হয়ে পড়া সম্পর্ক এ বার ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল ক্রিকেটারদের পরিবারেও। সিডনিতে উইকেটের পিছন থেকে আর অশ্বিনকে ক্রমাগত কটূক্তি করে গিয়েছেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক টিম পেন। তা নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বের তোপের মুখে আগেই পড়েছেন পেন। এ বার মুখ খুললেন অশ্বিনের স্ত্রী প্রীতি। একটি ইংরেজি দৈনিকে তিনি লিখেছেন, ‘‘আমি স্টাম্প মাইক্রোফোনে শুনতে পেলাম, হনুমা বিহারীকে অশ্বিন বলছে, আমরা দশটা করে বল খেলব। শুনে ভাল লাগছিল।’’ তার পরেই পেনের উদ্দেশে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘একই স্টাম্প মাইক্রোফোনে এর পরে আর একটা গলা শুনলাম। সেটা একেবারেই ভাল ছিল না। আমার চিন্তা হচ্ছিল একটা কথা ভেবেই। টিম পেন যখন কথা বলছিল, অশ্বিন উত্তর দিতে শুরু করে। যা ও আগে করছিল না। ভাবছিলাম, ও কি মনঃসংযোগ হারাচ্ছে না কি পিঠের ব্যথা ওকে খুব ভোগাচ্ছে?’’
সিডনিতে অদম্য মানসিকতা দেখিয়ে প্রায় ৪৫ ওভার ব্যাট করে ম্যাচ বাঁচান অশ্বিন এবং হনুমা বিহারী। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা লড়াকু ড্র হিসেবে যা থেকে যাবে। প্রীতি সে দিনই জানিয়েছিলেন, পিঠের অসহ্য ব্যথা উপেক্ষা করে মাঠে গিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। সকালে উঠে সোজা হয়ে পর্যন্ত দাঁড়াতে পারছিলেন না। হামাগুড়ি দিয়ে চলতে হচ্ছিল অশ্বিনকে। নিজের জুতোর ফিতে পর্যন্ত বাঁধতে পারছিলেন না নীচু হয়ে। হার-না-মানা অশ্বিন তাঁর স্ত্রীকে বলেন, ‘‘আমাকে খেলতেই হবে। ম্যাচটা বাঁচাতেই হবে।’’
মাঠে অশ্বিন যখন মরিয়া লড়াই চালাচ্ছেন, পিছন থেকে পেন বলতে থাকেন, ‘‘তোমাকে গ্যাবায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আর আমর তর সইছে না অ্যাশ।’’ পাল্টা জবাব দেন অশ্বিন, ‘‘ঠিক যেমন তোমাকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার তর সইছে না আমার। ওটাই তোমার শেষ সিরিজ হবে।’’ এর পরে আরও আপত্তিজনক মন্তব্য করেন পেন, যা নিয়ে তিনি তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট ভক্তরাও বলছেন, স্মিথ-ওয়ার্নারদের বল-বিকৃতি কেলেঙ্কারির পরে ক্রিকেট মাঠে তাঁদের দেশের ভাবমূর্তি ঠিক করতে পেনকে অধিনায়ক বাছা হয়েছিল। এখন তো দেখা যাচ্ছে, পেনও একই পথে হাঁটছেন। বিশেষ করে পেন এই সব মন্তব্য করেন সিডনিতে গ্যালারি থেকে মহম্মদ সিরাজদের দিকে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য উড়ে আসার পরে। যে কারণে তাঁকে নিয়ে আরও বেশি করে অসন্তোষ তৈরি হয়। চাপে পড়ে সিডনি টেস্টের পরের দিনই ক্ষমা চেয়ে নেন পেন।
এর মধ্যে হনুমা বিহারী-অশ্বিনদের ড্রয়ের ব্যাটিং নিয়ে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েছেন বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। টুইটারে বাবুল লেখেন, ‘‘হনুমা বিহারী ক্রিকেটকে খুন করছে।’’ সেই টুইটে আবার তিনি বিহারী ইংরেজি বানানে ‘ভি’ না লিখে ‘বি’ লেখেন। বুধবার হনুমা বিজেপি সাংসদের টুইটের জবাবে শুধু তাঁর নামের বানান সংশোধন করে দিয়ে লিখেছেন ‘হনুমা বিহারী’। পদবীতে বাবুলের লেখা ‘বি’ নয়, ‘ভি’ লেখা। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে হনুমার দুঃসাহসিক ইনিংসের মতোই ক্রিকেট ভক্তদের মন জিতে নিয়েছে তাঁর এই টুইট-জবাব। বীরেন্দ্র সহবাগ প্রশংসা করে রিটুইট করেন, অশ্বিন হেসে লুটিয়ে পড়ার স্মাইলি ব্যবহার করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy