হুঙ্কার: দলের পক্ষে প্রথম গোলের পরে উচ্ছ্বাস রয় কৃষ্ণের। রবিবার নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড ম্যাচে। আইএসএল
আইএসএল
এটিকে-মোহনবাগান ২ নর্থ ইস্ট ০
বছরের শুরুতেই নবম রাউন্ডের পরে ২০ পয়েন্ট নিয়ে এটিকে-মোহনবাগানের ২-০ জয়ের ম্যাচটা দেখতে বসে আমার বার বার মনে পড়ছিল, সাতাত্তর সালে মোহনবাগানের সেই ত্রিমুকুট জয়ী সোনার দলটার কথা।
সেবার আমাদের আক্রমণ ভাগ এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, ভারতের সব দলই আমাদের শ্যাম থাপা, মহম্মদ হাবিবদের আটকাতে গিয়ে একটা কাজ প্রায় রোজই করত। তা হল, দলের ১০ জন ফুটবলারকেই মাঝমাঠ এবং রক্ষণে দাঁড় করিয়ে বিপক্ষ আমাদের থেকে পয়েন্ট কাড়ার চেষ্টা করত।
আমাদের সেই ভারতসেরা সেই দলটার কোচ প্রয়াত প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সে সময় একটা কথা আমাকে বলতেন, ‘‘রক্ষণে তোমরা তালা-চাবি দিয়ে দাও। আক্রমণে আমার শ্যাম, হাবিবেরা গোলের গন্ধ পায়। ওরা গোল করবেই।’’
এই এটিকে-মোহনবাগান দলে রয় কৃষ্ণ হল সেই স্ট্রাইকার যে শ্যাম, হাবিবদাদের মতো ড্রিবল করতে না পারলেও ওদের মতো গোলের গন্ধ পায়। আর তা অনুসরণ করে দলের হয়ে কাজের কাজ গোলটা ঠিক করে আসে। যে রকম রবিবার ফতোরদার মাঠে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের পোক্ত রক্ষণের ফাঁক গলে ঠিক গোল করে এল।
সুদর্শন নর্থ ইস্ট কোচ জেরার নুসের নামের সঙ্গে কাসানোভা শব্দটি জড়িয়ে। কিন্তু এ দিন তার দল যে ফুটবলটা খেলল, তা মোটেও কাসানোভা সুলভ নয়। ওথেলো মার্কা রণনীতি মনে হল।
৪-৩-৩ ছকে নর্থ ইস্ট কোচ দল নামালেও মাঠে নেমে প্রথমার্ধে তা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল ৪-৫-১। সামনে একা ইদ্রিসা সিলাকে রেখে গুয়াহাটির দলটা সেই রক্ষণ ও মাঝমাঠে ভিড় বাড়িয়ে রক্ষণে দাঁত ফোটাতে দিচ্ছিল না রয়, ডেভিড উইলিয়ামসদের।
উল্টো দিকে, চতুর এটিকে-মোহনবাগান কোচ হাবাসের এ দিনের রণনীতি ছিল, অতিমারির কারণে কোনও দলই ভাল করে প্রাক-মরসুম করতে পারেনি। তাই অনেক ফুটবলারেরই ফিটনেসে ঘাটতি রয়েছে। তাই প্রথমার্ধ বিপক্ষের রণনীতি বিশ্লেষণ করে, দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়াও।
তাই ৪-৪-২ ছকে হাবাসও তাঁর নিজের মাঝমাঠে কার্ল ম্যাকহিউদের সঙ্গে বাঁ প্রান্তে রেখেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার ছেলে শেখ সাহিলকে। উদ্দেশ্যটা হল, রয়, ডেভিড ও এদু গার্সিয়া আক্রমণে যাবে। তখন বাঁ দিক থেকে ভিতরে ঢুকে এসে মাঝমাঠকে পোক্ত করে সাহিল। যাতে প্রতি-আক্রমণে নর্থ ইস্ট ভয়ঙ্কর হতে না পারে।
কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রথমার্ধে সবুজ-মেরুন শিবির সফল হয়নি। কারণ দুই প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ জোরদার না হওয়ায় মিডল করিডরে (মাঠের মাঝখানে) ভিড় বাড়িয়ে রেখেছিল খাসা কামারা, বেঞ্জামিন ল্যাম্বটেরা। এই সময়ে তাদের একমাত্র প্রয়াস ডান দিক থেকে এদু গার্সিয়ার ফ্রি-কিক থেকে কার্ল ম্যাকহিউয়ের হেড গোলের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া।
চেন্নাইয়িন ম্যাচে্র পরে আনন্দবাজারেই পড়েছি, হাবাস জোর দিয়েছিলেন সেট-পিস এবং দুই প্রান্ত ধরে আক্রমণ শানানোর। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে হাবাস সেই প্রান্ত ধরেই আক্রমণ শানাতেই পাঁচ মিনিটের মধ্যেই গোল পায় এটিকে-মোহনবাগান। ৫১ মিনিটে ডান দিক থেকে এদু হার্সিয়ার কর্নারে তিরি মাথা ছোয়ানোর বল দিক পাল্টে বাঁ দিকে চলে যাচ্ছিল। সেই বল লক্ষ করে কাঁধে বিপক্ষের ফুটবলার কামারাকে গতিতে পরাস্ত করে শরীর ছুড়ে গোলটা করে হাবাসের দলকে ১-০ এগিয়ে দেয় ওই কৃষ্ণ।
আর এই গোলটাই ব্লটিং কাগজের মতো নর্থ ইস্টের যাবতীয় লড়াইয়ের শক্তি শুষে নেয়। ফাঁক তৈরি হতে শুরু করে নর্থ ইস্ট রক্ষণে। সঙ্গে ভুলভ্রান্তি। ৫৭ মিনিটে ফের কর্নার এ বার সন্দেশ জিঙ্ঘনের প্রয়াস বিপন্মুক্ত করতে গিয়ে আত্মঘাতী গোল করেন ল্যাম্বট।
গোলের পরেই প্রণয়, গ্লেন মার্টিন্সদের নামিয়ে রক্ষণের ঝাঁপ ফেলে দেন হাবাস। ফলে নর্থ ইস্টের ‘প্রি-টেস্ট’ উত্তীর্ণ হয়ে লিগের শীর্ষে থেকে মুম্বই ম্যাচের জন্য প্রস্তুত হওয়ার পালা এ বার হাবাসের দলে। তবে সেই ম্যাচে প্রান্ত ধরে আক্রমণ জোরদার করতে হবে প্রথম পর্বের শেষে তাদের লিগের শীর্ষে থাকতে গেলে। বিশেষ করে প্রবীর দাসকে সচল হতে হবে মাথা না গরম করে।
এটিকে-মোহনবাগান: অরিন্দম ভট্টাচার্য, প্রীতম কোটাল, সন্দেশ জিঙ্ঘন, তিরি, শুভাশিস বসু, প্রবীর দাস (মনবীর সিংহ), কার্ল ম্যাকহিউ, এদু গার্সিয়া (গ্লেন মার্টিন্স), শেখ সাহিল (প্রণয় হালদার), রয় কৃষ্ণ, ডেভিড উইলিয়ামস (ব্র্যাড ইনম্যান)।
নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড: গুরমিত সিংহ, আশুতোষ মেহতা, বেঞ্জামিন ল্যাম্বট, ডিলান ফক্স, প্রভাত লাকড়া (গুরজিন্দর কুমার), ফেদেরিকো গালেগো, খাসসা কামারা (লুইস মাচাদো, লালেংমাউইয়া, সুহের ভি পি, ইদ্রিসা সিলা, রোচারজেলা (খুমানথেম মিতেই)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy