বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে দুই অধিনায়কের এই ছবি পোস্ট করল আইসিসি। ছবি: এক্স।
ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটীয় সম্পর্ক বহু দিনের। তবে তার থেকেও বেশি চর্চিত মাঠের বাইরে দুই দেশের সম্পর্ক। সে রাজনৈতিকই হোক বা হৃদ্যতার। তবে শনিবার সব সম্পর্কই থাকবে মাঠের বাইরে। দুই দেশের পাখির চোখই যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফি, তখন বন্ধুত্ব পেরিয়ে শত্রুতা যে অগ্রাধিকার পাবে, এ কথা সহজেই বলে দেওয়া যায়।
দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক স্বাধীনতার আগে থেকেই। মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধী ‘মহাত্মা’ হওয়ার আগেই পাড়ি দিয়েছিলেন সে দেশে। দীর্ঘ দিন ওকালতি করেছেন সে দেশে। ভারতের বাসিন্দা হয়ে ট্রেনের প্রথম শ্রেণির কামরায় ওঠার অপরাধে ১৮৯৩ সালে এক জুন মাসের রাতে তাঁকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল পিটারমারিৎজ়বার্গ স্টেশনে। বর্ণবিদ্বেষের সঙ্গে সেই প্রথম পরিচয় মহাত্মা গান্ধীর। পরে তাঁর থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে দেশে বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা।
বর্ণবিদ্বেষের কারণে নির্বাসিত দক্ষিণ আফ্রিকা ফিরে আসার পর যে দেশ প্রথম তাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলেছিল, সেটা ভারতই। ইডেন গার্ডেন্সের সেই টেস্ট এখনও অনেকের চোখে ভাসে। তার পর যত দিন গিয়েছে, সেই সম্পর্কের বাঁধন আরও মজবুত হয়েছে। এখন দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় পরিচিত ‘গান্ধী-ম্যান্ডেলা সিরিজ়’ নামে।
১৯৭৫ থেকে এক দিনের বিশ্বকাপ এবং ২০০৭ থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনও প্রতিযোগিতার ফাইনালেই উঠতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। দৌড় শেষ হয়েছে সেমিফাইনালে গিয়েই। দক্ষিণ আফ্রিকার বহু প্রতিভাবান দল সাড়া জাগিয়েও মুখ থুবড়ে পড়েছে। ‘চোকার্স’ তকমা বহু দিন আগে থেকেই তাঁদের গায়ে লেগে। সেই তকমা মোছার সুযোগ এ বার এসেছে কুইন্টন ডি’ককদের কাছে।
অন্য দিকে, ভারতীয় দলের কাছেও এই ফাইনাল তাৎপর্যপূর্ণ। আরও বিশেষ করে, বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মার কাছে। যদি ট্রফি জিততে পারেন, তা হলে বর্ণময় ক্রিকেটজীবনে আরও একটি পালক যোগ করবেন তাঁরা। ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা দুই তারকা হয়েও একসঙ্গে কোনও বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। শনিবার তাঁদের হাতে ট্রফি উঠলে, হয়তো এই ফরম্যাটে এটাই দু’জনের শেষ ম্যাচ হয়ে থাকতে পারে। দু’বছর পর দেশের মাটিতেও তাঁরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবেন, এমন আশা কেউই করছেন না।
অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের মতো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পোড়খাওয়া দল ছিটকে গিয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকাকে হালকা ভাবে কোনও মতেই নিতে চাইবেন না রোহিতেরা। এই দক্ষিণ আফ্রিকা দল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নতুন ‘পাওয়ারহাউস’। দলের প্রায় সব ক্রিকেটারই বিভিন্ন দেশের টি-টোয়েন্টি লিগে, বিশেষ করে আইপিএলে নিয়মিত খেলেন। টি-টোয়েন্টিতে এই সাফল্যের জন্যই তারাও ভারতের মতো অপরাজিত হয়ে ফাইনালে উঠেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় সব ক্রিকেটারই আইপিএলে খেলার সুবাদে তাঁদের খেলা হাতের তালুর মতো চেনা ভারতীয়দের। এডেন মার্করাম, হেনরিখ ক্লাসেনদের কী ভাবে আউট করতে হবে সেটা যশপ্রীত বুমরারা জানেন। আবার অনরিখ নোখিয়া, কাগিসো রাবাডাদের বোলিংকে পিটিয়ে রান তোলার প্রক্রিয়াও জানা রোহিতদের। অসুবিধা হল, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারেরাও ভারতীয়দের শক্তি-দুর্বলতা সম্পর্ক সম্যক অবহিত।
কোন দল কেমন খেলবে, তার উপর নির্ভর করছে মাঠের পরিবেশও। পিচ কেমন থাকবে, বৃষ্টি হবে কি না— এ সবের উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। তবে ভারতীয়েরা যে কোনও ভাবেই বিনা যুদ্ধে জমি ছেড়ে দেবেন না, এটা স্পষ্ট হয়েই গিয়েছে। প্রাক্তন এক বিশ্বকাপজয়ী অবশ্য বলেই দিয়েছেন, “বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত হোঁচট খায় ঠিকই। কিন্তু এই দক্ষিণ আফ্রিকা দল ভারতকে সমস্যায় ফেলতে পারবে বলে মনে হয় না। ভারত বিশ্বকাপের সেরা দল এবং ওরাই ট্রফি জিতবে।”
ট্রফি কার হাতে উঠবে, তা শনিবার (বা রবিবার) বোঝা যাবে। কিন্তু সমর্থকদের প্রার্থনা একটাই, ম্যাচ যেন একপেশে না হয়। উপভোগ্য লড়াই দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy