প্রত্যয়ী: এটিকে ম্যাচেও মাথা উঁচু রাখতে চান সুব্রত। ফাইল চিত্র
ইগর স্তিমাচ তাঁকে ফের ভারতীয় দলে ফেরাবেন কি না, সেটা নিয়ে ভাবছেন না। তবে রবিবার রাতে ম্যাচের পরে সুনীল ছেত্রী যখন তাঁকে জড়িয়ে ধরে বলে গিয়েছেন, ‘‘দারুণ খেলেছ। চালিয়ে যাও ভাইয়া। পরের ম্যাচেও এ রকম পারফরম্যান্স দেখতে চাই,’’ সেই স্বীকৃতি সুব্রত পালকে অনেক বেশি তৃপ্তি দিয়েছে।
গত বারের আইএসএল চ্যাম্পিয়ন সুনীলের বেঙ্গালুরু এফসি আটকে গিয়েছে যাঁর দাপটে, সেই সুব্রত সোমবার জামশেদপুর থেকে ফোনে বলে দিলেন, ‘‘দু’বছর আগে আমাকে যখন জাতীয় দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, সে বার আমি আইএসএলের সেরা গোলকিপার হয়েছিলাম। আমাকে নেওয়া হবে কি না, সেটা ঠিক করবেন কোচই। যে সিদ্ধান্তই নিন, তাকে আমি সম্মান জানাব।’’ ক্ষোভ আছে, অভিমানও রয়েছে। কিন্তু সোদপুরের ‘মিষ্টু’ বরাবরই মাঠে যতটা আক্রমণাত্মক, কথা বলার সময় ততটাই সংযত। টানা তিন ম্যাচ তাঁর দল জামশেদপুর এফসি অপরাজিত। ২৪ নভেম্বর পঁয়ত্রিশে পা দিতে-যাওয়া সুব্রতও যেন পুরনো ফর্ম ফিরে পেয়েছেন। অসাধারণ সব সেভ করছেন সুনীলের এক সময়ের সতীর্থ।
স্টিভন কনস্ট্যান্টাইন জমানায় বাদ পড়েছিলেন তিনি। ডোপিংয়ের অভিযোগ ওঠার পরে কলঙ্কমুক্ত হয়ে এসেও বাদ। সেই অভিমান থেকেই কি ভাল খেলার রসদ পেয়েছেন? প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই এক সময়ের জাতীয় দলের ‘স্পাইডারম্যান’ বলে দিলেন, ‘‘কারও কাছে কিছু প্রমাণ করার নেই আমার। প্রতিশোধ নেওয়ার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামি না। নিজের সেরাটা সব সময় দেওয়ার চেষ্টা করি। বারবার বলছি, আমি বিশ্বাস করি ভাল খেলে যাও, ফলের আশা করার দরকার নেই।’’ হেসে ফেলে জামশেদপুরের শেষ ডিফেন্ডার আরও বললেন, ‘‘কোচও নিশ্চয়ই খেলা দেখছেন। তাঁর যদি মনে হয় আমি যোগ্য, তা হলে নেবেন। আমি ফলের আশা নিয়ে খেলি না। একশোর বদলে একশো দশ শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করি। কখনও সন্তুষ্ট হই না।’’
বেঙ্গালুরুকে রুখে দেওয়ার পরেই জামশেদপুরের ম্যাচ রয়েছে এটিকের সঙ্গে। শনিবারের যে ম্যাচকে বলা হচ্ছে সুব্রত পাল বনাম ডেভিড উইলিয়ামস-রয় কৃষ্ণ জুটির দ্বৈরথ। এটা নিশ্চয়ই আপনাকে তৃপ্তি দিচ্ছে? সুব্রত এ ক্ষেত্রে বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমার মতে, এটিকে এ বারের আইএসএলের সেরা দল। ওদের আক্রমণভাগ এবং মাঝমাঠ খুব ভাল। তবে ম্যাচ হবে জামশেদপুরের সঙ্গে এটিকের। আমার একার সঙ্গে নয়। চেষ্টা করব, গোল না খাওয়ার। সব ম্যাচেই যা ভেবে মাঠে নামি।’’
পঁয়ত্রিশেও তাঁর সহজাত ক্ষিপ্রতা, শরীর ছুড়ে দিয়ে গোল বাঁচানো দেখে বিস্মিত ফুটবলপ্রেমীরা। সুব্রত নিজে অবশ্য তাকে বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ। বললেন, ‘‘সুনীল আর আমি একসঙ্গে জাতীয় দলে খেলা শুরু করি। ওরও তো বয়স ৩৫ বছর। এখনও কীভাবে নিজেকে ধরে রেখেছে! সুনীলকে দেখে সবার শেখা উচিত। আদর্শ করা উচিত। আর বয়স? ওটা একটা সংখ্যা মাত্র। আমার আদর্শ গোলকিপার জানলুইজি বুফনের বয়স ৪২ বছর। কী খেলছে জুভেন্টাসের হয়ে! অলিভার কান, ফান ডার সারও অনেক বয়স পর্যন্ত খেলেছেন।’’ যোগ করেন, ‘‘যত দিন ফর্মে থাকব, তত দিনই খেলব। অবসর নেওয়ার দরকার মনে করলে সরে দাঁড়াব।’’ মনে করিয়ে দেন, ‘‘২০১৭ সালের শেষে বাদ পড়ার পরে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, আমি আর পারব না। কিন্তু খেলে চলেছি। কেমন খেলছি আপনারা বলবেন।’’ অভিমানী সুব্রত পাল বুকে অনেক কষ্ট চেপে নিজেকে প্রমাণ করতে মরিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy