চর্চায়: আগামী রবিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের দল নির্বাচন। ধোনিকে নিয়ে আলোচনা উঠেছে তুঙ্গে। ফাইল চিত্র
বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরে একটা প্রশ্ন গোটা ভারত জুড়ে ঘুরছে। তা হল, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি অবসর নেবে নাকি এখনও খেলে যাবে?
শুরুতেই বলে দিতে চাই, এটা ধোনির ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার মতে, ধোনি আগামী দিনে ওয়ান ডে ক্রিকেট খেলবে নাকি অবসর নেবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা ধোনির উপরেই ছেড়ে দেওয়া হোক। ও নিজেই ঠিক করুক কী করবে।
ধোনি ভারতীয় ক্রিকেটে একজন কিংবদন্তি। এক যুগেরও বেশি সময় ভারতীয় ক্রিকেটের সেবা করেছে। এটাও ঠিক যে, এই বিপুল জনপ্রিয়তা, চৌম্বক আকর্ষণের দুনিয়া ছেড়ে সহজে কেউ বেরোতে পারে না। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় একমাত্র সুনীল গাওস্করকে দেখেছি খ্যাতির চূড়ায় থাকাকালীন খেলা ছেড়ে দিয়েছে।
কখন খেলা ছেড়ে দিতে হবে, সেটাও কিন্তু একটা বিচক্ষণতার পরিচয়। যেটা এ দেশের ক্রিকেটে সানি করে দেখিয়েছিল। একজন ক্রিকেটার খেলা ছেড়ে দেওয়ার পরে গোটা দেশ আফশোস করছে— এখনও খেলতে পারত! কেন ছাড়ল? এই প্রতিক্রিয়া যেমন গৌরবের তেমনই অসম্মানের হয়ে দাঁড়ায় যখন কোনও খেলোয়াড়কে দেশের মানুষ এক সময় পুজো করতেন কিন্তু শেষ বেলায় বয়ে নিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এটা নিশ্চয়ই কেউ দেখতে চায় না যে, সেই মহাতারকা দল থেকে বাদ পড়ার পরে দেশের লোক হাফ ছেড়ে বাঁচছে।
বড় ক্রিকেটারদের কেরিয়ারের শেষের দিকে অনেকেরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার লগ্ন উপস্থিত হয়। আমি যখন নির্বাচক ছিলাম, তখন এ রকম এক বড় ক্রিকেটারকে খুব কাছ থেকে দেখেছি— মহম্মদ আজ়হারউদ্দিন। আরও একটি নাম মাথায় আসছে। আজহারকে আমরা এক বার দল থেকে বাদ দিয়েছিলাম। পরে কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করে ফিরে এসেছিল আজহার।
অনেক ক্রিকেটারের ক্ষেত্রেই এমন হয়েছে। কেউ কেউ লড়াই করে ফিরে এসেছে। কেউ আর পারেনি। তবে ধোনির বয়স যে-হেতু আটত্রিশ, এখন বাদ গেলে ওর পক্ষে ফেরা কঠিন। আরও এক ক্রিকেটারের কথা মনে পড়ছে। যাকে বাদ দেওয়ায় আমাদের কাছে এসে সরাসরি জানতে চেয়েছিল, কেন নির্বাচিত হল না। তার নাম নয়ন মোঙ্গিয়া। সেই সময়ে মোঙ্গিয়ার জায়গাতেই আমরা এখনকার নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান এম এস কে প্রসাদকে নিয়ে এসেছিলাম। আমরা কিন্তু মোঙ্গিয়াকে বুঝিয়ে বলেছিলাম, প্রসাদ তোমার চেয়ে ভাল খেলছে। তবে এই কাহিনি বলার পরেও মানতেই হবে, মোঙ্গিয়াকে বসিয়ে দেওয়া আর ধোনিকে বাদ দেওয়া এক ব্যাপার নয়।
আমাদের সময়ে এই রকমের পরিস্থিতিতে বোর্ড থেকে অঘোষিত কিছু নির্দেশ থাকত। কিন্তু বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত প্রশাসকদের কমিটি (সিওএ) যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে দল নির্বাচনে পূর্ণ ক্ষমতা চলে যাচ্ছে নির্বাচকদের হাতে। এটা নিয়ে আর এক দফা বিতর্ক আসন্ন।
বর্তমান নির্বাচক কমিটি মিলিত ভাবে যা ম্যাচ খেলেছে দেশের হয়ে, ধোনি তার কুড়ি গুণ বেশি ম্যাচ খেলেছে ভারতের জার্সি গায়ে। তাই ওদের পক্ষে ধোনির সঙ্গে সাহস করে গিয়ে সোজাসুজি কথা বলাটাও কঠিন। তাই বর্তমান নির্বাচকদের পরিস্থিতি এই মুহূর্তে ভালই বুঝতে পারছি। বীরেন্দ্র সহবাগের মতো কেউ কেউ বলেছে, নির্বাচকেরা ধোনির সঙ্গে কথা বলুক ভবিষ্যৎ নিয়ে। আমার কাছে এটা ভিত্তিহীন প্রস্তাব।
মনে রাখতে হবে ক্রিকেটারটির নাম মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ওয়ান ডে ক্রিকেটে যার ১০ হাজারের বেশি রান। যে মানুষটা এত ম্যাচ জিতিয়েছে! উইকেটকিপার হিসেবে ওর দক্ষতা নিয়ে এখনও কোনও কথা উঠবে না। ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন নেই। ধোনি দলে থাকলে দল অনেক মূল্যবান পরামর্শ পায়। বোলারদের এতে অনেক সুবিধে হয়ে যায়। ডিআরএস নিয়ে তো মজা করে বলাই হয়, এটা ধোনি রিভিউ সিস্টেম।
একই সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে ধোনির বয়সটা বড়েছে। এখন ওর বয়স ৩৮। আগের মতো সেই পাওয়ার হিটিং ধোনির ব্যাট থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। আগের মতো স্ট্রাইক রেট আর নেই। আগের মতো আর ম্যাচ শেষ করে আসতে পারছে না। চার বছর পরের বিশ্বকাপে ধোনির বয়স হবে ৪২। প্রশ্নই নেই তখন ওর খেলার। তা হলে এখন থেকে ঋষভ পন্থকে তৈরি না করলে অন্যায়ই হবে। ঋষভের বয়স এখন ২১। তাই আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকেই ভবিষ্যতের কথা ভেবে ওকে গড়ে তোলার কাজ শুরু করে
দেওয়া উচিত।
আমার মতে, ধোনির সরে দাঁড়ানোর এটাই উপযুক্ত সময়। দু’টো বিশ্বকাপ ট্রফি দেশের জার্সি গায়ে জিতেছে ধোনি। চিরকালীন কিংবদন্তি হয়েই থেকে যাবে ও। পাশাপাশি, ব্যাটন হাতে তুলে নেওয়ার জন্য পরবর্তী প্রজন্মও এসে গিয়েছে। বিচক্ষণ ধোনি সেই বাস্তবকে দেখতে না পেলে আরওই হতাশ হব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy