Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Subrata Bhattacharya

জিতলাম আমরা, নায়ক তবু তিনিই

ঋষি কপূরের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পরে মনটা এমনিতেই খারাপ ছিল। কিন্তু কল্পনাও করতে পারিনি সন্ধে নামার আগে আমার অতি আপন এক জনকে হারাব।

চুনী গোস্বামী। ফাইল চিত্র।

চুনী গোস্বামী। ফাইল চিত্র।

সুব্রত ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২০ ০৪:১৩
Share: Save:

মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি। ২০ মার্চ প্রদীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় চলে গেলেন। ৩০ এপ্রিল হারালাম ভারতীয় ফুটবলের আর এক মহীরুহ চুনী গোস্বামীকে।

বুধবার ইরফান খান। বৃহস্পতিবার সকালে আর এক বলিউড তারকা ঋষি কপূরের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পরে মনটা এমনিতেই খারাপ ছিল। কিন্তু কল্পনাও করতে পারিনি সন্ধে নামার আগে আমার অতি আপন এক জনকে হারাব।

চুনীদা আমার কাছে ঈশ্বর। আমি ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছি ওঁর জন্যই। আমার বয়স তখন ২১ অথবা ২২। শ্যামনগরে থাকতাম। বিএনআর-এ চাকরি করি ও খেলি। ইস্টবেঙ্গল আমাকে সই করার প্রস্তাব দিল। আমি রাজিও হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সে দিন শুক্রবার থাকায় আমি বলেছিলাম, সোমবার সই করব। ওই দিনই ধীরেন দে আমাকে ওঁর অফিসে ডেকে পাঠিয়ে মোহনবাগানে খেলার প্রস্তাব দিলেন। আমি খুশিই হলাম। কারণ, আমি মোহনবাগানেরই সমর্থক ছিলাম। পরের দিনটা ছিল ১৯ ফেব্রুয়ারি। ১৯৭৪ সাল। শনিবার। আমাদের তখন বেড়ার ঘর। সকাল এগারোটা নাগাদ সোজা আমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়লেন চুনীদা। সঙ্গে গজুদা। ওঁকে দেখে বিস্ময়ে আমার বাবা তো চেয়ার থেকে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলেন। কোনও মতে নিজেকে সামলালেন। আমারও একই রকম অবস্থা হয়েছিল। মোহনবাগান মাঠে যাঁর পায়ের জাদু দেখতে যেতাম, সেই চুনী গোস্বামী কি না এসেছেন আমাকে নেওয়ার জন্য!

আরও পড়ুন: চুনীর জন্যই খেলতে এসেছিলাম কলকাতায়

বাড়িতে ঢুকেই চুনীদা বাবাকে বললেন, মোহনবাগানে এ বার সুব্রতকে চাই। আমি কিছু বলার আগেই বাবার নির্দেশ কানে এল, ‘‘চুনীবাবু যখন এসেছেন, তখন তোমার কথা বলার কোনও অবকাশ নেই। উনি তোমাকে যেখানে নিয়ে যাবেন, সেখানেই যাবে।’’ কিছুক্ষণ পরেই চুনীদার গাড়িতে করেই সরাসরি পৌঁছলাম ধীরেনদার অফিসে। সেখান থেকে গজুদার বাড়ি। দু’দিন ওখানেই কার্যত আমাকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। সোমবার সই করার পরে মুক্তি পেয়েছিলাম।

মোহনবাগানে খেলার সুযোগ পাওয়া শুধু নয়, আমার চাকরির ব্যবস্থাও চুনীদা করে দিয়েছিলেন। প্রথমে কাস্টমস। তার পরে স্টেট ব্যাঙ্ক। জাতীয় দলে আমার অভিষেকের নেপথ্যেও চুনীদা। সারাক্ষণ আমাকে সন্তানের মতো আগলে রাখতেন। দুঃসময়ে আলাদা করে ডেকে উদ্বুদ্ধ করতেন। যদিও সেই সময় চুনীদার সঙ্গে কথা বলার মতো সাহস আমার ছিল না। ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস— সব খেলাতেই দুর্দান্ত ছিলেন। তার উপরে অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। আমরা বলতাম, ভারতীয় ফুটবলে চুনীদা হচ্ছেন উত্তমকুমার। কখনও রাগ করতে দেখিনি চুনীদাকে। কোনও কিছু পছন্দ না হলে নিঃশব্দে নিজেকে সরিয়ে নিতেন।

ফুটবলার চুনীদা কেমন ছিলেন, তা ব্যাখ্যা করার যোগ্যতা আমার নেই। বল যেন ছিল চুনীদার পোষা পাখি। পায়ে লেগে থাকত। এই কারণেই চুনীদার এত ভক্ত। ওঁর জনপ্রিয়তা দেখে আমাদের তো রীতিমতো হিংসে হত। একটা ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে। দিল্লিতে ডুরান্ড কাপ ফাইনাল। আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। দলের কর্তা হিসেবে চুনীদা গিয়েছেন। কিন্তু ম্যাচের পরে দর্শকেরা চুনীদাকে কাঁধে তুলে নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে দিলেন। অথচ ম্যাচটা খেললাম আমরা! আমাদের যেন কোনও গুরুত্বই নেই। কেরলেও এক ছবি। চুনীদাকে একবার দেখার জন্য পাগল হয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। এক জন ফুটবলারের জীবনে এর চেয়ে সেরা প্রাপ্তি আর কী হতে পারে। ধন্য চুনীদা।

আরও পড়ুন: গ্ল্যামারটাও নিশ্চয় সঙ্গে নিয়ে গেলেন, চুনীর স্মৃতিচারণায় ময়দানের অনুজেরা

অন্য বিষয়গুলি:

Subrata Bhattacharya Chuni Goswami Football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE