জয়ের পর নিজস্বী তুলছেন মনু ভাকের এবং সরবজ্যোৎ সিংহ। ছবি: পিটিআই।
২০২৪ অলিম্পিক্স কি প্রত্যাবর্তনের অলিম্পিক্স হতে যাচ্ছে?
ভারতের মনু ভাকের এবং সরবজ্যোৎ সিংহ যেমন খাদের কিনারা থেকে ফিরে এসে পদক জিতলেন, তেমনই হারিয়ে যেতে যেতে ভেসে উঠলেন সিমোন বাইলস। সোমবার সব চেয়ে বেশি মানুষ ছুটেছিল রোলঁ গ্যারোজ়ের দিকে। ক্লে কোর্টের রাজার সম্ভাব্য শেষ সিঙ্গলস দেখতে। এ দিন সবাই ছুটল বার্সি এরিনায়। যেখানে জিমন্যাস্টিক্স হচ্ছে। এত ভিআইপি সমাবেশ নাদাল-জোকোভিচ ম্যাচ দেখতেও হাজির হননি। নিকোল কিডম্যান, নাতালি পোর্টম্যান, সেরিনা উইলিয়ামস, মাইকেল ফেল্পস। কে না এসেছিলেন বাইলসকে দেখতে!
এ বারের অলিম্পিক্সে আবেগের দিক থেকে দু’জন সব চেয়ে এগিয়ে। রাফায়েল নাদাল ও সিমোন বাইলস। টোকিয়ো থেকে মানসিক রোগাক্রান্ত হয়ে রণে ভঙ্গ দিয়ে চলে গিয়েছিলেন বাইলস। তাঁকে নিয়ে নেটফ্লিক্স তথ্যচিত্র বার করে ফেলেছে, এমনই কঠিন রাস্তা অতিক্রম করে ফিরতে হয়েছে বাইলসকে। এ দিন আমেরিকাকে দলগত জিমন্যাস্টিক্স বিভাগে সোনা জেতানোয় নেতৃত্ব দিয়ে। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অবসাদে ডুবে থাকা কেউ অলিম্পিক্সের মঞ্চে শূন্যে ভল্ট দিয়ে আবার সোনা জিতছে, এমন কাহিনি রহস্য-রোমাঞ্চ সিরিজ়েও কেউ লেখার দুঃসাহস দেখাবে না। ফ্লোর এক্সারসাইজ়ের গানটাও কি মানানসই বেছেছিলেন! টেলর সুইফটের ‘রেডি ফর ইট?’
আমেরিকা জুড়ে যেমন বাইলস, আসমুদ্রহিমাচল তেমনই এখন মনু ভাকের। এ দিন সাত্ত্বিক-চিরাগ জুটি ব্যাডমিন্টনে জিতে বলে গেলেন, ‘‘মনু ভাকের এখন সব ভারতীয় প্রতিযোগীর প্রেরণা। অলিম্পিক্সের শুরুর দিকে কেউ পদক জিতলে গোটা দল তাতে অনুপ্রাণিত হয়। আমরা সকলে মনুদের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত।’’ এ বারের অলিম্পিক্সে সব চেয়ে বেশি প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে শুটিংকে ঘিরে। প্যারিসে ভারতের ১১৭ জন প্রতিনিধির মধ্যে ২১ জন শুটার। সব চেয়ে বড় দল। প্যারিসে আরইআর ট্রেন ছোটে দূরন্ত গতিতে। যা দূরবর্তী এলাকার সঙ্গে প্রধান শহরের যোগাযোগ রাখে। বলাবলি হচ্ছিল, শুটিং যদি ভাল শুরু দিতে পারে তা হলে ভারতের অলিম্পিক্স অভিযানও আরইআর-এর ট্রেনের মতো ছুটবে। মনু ভাকের, সরবজ্যোৎ সিংহ সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছেন।
বহির্বিশ্বে অবশ্য ভারতীয় অলিম্পিক্স বলতে এখনও নীরজ চোপড়া। যিনি এ দিন গেমস ভিলেজে ঢুকে ছবি টুইট করেছেন। সকালে প্রধান প্রেস সেন্টারে এক চিত্রসাংবাদিকের সঙ্গে দেখা হল। ফিজি থেকে এসেছেন। ভারত শুনে প্রথমেই বললেন, ‘‘জ্যাভলিনে কি এ বারও সোনা জিতবে নীরজ চোপড়া?’’ পি ভি সিন্ধুও পিছিয়ে থাকবেন না নিশ্চয়ই। অলিম্পিক্সের হোর্ডিংয়ে তাঁর মুখ রয়েছে। দু’বারের পদকজয়ী সিন্ধু ভাল শুরু করেছেন। ব্যাডমিন্টনে এ বারে অনেকে পদকের আশা করছেন চিরাগ শেট্টি ও সাত্ত্বিকসাইরাজ রঙ্কিরেড্ডি জুটির থেকে। যাঁদের ঝুলিতে রয়েছে এশিয়ান গেমসে সোনা, ২০২২ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ। চিরাগ মুম্বইয়ের চটপটে যুবক, সাত্ত্বিক অন্ধ্র প্রদেশের অমলাপুরমের লাজুক বড় ভাই। আদর করে তাঁদের ডাকা হয় সাত-চি নামে। ব্যাডমিন্টন প্রেমিকরা বিশেষ ভাবে নজর রাখতে পারেন সাত্ত্বিকের স্ম্যাশের দিকে। যার গতি ৫৪৫ কিমি প্রতি ঘণ্টায়। শোয়েব আখতার, ব্রেট লি ও শন টেট, ক্রিকেটের সব চেয়ে তিন দ্রুতগামী বোলারের গতি যোগ করলে কত হয়? ঘণ্টায় ৪৮৩.৫ কিমি। ফর্মুলা ওয়ান গাড়ির গতিবেগ কত? ৩৭৮ কিমি প্রতি ঘণ্টায়।
মনু-সরবের ব্রোঞ্জ জয়ের কিছু ক্ষণের মধ্যেই ভারতীয় হকি দল তাদের তৃতীয় ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ২-০ হারাল। দু’টো গোলই অধিনায়ক হরমনপ্রীত সিংহের। তবে জিতলেও কিছু চিন্তা থেকেই গেল। দ্বিতীয়ার্ধে দশটি পেনাল্টি কর্নার আদায় করে আয়ারল্যান্ড। গোলরক্ষক সৃজেশ রক্ষাকবচ হয়ে না দাঁড়ালে কী হত, বলা যায় না। পরের দুটি ম্যাচ অস্ট্রেলিয়া ও বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে। তারা আর আয়ারল্যান্ড এক নয়। এমন পলকা রক্ষণ সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। এটা ঠিক যে, গ্রুপের সব চেয়ে শক্তিশালী দুই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নামার আগেই কোয়ার্টার ফাইনাল প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। দু’টি কঠিন ম্যাচের দিকে সে ভাবে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে না। এ দিন আবার বেলজিয়াম ৬-২ গোলে হারিয়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। কিন্তু পদকের লড়াইয়ে থাকতে গেলে, একটা-দুটো নয়, চারটি কোয়ার্টারেই ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলে যেতে হবে। বড় দলকে হারাতে না পারলে পদকের আত্মবিশ্বাসই বা আসবে কোথা থেকে?
বক্সিং আর একটি ইভেন্ট, যেখানে একাধিক পদকের আশা করছেন অনেকে। কিন্তু শুরুতেই ধাক্কা লাগল। অমিত পঙ্ঘাল হেরে গেলেন প্রথম লড়াইয়েই। টোকিয়োতে শীর্ষ বাছাই হিসেবে গিয়ে প্রথম ম্যাচে হেরেছিলেন। এ বারে শেষ মুহর্তে যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। কিন্তু ভাগ্য একই থাকল।
বক্সিংয়ের প্রাথমিক পর্বের ম্যাচ হচ্ছে প্যারিস থেকে অনেকটা দূরে নর্থ প্যারিস এরিনায়। জায়গাটা গেমস ভিলেজের কাছে। পঙ্ঘাল হেরে গিয়ে কার্যত পালিয়ে গেলেন। সাংবাদিকদের মুখোমুখিও হতে চাইলেন না। যদিও বক্সিংয়ে সেরা পদক সম্ভাবনা দুই কন্যা। নিখাত জ়ারিন ও লাভলিনা বরগোঁহাই। নিখাত প্রথম রাউন্ডে জিতেছেন, টোকিয়োয় রুপোজয়ী লাভলিনা নামছেন বুধবার। ভারতীয় দলের জন্য আর একটা বড় দিন। পি টি উষা এ দিন ইন্ডিয়া হাউজ়ে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘গত বার টোকিয়োর চেয়েও বেশি পদক আসবে প্যারিসে। আমি এ ব্যাপারে খুবই আশাবাদী।’’ লন্ডনে পদকের সংখ্যা ছিল ছয়, টোকিয়োয় সাত। প্যারিসে ভারতীয় দলের মন্ত্রই হচ্ছে, মেডেল সংখ্যাকে দুই অঙ্কে পরিণত করো। সত্যিই সেই স্বপ্ন পূরণ করতে হলে শুটিংয়ের পাশাপাশি তাকিয়ে থাকতে হবে ব্যাডমিন্টন, বক্সিং ও হকির দিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy