Advertisement
E-Paper

করোনা-আক্রান্ত মা, পাশের ঘরে শঙ্কায় দিন কাটায় রাজ্য চ্যাম্পিয়ন

বাংলার এই উঠতি ডাইভারের বাবা রাজীব চট্টোপাধ্যায় রাজ্য পুলিশের কর্মী।

উদ্বেগে: রাজ্য সাঁতারের প্রতিভাবান কিশোরী সৃষ্টির ঘরে করোনার হানা।

উদ্বেগে: রাজ্য সাঁতারের প্রতিভাবান কিশোরী সৃষ্টির ঘরে করোনার হানা।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২০ ০৬:৫৩
Share
Save

করোনা এ বার হাজির রাজ্য চ্যাম্পিয়ন সাঁতারুর পরিবারেও!

সাব-জুনিয়র ডাইভিংয়ে বাংলার অন্যতম সেরা প্রতিভা সৃষ্টি চট্টোপাধ্যায় তাঁর করোনা আক্রান্ত মা-কে নিয়ে গত চার দিন ধরে চুঁচুড়ার বাড়িতে আতঙ্কের প্রহর কাটাচ্ছেন!

পরিস্থিতি জানতে চাইলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী উদ্বিগ্ন স্বরে বলে, ‍‘‍‘গত শুক্রবার জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানায়, মা করোনা পজিটিভ। ফ্ল্যাটে দু’টো ঘর। একটা ঘরে আমি, বাবা, ভাই থাকছি। পাশের ঘরেই মা-কে কোয়রান্টিন করে রাখা হয়েছে।’’ ১৩ বছরের কিশোরী যোগ করে, ‍‘‍‘সোমবার রাতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়ে ছটফট করছিল মা। দু’তিন গজের মধ্যে এই অবস্থা দেখে তখন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বাবা ফোন করে অক্সিজেন আনিয়ে মাকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করে। নিজের চেয়েও চিন্তা হচ্ছে ভাইয়ের জন্য। গত দু’দিন ধরে স্বাদ-গন্ধ বুঝতে পারছি না। সর্দি হয়েছে। আমারও পরীক্ষা হবে। জানি না ভাগ্যে কী রয়েছে। চেষ্টা করছি সাহস ধরে রাখার।’’

বাংলার এই উঠতি ডাইভারের বাবা রাজীব চট্টোপাধ্যায় রাজ্য পুলিশের কর্মী। চিন্তিত গলায় বললেন, ‍‘‍‘বাচ্চা দু’টোকে নিয়েই বেশি চিন্তা হচ্ছে। যদি বাড়াবাড়ি হয়, স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। তখন কী হবে, সেটা ভেবে আরওই শঙ্কিত হচ্ছি। যদি বাচ্চাদের কোয়রান্টিন কেন্দ্রে নিয়ে যায় তা হলে কোথায় রাখবে? এ সব চিন্তায় রাতের ঘুম ছুটেছে। ভরসা প্রতিবেশী, বন্ধুরা। ওরাই খাবার, ওষুধ পাঠাচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: জিতিয়ে আসতে পারেননি বলেই হতাশ ছিলেন নায়ক

কী ভাবে চট্টোপাধ্যায় পরিবারে ঢুকল সংক্রমণ? রাজীববাবু জানাচ্ছেন, ৪ জুলাই বাড়ি থেকে মোটরবাইকে বিধাননগরে তাঁর অফিস যাওয়ার পথে চোখে অস্বস্তি হচ্ছিল। দফতরে গিয়ে সেথান থেকে তিনি স্থানীয় একটি চোখের হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। ওষুধ সংগ্রহ করে ১০ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে আসেন। তাঁর কথায়, ‍‘‍‘সে দিন আমার জ্বর আসে। বিকেলে স্ত্রী কাকলির জ্বর হয়। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেয়ে আমার জ্বর কমলেও স্ত্রী সুস্থ হয়নি। তাই চুঁচুড়া সদর হাসপাতালে গিয়েছিলাম।’’ যোগ করেন, ‍‘‍‘স্ত্রীর শ্বাসকষ্ট হয়েছিল বলে শুধু ওরই পরীক্ষা হয়। ১০ জুলাই রিপোর্ট আসে, পজিটিভ। বলা হয়েছে, আমাদের সকলের পরীক্ষা হবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই। তখন আবার আমাদের তিন জনের মধ্যে কেউ করোনা পজিটিভ হতেই পারে।’’

আরও পড়ুন: রিভার্স সুইং কি হারিয়ে গেল, প্রশ্ন তুললেন পাঠান

চুঁচুড়া সুইমিং ক্লাবে সুখেন্দু দাসের ছাত্রী সৃষ্টি ১ মিটার, ৩ মিটার ও হাই বোর্ড— এই তিন বিভাগেই বাংলার প্রতিনিধিত্ব করে। ২০১৭ থেকে গত বছর পর্যন্ত রাজ্য চ্যাম্পিয়নশিপে সাব-জুনিয়রে সেৈানা জিতেছে। গত বছর রাজকোটে সাব-জুনিয়র জাতীয় ডাইভিং ও জাতীয় স্কুল গেমসে বাংলার হয়ে প্রথম বার নেমে চতুর্থ ও পঞ্চম হয়েছিল। রাজ্যের সাঁতার মহলেও তার প্রতিভা প্রশংসিত।

সৃষ্টির এই সঙ্কটের খবর পেয়ে চিন্তিত সাঁতারের রাজ্য সংস্থার কর্তারাও। সৃষ্টির বাবা বলছেন, ‍‘‍‘মঙ্গলবার সকালেই ফোন করেছিলেন রাজ্য সংস্থার বর্তমান ও প্রাক্তন কর্তারা। বিস্তারিত খবরাখবর নিয়েছেন ওঁরা।’’ যদিও খবরাখবর নেওয়া বাদ দিলে কর্তাদের দিক থেকে কোনও পদক্ষেপের খবর সে ভাবে পাওয়া যায়নি।

রাজ্যের সাঁতার সম্পর্কে অবহিতরা বলছেন, ‍‘‍‘জুনিয়র ডাইভারদের মধ্যে সৃষ্টির পারফরম্যান্স ভাল।’’ রাজ্য সংস্থাদের কর্তারা বলছেন, ‘‘আমরা ওর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। খুবই চিন্তার বিষয়। জেলা প্রশাসন ও রাজ্য অলিম্পিক্স সংস্থার শীর্ষ কর্তাদের বিশদ জানানো হয়েছে।’’

Coronavirus Swimmer Pandemic

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}