দ্বৈরথ: বিরাট-ফিঞ্চদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এ বছরে দেখা হচ্ছে না। ফাইল চিত্র
নানা টালবাহানার পরে শেষ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এ বছরের মতো স্থগিতই করে দিতে বাধ্য হল আইসিসি। এর আগে একাধিক বৈঠক করেও সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি করছিল নিয়ামক সংস্থা।
কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, এক দিকে আইসিসির এ হেন সিদ্ধান্তে যেমন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড লাভবান হবে, তেমনই আবার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়-জয় শাহদের লড়াই এখানেই শেষ হচ্ছে না। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এ বছরে না হওয়ায় আইপিএল আয়োজনের ভাবনা আরও গতি পাবে। তেমনই ঠিক ছিল, পর-পর দু’বছরে দু’টি কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপ হবে। এ বারে অস্ট্রেলিয়ায়, পরের বছর ভারতে। আবার ২০২৩ সালে পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ হওয়ার কথা ভারতে। দু’টো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কোনটা কারা করবে, সেই সিদ্ধান্ত এ দিন চূড়ান্ত করা হয়নি।
ভারতীয় বোর্ড চায়, পরের বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ভারতেই হোক, ২০২২-এর প্রতিযোগিতা হোক অস্ট্রেলিয়ায়। আবার অস্ট্রেলিয়াও আর্জি জানিয়েছে, সামনের বছরের বিশ্বকাপ হোক তাদের দেশে, পরেরটা করুক ভারত। এ নিয়ে আরও এক রাউন্ড লড়াই সৌরভদের চালিয়ে যেতে হবে। তাঁরা চান না, পর-পর দু’বছর দু’টি বিশ্বকাপ হোক ভারতে। তা হলে বাণিজ্য মহলের আগ্রহে টান পড়তে পারে। জানা গিয়েছে, নতুন আইসিসি প্রধান এবং তাঁর অধীনে নতুন কমিটি এসে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
সামনের বছরের ফেব্রুয়ারিতে মেয়েদের বিশ্বকাপ রয়েছে নিউজ়িল্যান্ডে। তা এখনও স্থগিত করা হয়নি। ২০২৩-এ ভারতে অনুষ্ঠেয় পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ বছরের শুরুর দিক থেকে শেষে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ২০১১-তে শেষ বার দেশের মাটিতে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারত। ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য সুখবর হচ্ছে, আইসিসি নিশ্চিত করে দিয়েছে, ২০২১ এবং ২০২২-এর অক্টোবর-নভেম্বরে পর-পর দু’বছর দু’টি কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপ হবে। আবার ২০২৩-এ ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ। অর্থাৎ, তিন বছরে তিনটি বিশ্বকাপ। যার দু’টি দেখা
যাবে ভারতে।
সোমবার আইসিসি বোর্ডের সভায় সিদ্ধান্ত নিতেই হয়, এ বছরে আর বিশ্বকাপ আয়োজন করা সম্ভব নয়। অস্ট্রেলিয়ায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছিল। সব মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত তিন হাজারের সামান্য বেশি করোনা ‘পজিটিভ’ হয়েছে সেখানে। অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় যা অনেক কম। কিন্তু মেলবোর্ন— যেখানে বরাবর বিশ্বকাপের ফাইনাল এবং বড় বড় ম্যাচ হয়েছে, সেখানে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলসে করোনা বাড়ছে। সংক্রমণের দ্বিতীয় স্রোত আসছে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত অস্ট্রেলীয় সরকার। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বকাপের মতো মহাযজ্ঞ আয়োজনের ব্যাপারে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড এবং সে দেশের সরকারেরও খুব সায় নেই।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১৬টি দল খেলবে। এক-একটি দলে ১৬ জন করে ক্রিকেটার এবং আরও অন্তত ১০ জন করে কোচ-সহকারী কোচেরা থাকবেন। তার মানে ১৬টি দল মিলিয়ে কমপক্ষে ৪১৬ জনের উপস্থিতি। এখনও আন্তর্জাতিক ভ্রমণের দরজা খোলেনি অনেক দেশে। অক্টোবরে খুলবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। তার মধ্যে এত লোকের আগমন, দেড় মাস ধরে তাঁদের রাখা এবং সংক্রমণ না ছড়ানো নিশ্চিত করা চাট্টিখানি কথা নয়। অস্ট্রেলিয়া যে এত বড় ঝুঁকি নেওয়ার ব্যাপারে দ্বিধায়, সেই পূর্বাভাস আনন্দবাজারে আগেই ছিল।
আইসিসি-তে কেউ কেউ তবু বলে যাচ্ছিলেন, মেলবোর্ন বাদ দিয়ে কি বিশ্বকাপ করা সম্ভব নয়? অস্ট্রেলিয়ায় না হলে কি নিউজ়িল্যান্ডে বিশ্বকাপ হতে পারে? এ সব বিকল্প খুঁজে দেখার কারণ, বিশ্বকাপ বাতিল হওয়া মানে বিরাট আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে আইসিসি। যেমন ভারতীয় বোর্ড বিরাট ধাক্কা খাবে আইপিএল বাতিল হলে। কিন্তু করোনা নিয়ে পরিস্থিতিতে এ বছরের মতো বিশ্বকাপ স্থগিত রাখা ছাড়া উপায়ও ছিল না।
অস্ট্রেলিয়াও চাইছে, বিশ্বকাপ পরেই করা হোক। তাদের দেশে ক্রিকেটের বড় প্রতিযোগিতা হলে একটা বড় লভ্যাংশ আসে ট্যুরিজ্ম থেকে। সেই বরাত বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে পাওয়া সম্ভব নয়। এখন খেলা হলে ফাঁকা মাঠে বিশ্বকাপ করতে হবে, বড় বড় স্টেডিয়ামে টিকিট বিক্রি হবে না, সেটাও আর্থিক ক্ষতির বোঝা বাড়াবে। বরং স্টিভ স্মিথের দেশের বোর্ডও বুঝতে পারছে, এক বছর বা দু’বছর পরে বিশ্বকাপ আয়োজন হলে ফের লাভের মুখ দেখা যাবে। তাই সকলের সম্মতিতে আপাতত বিশ্বকাপ ধারাবাহিকের মধুরেণ সমাপয়েৎ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy