দুপুর ১-০০ জীবনের প্রথম বই প্রকাশের ঘোষণা। সঙ্গে প্রকাশক চিকি সরকার।
দুপুর একটা। মধ্য কলকাতার পাঁচতারা হোটেল। নীল স্যুটে যখন তিনি এলেন মুখে একটা ঝলমলে হাসি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
গোটা ভারতবর্ষের মিডিয়া দাঁড়িয়ে তাঁর জন্য। দুটো কারণে। এক, তাঁর লেখা প্রথম বই বেরনোর ঘোষণা এখনই হবে। দুই, তার পর ভারতের কোচ বাছতে ১০ কিলোমিটার দূরে আর এক হোটেলে চলে যাবেন তিনি। জানা যাবে, বিরাট কোহালি-মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের নতুন মাস্টারমশাই কে হচ্ছেন শেষ পর্যন্ত।
সকাল দেখেই যদি বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে তা হলে নিঃসন্দেহে তাঁকে দেখে তখনই বলে দেওয়া যায়, আজ যে ক’টা ডেলিভারি সামনে পড়বে, অফ ড্রাইভে বাউন্ডারি হবে।
টাইম-মেশিনে কুড়ি বছর পিছনে চলে গেলে দিনটা লর্ডসে ভারত-ইংল্যান্ডের সেই ঐতিহাসিক টেস্টের। সেঞ্চুরি যে টেস্টে উঠে আসা বাঙালির সর্বকালের সেরা ক্রিকেট-আইকনের।
আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর প্রথম সেঞ্চুরির দু’দশক ছোঁয়ার চব্বিশ ঘণ্টা আগেও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের চ্যালেঞ্জ কিছু কম থাকল না। ডমিনিক কর্ক, অ্যালান মুলালির সে দিনের সুইংয়ের মতোই বিষাক্ত ছিল। কখনও লেখক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, প্রথম বই প্রকাশের চ্যালেঞ্জ নিয়ে। কখনও নির্বাচক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, যাঁকে জীবনের একটা নতুন অধ্যায় লিখে অতি দ্রুত বেরিয়ে যেতে হবে আর এক জায়গায়, ভারতীয় টিমের কোচ বেছে নিতে। রবি শাস্ত্রী, টম মুডি, অনিল কুম্বলে— দুঁদে সব পরীক্ষার্থী। আবার প্রশাসক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, তাঁকেও জিততে হবে। সিএবি-র ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক আছে বিকেলে। প্রেসিডেন্ট তিনি, সেখানে না গিয়ে উপায় কী?
ক্রিকেটজীবনে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে টেনশন থাকত, জীবনের এত বড় সন্ধিক্ষণেও ছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। গত রাতে বাড়ি ফেরার পর ঘুম আসছিল না। স্ত্রী, কন্যা সব ঘুমিয়ে পড়েছে। সিলিংয়ের দিকে একাকী তাকিয়ে থাকা অসহ্য লাগছিল বলে লর্ডসে নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির ভিডিওটা চালিয়ে দেন ইউটিউবে। ঘুমও এসে যায়। ক্রিকেটার নিজস্ব বড় কীর্তি দেখে মন শান্ত রাখে যেমন, নিজেকে প্রস্তুত করে ভবিষ্যতের কীর্তির যুদ্ধে— এটাও এক। ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার পরেও এক।
আর সৌরভ শুরুই করলেন অপূর্ব অফ ড্রাইভ দিয়ে। ‘‘আমার বইটার নাম আ সেঞ্চুরি ইজ নট এনাফ। ক্রিকেটারের জীবনে সেঞ্চুরি করলেই সব সমাধান হয় না। পনেরো-ষোলো বছর কেরিয়ারে টিকে থাকতে হলে তার আগে আর পরের জিনিসগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ,’’ বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলছিলেন সৌরভ। সঙ্গে দ্রুত জুড়ে দিলেন, ‘‘সচিন, লারা, সহবাগ, ওয়ার্নদের দেখেছি। কী ভাবে নিজের লক্ষ্য ঠিক রেখে এগোতে হবে, সেটাও জানা উচিত। আশা করছি, একটা দারুণ বই আপনাদের উপহার দিতে পারব।’’
দুপুর ১.৪৫ ভারতের কোচ বেছে নিতে ঢুকছেন দক্ষিণ কলকাতার পাঁচতারা হোটেলে। বিকেল ৫.৩০ সিএবি
ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে এ বার গন্তব্য ইডেন। ফের ফেরত কোচের ইন্টারভিউ নিতে। মঙ্গলবার।
দারুণ হবেও নিশ্চয়ই। আত্মজীবনী নয়, এটা আদতে সৌরভের জীবনের মন্ত্র নিয়ে। ক্রিকেট কেরিয়ারের দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা থেকে জীবনের বাইশ গজে মানুষকে লড়াইয়ের রসদ দিয়ে যাওয়া। তিরিশ হাজার শব্দে লোকের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এটাই তাঁর বই। সহলেখক গৌতম ভট্টাচার্য।
কিন্তু তাঁর ক্রিকেটের বাইরের জীবনযাপন? ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার পর সৌরভ, আজকের সৌরভ, তাঁর কর্মব্যস্ত দিনগুলো অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে না? তাঁকে প্রায়ই বলতে শোনা যায়, চব্বিশের বদলে দিন আটচল্লিশ ঘণ্টার হলে ভাল হত। সেটা যে কতটা সত্যি, মঙ্গলবার শহর জুড়ে তো বোঝা গেল। যা যে কোনও বিজনেস ম্যাগনেট বা কর্পোরেট সিইও-কেও তীব্র চ্যালেঞ্জে ফেলে দেবে। অথচ সৌরভ সব করলেন। বই প্রকাশের ঘোষণা করলেন। কোচ বাছলেন। সিএবি ওয়ার্কিং কমিটি বৈঠকে বঙ্গ ক্রিকেটের উন্নতি সাধনের চেষ্টাতেও নেমে গেলেন। লর্ডস সেঞ্চুরির মেজাজে সবই করলে গেলেন দুপুর একটা থেকে রাত পৌনে দশটা— প্রায় পৌনে ন’ঘণ্টার একটা সময়ে।
কে বলবে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বহু দিন হল অবসর নিয়েছেন? আর কোনও কর্ক-মুলালি নয়। প্রতিদ্বন্দ্বী বিচারে আজ কিন্তু সব এক-একটা ওয়াসিম আক্রম ছিল!
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস, উৎপল সরকার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy