Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

স্বপ্নের অর্জুন পুরস্কার নিয়ে ট্যাক্সি ধরে ফিরলেন স্বপ্না

বিমানবন্দরে কোনও ফুল, মালা, উচ্ছ্বাস ছিল না সোনার মেয়ের জন্য। হয়নি শোভাযাত্রাও।

অনাড়ম্বর: ‘অর্জুন’ নিয়ে ট্যাক্সিতে ফিরলেন স্বপ্না। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

অনাড়ম্বর: ‘অর্জুন’ নিয়ে ট্যাক্সিতে ফিরলেন স্বপ্না। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৯ ০৪:৫১
Share: Save:

অর্জুন পুরস্কার নিয়ে দিল্লি থেকে স্বপ্না বর্মণ সাই হোস্টেলে ফিরলেন ভাড়ার হলুদ ট্যাক্সিতে চেপে! নীরবে, নিঃশব্দে। রাষ্ট্রপতি ভবনে ছাত্রীর গৌরবের দিনে সাক্ষী ছিলেন কোচ সুভাষ সরকার। তিনিই নামিয়ে দিয়ে গেলেন সাইতে।

বিমানবন্দরে কোনও ফুল, মালা, উচ্ছ্বাস ছিল না সোনার মেয়ের জন্য। হয়নি শোভাযাত্রাও। রাজ্য অ্যাথলেটিক্স সংস্থার কর্তারা তো বটেই, সাইয়ের কোনও প্রতিনিধিকেও দেখা যাযনি সেখানে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও ছিলেন না কেউ।

শুক্রবার সকালে আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস যখন সাইয়ের মাঠে ডার্বির প্রস্তুতিতে ‘ক্লোজ ডোর’ অনুশীলন করছিলেন, তখন নিজের হস্টেলের ঘরে চলে যান স্বপ্না। ভোরে উঠে ফ্লাইট ধরেছিলেন বলে ঘরে ঢুকেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। বিকেলে নেমে পড়েন অনুশীলনে। অন্য আর পাঁচটা দিনের মতোই। কেউ তাঁকে অভিনন্দন জানাতে বিমানবন্দরে না যাওয়াতেও অবাক নন জলপাইগুড়ির মেয়ে। বলছিলেন, ‘‘ওঁরা হয়তো জানতেন না আমি ফিরছি। এটা নিয়ে কোনও বিতর্ক হোক চাই না। আর ফুল-মালা তো অনেক পেয়েছি। আর কি দরকার? অর্জুন পুরস্কারটা পেয়েছি, এটাই তো আমার ভাগ্য। ক’জন পায় এই সম্মান। ঘরে ঠাকুর যেখানে থাকে, সেখানে রেখে দিয়েছি পুরস্কারটা।’’ কিন্তু তা বলে ভাড়ার ট্যাক্সি চড়ে ফিরতে হল? ‘‘প্রতিবারই পদক জিতে ট্যাক্সি করেই ফিরি। ওটা নতুন কিছু নয়। গাড়ি একটা কিনতেই পারি। কিন্তু দুর্ঘটনার ভয়ে কিনিনি। একটা স্কুটি কিনব ভাবছি।’’

গত বছর তাঁর নাম থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত অর্জুন হতে পারেননি। হিমা দাশ পেয়েছিলেন সম্মান। তাতে অবশ্য অখুশি নন জার্কাতা এশিয়াডে সোনা জয়ী মেয়ে। উচ্ছ্বসিত স্বপ্না বলছিলেন, ‘‘জানেন কাকতালীয় ভাবে একটা দারুণ ঘটনা ঘটে গিয়েছে। আমি জার্কাতায় সোনা জিতেছিলাম ২০১৮ সালের ২৯ অগস্ট। আর রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে অর্জুন পুরস্কার যেদিন নিলাম, তারিখটা ২০১৯ সালের ২৯ অগস্ট। ক্রীড়াদিবস ছিল দুটো দিনই।’’ সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর ‘ফ্রিক ইন্ডিয়া মুভমেন্ট’ অনুষ্ঠানেও হাজির ছিলেন। ‘‘জানেন, অর্জুনটা নেওয়ার সময় কেমন যেন মনটা করছিল। জলপাইগুড়ির গ্রাম থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন, ভাগ্যে না থাকলে এটা হয়,’’ আবেগে ভাসেন স্বপ্না। যোগ করেন, ‘‘জার্কাতার সোনা ছিল কাঙ্ক্ষিত আর অর্জুনটা স্বপ্ন।’’

এখনও চোট সারিয়ে পুরো অনুশীলনে নামেননি স্বপ্না। কোচ সুভাষ সরকার তাঁকে রিহ্যাব করিয়ে সুস্থ করে নামাবেন বলে ঠিক করেছেন। স্বপ্না বলছিলেন, ‘‘সামনের বছরের আগে কোনও প্রতিযোগিতায় নামছি না। অনেক সময় আছে প্রস্তুতির। দশ-পনেরো ভাগ চোট তো সব অ্যাথলিটেরই থাকে।’’ পরের লক্ষ্য কি? স্বপ্না বলে দেন, ‘‘টোকিয়ো অলিম্পিক্সে যোগ্যতামান পাওয়া। সে জন্য ২০২০ তে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নামব। আরও একটা লক্ষ্য আছে। ২০২২ এশিয়াডে হেপ্টাথলনে ফের সোনা জেতা। পরপর দু’বার এশিয়াডের সোনা মনে হয় আমাদের এখানে কারও নেই। সেটাই ছুঁতে চাই।’’

জাতীয় শিবিরে অন্য অ্যাথলিটরা গেলেও স্বপ্না যাননি। দু’পায়ে ছয় আঙুল নিয়ে বিশেষ জুতো পরে প্রস্তুতি নিতে চান সুভাষবাবুর কাছে। বলছিলেন, ‘‘স্যর আমাকে তৈরি করেছেন। তিনি আমাকে সব চেয়ে ভাল বোঝেন। সে জন্যই হয়তো অস্ত্রোপচার করাতে হয়নি। রি-হ্যাব করে কবে পুরো অনুশীলন শুরু করব, সেটা স্যরই ভাল বলতে পারবেন।’’

সুভাষবাবু অবশ্য খোঁজ করতে শুরু করেছেন, কোন দেশে কোন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা নতুন বছরে হবে। যেখানে নামলে টোকিয়ো অলিম্পিক্সে যোগ্যতা পাওয়া সম্ভব।

অন্য বিষয়গুলি:

Swapna Barman Athletics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy