Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
India vs USA

আরশদীপের বলে জয়ের হ্যাটট্রিক, ব্যাটিংয়ে বিরাট চিন্তা নিয়েই বিশ্বকাপের সুপার ৮-এ গেল ভারত

বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের তৃতীয় ম্যাচে আমেরিকাকে হারিয়ে জয়ের হ্যাটট্রিক করল ভারত। নিশ্চিত হয়ে গেল সুপার এইটের টিকিটও। তবে দলের ব্যাটিং, বিশেষত বিরাট কোহলির ফর্ম চিন্তায় রাখবে ভারতকে।

cricket

সূর্যের সঙ্গে উল্লাস আরশদীপের। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২৪ ২৩:৩১
Share: Save:

যা প্রত্যাশা ছিল সেটাই হল। বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের তৃতীয় ম্যাচে আমেরিকাকে হারিয়ে জয়ের হ্যাটট্রিক করল ভারত। নিশ্চিত হয়ে গেল সুপার এইটের টিকিটও। তবে বুধবার রোহিত শর্মাদের জয় সহজে এল না। পরিশ্রম করে, ঘাম ঝরিয়ে জয় আদায় করতে হল।

আমেরিকা যে ক্রিকেটবিশ্বে দুধের শিশু থাকতে আর রাজি নয়, তা প্রমাণ করে দিল। পাকিস্তানকে হারানো যদি প্রথম অঘটন হয়, তা হলে ভারতের সঙ্গে টক্কর দেওয়া তার থেকে খুব দূরে থাকবে না। তবে আপাত-সহজ ম্যাচেও চিন্তা থেকে গেল ভারতের। বিরাট কোহলি এই ম্যাচেও রান পেলেন না। ব্যর্থ হলেন রোহিত শর্মাও। তবে শিবম দুবে এবং সূর্যকুমার যাদবের ফর্মে ফেরা কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে দলকে। বলে আরশদীপ সিংহের চার উইকেটের পর ব্যাট হাতে অর্ধশতরান সূর্যের। ভারত জিতল সাত উইকেটে।

আমেরিকার খেলা দেখতেও এ দিন নাসাউ কাউন্টি পুরো ভরেনি। ছিলেন মূলত ভারতীয় সমর্থকেরাই। দুই শিখকে আমেরিকার পতাকা নিয়ে ম্যাচের মাঝে উল্লাস করতে দেখা গেল। তাঁরা অবশ্য আমেরিকা দলের হরমিত বা জসদীপ সিংহের পরিবারের সদস্য হতে পারেন। এ ছাড়া সাধারণ আমেরিকাবাসীর মধ্যে খুব একটা উৎসাহ দেখা গেল না এই ম্যাচেও। গোটা ম্যাচে নাচগান করে নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়াম জমজমাট করে রাখলেন ভারতীয় সমর্থকেরাই। নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়ামে এটাই বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ ছিল। এর পর স্টেডিয়াম ভেঙে ফেলে এই মাঠকে আগের রূপে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা।

টসে জিতে একদম ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। আগে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন আমেরিকাকে। সেই সিদ্ধান্ত কেন ঠিক, তার প্রমাণ মিলল প্রথম ওভারেই। আরশদীপ সিংহের সুইং বল লাগল সায়ন জাহাঙ্গিরের পায়ে। অধিনায়ক মোনাঙ্ক পটেলের জায়গায় নেমেছিলেন সায়ন। প্রথম বলেই ফেরেন। ডিআরএস নিলেও লাভ হয়নি।

তৃতীয় বলে আবার এলবিডব্লিউয়ের আবেদন। এ বার আন্দ্রিয়েস গাউসের পায়ে লাগে। কিন্তু উইকেটের সামান্য উপরে ছিল বল। তাই রোহিতও রিভিউ নেননি। ওভারের শেষ বলে আবার সাফল্য। আরশদীপের বলে সামান্য বাউন্স ছিল। পুল করতে গিয়ে ঠিকঠাক লাগেনি গাউসের ব্যাটে। মিড-অফ থেকে কিছুটা দৌড়ে এসে সহজ ক্যাচ ধরেন হার্দিক পাণ্ড্য।

এর পর কয়েক ওভারের জন্য টেস্ট খেলার মেজাজে চলে যায় আমেরিকা। অ্যারন জোন্স এবং স্টিভেন টেলর ধরে খেলছিলেন। অতিরিক্ত সাবধানতা নিয়ে ব্যাট করতে দেখা গেল দু’জনকেই। চতুর্থ ওভারের শেষ বলে সিরাজকে ছয় মারেন জোন্স। তার পরে আবার মন্থর ব্যাটিং। মাঝে বুমরার ওভারে একটি ওয়াইডে চার ছাড়া কিছু হয়নি।

সপ্তম ওভারে জুটি ভাঙেন হার্দিক। তাঁর বলে ভালই বাউন্স ছিল। পুল করতে গিয়েছিলেন আমেরিকার সেরা ব্যাটার জোন্স। ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ উঠে যায় লং লেগে। সহজেই তালুবন্দি করেন সিরাজ।

নীতীশ কুমার এবং স্টিভেন টেলরের সৌজন্যে আমেরিকার রানের গতি এর পর কিছুটা বাড়ে। তবে জুটি ভাঙেন অক্ষর। ১২তম ওভারে তিনি ফিরিয়ে দেন টেলরকে। তবে থামার পাত্র ছিলেন না নীতীশ। পরের ওভারে হার্দিককে একটি ছয় এবং একটি চার মারেন। আরশদীপের দ্বিতীয় স্পেলে ফিরতে হয় তাঁকে। আমেরিকার বাকি ব্যাটারেরা অবশ্য বেশি দূর এগোতে পারেননি। কোনও মতে একশোর গণ্ডি পেরোন তাঁরা।

নিউ ইয়র্কের পিচে ১১১ রান মোটেও খারাপ নয়। অন্তত আগের দু’টি ম্যাচে সে রকমই বোঝা গিয়েছে। ভারতের শুরুটাও হয় বিপজ্জনক ভাবেই। সৌরভ নেত্রভালকরের প্রথম বলে এক রান নেন রোহিত। দ্বিতীয় বলেই আউট হন কোহলি। ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটকিপারের হাতে বল জমা পড়ে। আইপিএলের পর থেকে একেবারেই ফর্মে নেই কোহলি। বিশ্বকাপের তিন ইনিংসে তাঁর রান যথাক্রমে ১, ৪ এবং ০। সুপার এইটে ভারত উঠলেও কোহলির খারাপ ফর্ম ভারতকে চিন্তায় রাখতে বাধ্য।

রোহিতও বেশি ক্ষণ টিকতে পারেননি। সৌরভেরই দ্বিতীয় ওভারে মিড অনেক দিকে শট মারতে যান। ব্যাটের কানায় লেগে উঠে যাওয়া বলে সহজে ক্যাচ ধরেন হরমিত। পর পর দু’টি উইকেট হারিয়ে ভারত বেশ চাপে পড়েছিল। সেই চাপ থেকে দলকে বার করেন সূর্যকুমার যাদব এবং ঋষভ পন্থ। বিশ্বকাপের প্রথম দু’টি ম্যাচে রান পাওয়া পন্থ এ দিনও বল বুঝে শট খেলে দলের রান এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন।

কিন্তু আলি খানের বলটি বুঝতে পারেননি। বল পড়ে অনেকটা নিচু হয়ে যায়। পন্থ ভাল করে ব্যাট নামানোর আগে তা স্টাম্প ভেঙে দেয়। ধারাভাষ্যকারেরাও বলেন, এ ধরনের বলের ক্ষেত্রে কিছু করার থাকে না। নিউ ইয়র্কের পিচের শিকার হন পন্থ। অসমান বাউন্স খেলতে পারেননি।

৩৯ রানে ৩ উইকেট হারানো ভারতের জয়ের জন্য দরকার ছিল একটা লম্বা জুটি। সেই জুটি এল সূর্যকুমার যাদব এবং শিবম দুবের সৌজন্যে। বিশ্বকাপে এর আগে দু’জনকে নিয়েই ভরসা পাওয়া যায়নি। বিশেষত দুবের ফর্ম নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছিল। রিঙ্কু সিংহকে বাদ দিয়ে তাঁকে নেওয়া হয়েছিল। দুবের ফর্ম দেখে অনেকেই রিঙ্কুকে ফেরানোর দাবি তুলেছিলেন। আমেরিকার বিরুদ্ধে দুবের ধৈর্যশীল ইনিংস দলকে কিছুটা হলেও ভরসা দেবে। ধীরগতিতে খেলেছেন বলে সমালোচিত হওয়ার কথাও নয়। কারণ এই পিচে দ্রুত রান তুলতে যাওয়া মূর্খামি।

শেষের দিকে চালিয়ে খেলে নিজের অর্ধশতরানও পূরণ করে নেন সূর্য। নাসাউ কাউন্টির মাঠে এটিই সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়। ভারত সুপার এইটে গেল ঠিকই। কিন্তু চিন্তা থেকেই গেল ব্যাটিং নিয়ে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy