নয়াদিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্নায় অংশু মালিক, বিনেশ ফোগাট এবং সাক্ষী মালিক। বিনেশই প্রথম যৌন নিগ্রহের অভিযোগ করেন। ছবি: পিটিআই
কুস্তিগিরদের ধর্না ঘিরে বিতর্ক ক্রমশই বাড়ছে। জাতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতির বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের গুরুতর অভিযোগ নিয়ে বুধবার নয়াদিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্নায় বসেছিলেন দেশের নামী কুস্তিগিররা। সেই ঘটনায় নড়েচড়ে বসল কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রক। কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণ শরন সিংহের থেকে উত্তর চাইল তারা। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর চাওয়া হয়েছে। না পেলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
এক বিবৃতিতে ক্রীড়া মন্ত্রক জানিয়েছে, “অলিম্পিক্স এবং কমনওয়েলথ গেমসের পদকজয়ীরা যে প্রতিবাদ করেছেন এবং জাতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ও কোচেদের বিরুদ্ধে যে যে অভিযোগ করেছেন, তাকে মাথায় রেখে জাতীয় কুস্তি সংস্থার কাছে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। যে হেতু কুস্তিগিরদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারটি এর সঙ্গে জড়িত, তাই তাদের অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে মন্ত্রক। যদি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর না পাওয়া যায়, তা হলে জাতীয় কুস্তি সংস্থার বিরুদ্ধে ক্রীড়াবিধি মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
লখনউয়ে গত ১৮ জানুয়ারি থেকে মহিলাদের জাতীয় শিবির হওয়ার কথা ছিল। ৪১ জন প্রতিযোগী এবং ১৩ জন কোচের অংশ নেওয়ার কথা ছিল। সেটি বাতিল করা হয়েছে। এ দিকে, অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জ পদকজয়ী বজরং পুনিয়া সাধারণ মানুষ এবং দেশের বাকি সমস্ত কুস্তিগিরের কাছে আবেদন করেছেন তাঁদের প্রতিবাদে যোগ দেওয়ার জন্য। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে যন্তর মন্তরে আবার শুরু হয়েছে ধর্না। তার আগে বজরং বলেছেন, “জাতীয় কুস্তি সংস্থা কুস্তিগিরদের উপর কার্যত নির্যাতন করছে। যারা সংস্থায় রয়েছে তারা খেলাটার ব্যাপারে কিছুই জানে না।”
এর মধ্যে বেসুরে গেয়েছেন কুস্তিগির দিব্যা কাকরান। তাঁর দাবি, ব্রিজভূষণ কিছুই করেননি। বিনেশ ফোগাটদের প্রতিবাদকে এক হাত নিয়েছেন তিনি। দিব্যা বলেছেন, “সকাল থেকে সভাপতি ব্রিজভূষণের ব্যাপারে অনেক অভিযোগ শুনতে পাচ্ছি। যারা অভিযোগ করছে তাদের কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করছে না। পুরনো অভিযোগ কাজে না লাগলে, নতুন অভিযোগ করা হচ্ছে। ২০১৩ থেকে আমি জাতীয় শিবিরে যাচ্ছি এবং এখনও যাই। এখনও পর্যন্ত আমার বা কোনও মহিলা কুস্তিগিরের বিরুদ্ধে কোনও খারাপ কাজ করা হয়নি। হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশের কুস্তিগিরদের আলাদা করে খেয়াল রাখা হয়।”
দিব্যা আরও বলেছেন, “যারা প্রতিবাদ করছে, তারাই দু’মাস আগে বলেছিল ব্রিজভূষণ আসায় ভারতের কুস্তি কতটা বদলে গিয়েছে। বুঝতে পারছি না এখন কেন তারা উল্টো বলছে। পুরস্কার পাওয়ার পর এরাই ব্রিজভূষণকে ধন্যবাদ জানায়। আমার মতে, কুস্তিকে গোটা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে ভূমিকা নিয়েছেন ব্রিজভূষণ।”
প্রসঙ্গত, বুধবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে পদকজয়ী বিনেশ দাবি করেন, লখনউয়ে জাতীয় শিবিরে মহিলা কুস্তিগিরদের নিয়মিত যৌন হেনস্থা করতেন কোচেরা। এমনকী, ব্রিজভূষণের ভয় দেখিয়ে জোর করে কুস্তিগিরদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ারও চেষ্টা করতেন তাঁরা। বিনেশ যদিও জানিয়েছেন, নিজে কোনও দিন এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হননি। তবে খুনের হুমকি পেয়েছেন।
সংবাদ সংস্থাকে বিনেশ বলেছেন, “আমি অন্তত ১০-১২ জন মহিলা কুস্তিগিরকে জানি যারা সভাপতির যৌন হেনস্থার শিকার হয়েছে। ওরা এই সমস্যার কথা আমাকে বলেছে। এখন ওদের নাম নিতে পারব না। কিন্তু যদি প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হয়, তা হলে সবার নাম বলে দেব।”
ওই ধর্নায় ছিলেন টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জজয়ী বজরং পুনিয়াও। তিনি সাফ জানিয়েছেন, সভাপতিকে সরানো না হলে তাঁরা কেউ কোনো প্রতিযোগিতায় নামবেন না। বজরংয়ের কথায়, “আমাদের লড়াই স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার (সাই) বিরুদ্ধে নয়। এটা জাতীয় কুস্তি সংস্থার বিরুদ্ধে। হয় এসপার, না হয় ওসপার। যত ক্ষণ না সভাপতিকে সরানো হচ্ছে, তত ক্ষণ আমরা প্রতিবাদ করে যাব। ওঁকে না সরানো পর্যন্ত আমরা কোনও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেব না। এটা ভারতের কুস্তিকে বাঁচানোর লড়াই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy