Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

আফ্রিদি আজ খবর দেয়নি, রান দিয়েছে

গত তিন দশক ধরে করাচি নিবাসী পাকিস্তানের বিশিষ্ট ক্রিকেট সাংবাদিক ইডেন উত্তেজনার অভিজ্ঞতা লিখলেন শুধু আনন্দবাজারে পাকিস্তানি মিডিয়ায় শাহিদ আফ্রিদিকে নিয়ে একটা রসিকতা রয়েছে— মাঠে নেমে আফ্রিদি হয় রান করবে। না হলে সাংবাদিকদের দেবে মুচমুচে সব খবর! বুধবার আমাদের ক্যাপ্টেন কোনও খবর দেয়নি। বদলে দিয়েছে রান।

আব্দুল মজিদ ভাট্টি
শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩১
Share: Save:

পাকিস্তানি মিডিয়ায় শাহিদ আফ্রিদিকে নিয়ে একটা রসিকতা রয়েছে— মাঠে নেমে আফ্রিদি হয় রান করবে। না হলে সাংবাদিকদের দেবে মুচমুচে সব খবর!

বুধবার আমাদের ক্যাপ্টেন কোনও খবর দেয়নি। বদলে দিয়েছে রান।

টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে পা দেওয়ার পরে আফ্রিদি ঠিক সে ভাবেই খবর হয়ে গিয়েছিল কলকাতায় ওর প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনের পর। যা নিয়ে কিনা আমার দেশে মামলাও হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে।

এ ব্যাপারে হাজারখানেক ব্যাখ্যা থাকতে পারে। কিন্তু আমার ব্যাখ্যাটা একটু আলাদা। আফ্রিদিকে নিয়ে ওই বিতর্কের একটা বড় কারণ হল, ওর ফর্মে না থাকা, বড় রান করা। শেষ কয়েকটা ম্যাচে ঠিক সে ভাবে পাওয়া যাচ্ছিল না ‘বুম বুম’ আফ্রিদিকে। সেটাই হয়তো ওকে ভিলেন বানিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানের ক্রিকেট অনুরাগীদের মধ্যে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযানের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তান ক্যাপ্টেন বাংলাদেশকে ৫৪ রানে হারিয়ে যেন, জানিয়ে দিল— এটা বিশ্বকাপ। পুরনো সব ভুলে যাও। এটা অন্য লড়াই।

ম্যাচের পর ইডেনের প্রেসবক্সের টিভিতে দেখলাম সে কথাই বলছে আফ্রিদি। যেখানে ও জানিয়েই দিয়ে গেল, পারফর্ম করতে খুব মুখিয়েছিল। আজ যা যা করতে চেয়েছে, হয়েছে। অতীত ভুলে যেতে বলল সবাইকে।

বুধবারের ইডেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেই ‘বুম বুম’ আফ্রিদিকেই দেখল। আর এই আফ্রিদিকে দেখতেই তো মাঠে ভিড় জমায় লাহৌর, শারজা, ঢাকা, কলকাতা, লর্ডসের দর্শক। আর এই আফ্রিদিকেই গোটা বিশ্বকাপে চায় পাকিস্তান।

ম্যাচের আটচল্লিশ ঘণ্টা আগেই আফ্রিদিকে নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছিল গোটা পাকিস্তান। নাটকীয় ভাবে ম্যাচের আগের দিন প্র্যাকটিসেও অনুপস্থিত ছিল আফ্রিদি। কিন্তু বুধবার দেখলাম ওর টিম মাঠে ঢোকার এক ঘণ্টা আগে ইডেনে ঢুকছে আফ্রিদি। তখনই কেন জানি না মন বলছিল, আজ আমাদের ক্যাপ্টেন বোধহয় রান দিতেই ইডেনে ঢুকছে। আর হলও ঠিক তাই।

প্রায় দু’দশক ধরে আফ্রিদিকে দেখার সুবাদে জানি, ছেলেটা বর্ন ফাইটার। মাঠে কিছু না কিছু করবেই। ইডেনে বাংলাদেশকে দুরমুশ করে একটা বার্তা ও দিয়ে রাখল— এশিয়া কাপের পাকিস্তান ভেবে বিশ্বকাপের পাকিস্তানকে নিলে কিন্তু মুশকিল।

পাকিস্তানের ক্রিকেট জনতার মন আর হৃদয়ের রোডম্যাপ আমার জানার সুবাদে একটা কথা এখনই বলতে পারি, আফ্রিদির এই ফর্ম গোটা টুর্নামেন্টের বাকি পাঁচ ম্যাচেও যাতে থাকে তার জন্য আজ রাতেও প্রার্থনা করবেন কেউ কেউ।

ইডেনের আগে নিউজিল্যান্ড সফরে সেই অকল্যান্ডে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিল আফ্রিদি। ম্যাচটাও জিতেছিল পাকিস্তান। সুতরাং পাকিস্তানে প্রার্থনার কারণটা নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন। মোদ্দা কথা হল, ডু অর ডাই পরিস্থিতিতে এই আফ্রিদিকেই যেন ব্যাট হাতে দাপটে দেখা যায়।

ইডেনে ম্যাচ কভার করছি এগারো বছর। যত বার এসেছি তত বারই দেখেছি, এই শহর পাকিস্তান টিমকে কখনও খালি হাতে ফেরায় না। স্পোর্টিং দর্শক বলতে যা বোঝায় তা এই শহরের ক্রিকেট জনতার জন্যই বোধহয় পারফেক্ট। গত রবিবার রাতেও পাকিস্তানে বন্ধুবান্ধবদের অনেকেই ধর্মশালায় ম্যাচ বাতিল হয়ে যাওয়া আর তার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে অনেক হাড় হিম করা সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছিল। সোমবার কলকাতা আসার আগে ওদের বলেছিলাম—কোনও চিন্তা কোরো না। যাচ্ছি তো আমার সেকেন্ড হোম টাউনে।

কলকাতায় পা দিয়ে বন্ধুদের কাছে ভুল প্রমাণিত হতে হয়নি আমায়। কোথায় টেনশন? কোথায় উত্তেজনা? শহরটা যে রকম অতিথিপরায়ণ ছিল ঠিক সে রকমই রয়েছে। ইমিগ্রেশন থেকে হোটেলের রুম সার্ভিস বা ইডেনের প্রেসবক্স— যেখানেই শুনছে আমি পাকিস্তান থেকে এসেছি, সঙ্গে সঙ্গে আলাদা অভ্যর্থনা দিচ্ছে। ইচ্ছে মতো ঘুরে বেড়াতে পারছি। আগের ছ’টা কলকাতা সফরেও শহরটার মেজাজ ঠিক এ রকমই দেখেছি।

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্র্যাকটিস ম্যাচে দেখেছিলাম। এ দিনও দেখলাম গ্যালারির অনেকে পাকিস্তানের জন্য গলা ফাটাচ্ছে। তাদের জন্য কোনও শাসানি, রক্তচক্ষু অপেক্ষা করে নেই। এই পরিবেশ ইডেন গার্ডেন্সই দিতে পারে। ম্যাচের মাঝপথে প্রেসবক্সেই সাংবাদিকদের কাউকে কাউকে বলতে শুনছিলাম, আগের দিন ভারত হেরে যাওয়ায় পাকিস্তান নাকি এত ফুরফুরে মেজাজে। আমি এই যুক্তির সঙ্গে একমত নই। পাকিস্তান টিমকে বুধবার যদি কলকাতায় চিন্তামুক্ত দেখায় তা হলে তা ইডেনের দর্শকদের জন্য। কলকাতা শহরটার জন্য। যারা প্র্যাকটিস ম্যাচ থেকে হোটেল পর্যন্ত পাকিস্তান টিমের পাশে অনবদ্য আতিথেয়তা নিয়ে থেকেছে। তাই আফ্রিদির টিমের কেউ শত চাপেও ভেঙে পড়েনি।

এই পাক টিমকে দেখে ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা খুব মনে পড়ছে। সে বারও পাকিস্তান টিমের বিশ্বকাপ শুরুর আগের সময়টা মসৃণ ছিল না। টিমটা ধীরে ধীরে পিকে উঠেছিল। বুধবারের ইডেন কিন্তু সেই সম্ভাবনারই স্ফুলিঙ্গ কিন্তু দেখাল। শনিবার ভারতের বিরুদ্ধে আমার দেশের মেগা ম্যাচ। যে ম্যাচের কোনও ভবিষ্যদ্বাণী হয় না। আফ্রিদির টিমের সঙ্গে এক যুগেরও বেশি জড়িয়ে থাকার সুবাদে বলতে পারি, এশিয়া কাপ থেকে হেরে দেশে ফেরার পর বিশ্বকাপে পুরো নতুন মোটিভেশন নিয়ে ভারতে এসেছে পাকিস্তান। কাজেই শনিবার আফ্রিদি-আমেররা নিজেদের পয়া মাঠে নিজেদের ছাপিয়ে যেতে চাইবেই।

সব শেষে এক জনের কথা না বললেই নয়। তিনি সিএবির বর্তমান প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ধর্মশালা থেকে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ সরে যাওয়ার পর যে ভাবে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সিএবি কলকাতায় সেই মহাম্যাচের আয়োজন করতে চলেছে তাতে সৌরভের মধ্যে প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়ার প্রশাসনিক ছায়াই দেখতে পাচ্ছি।

অন্য বিষয়গুলি:

Abdul Majid Bhatti pakistani journalist WT20
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy