হাসপাতাল থেকে বেরোনোর পথে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
উদ্বেগ ও প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে বৃহস্পতিবার বাড়ি ফিরলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। এ দিন হাসপাতাল থেকে বেরিয়েই সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়ে দেন, সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। ‘‘আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যেই আবার উড়তে পারব,’’ প্রত্যয়ী ভঙ্গিতে বলেন সৌরভ।
আর তা শুনেই দ্রুত গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়, এ বার তা হলে কোন আকাশে উড়তে দেখা যাবে সৌরভকে? রাজনীতির আকাশে? বঙ্গে বিজেপির মুখ হয়ে ওঠার জল্পনার মধ্যেই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন সৌরভ। ফলে তাঁর রাজনৈতিক ইনিংসের সম্ভাবনা নিয়ে সামান্য হলেও প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে। তবে এটাও ঠিক যে, এত দ্রুত কোনও সম্ভাবনাকে কেউ উড়িয়ে দিতেও চান না।
সৌরভকে এ দিন সাংবাদিকেরা প্রশ্ন ছুড়ে দেন, কোনও কি চাপ ছিল? ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক সেই প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি। হাত নেড়ে বেরিয়ে যান। কেন চাপ, কীসের চাপ সেই প্রসঙ্গ উত্থাপনেরও তাই সুযোগ পাননি কেউ।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২ জানুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সৌরভ। পাঁচ দিন হাসপাতালে কাটিয়ে এ দিন সকাল ১০-৪৫ মিনিটে ছুটি পেলেন তিনি। পায়ে হেঁটেই বেরিয়ে আসেন সৌরভ। একেবারেই সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের মতো। অপেক্ষমান জনতার দিকে তাকিয়ে বার বার হাত নাড়েন। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার মতো ঝড়ের কোনও প্রভাবই দেখা যায়নি হাঁটাচলায়, চোখেমুখে।
বেরিয়ে আসার আগে হাসপাতালের ডাক্তারেরা তাঁর সঙ্গে নিজস্বী তোলেন। সৌরভ ধন্যবাদ দেন ডাক্তারদের। বলেন, ‘‘আমরা শুনেছি, হাসপাতালে মানুষ আসে জীবন ফিরে পেতে। আমি তার সাক্ষী রইলাম। যে ভাবে প্রত্যেকে আমার যত্ন নিয়েছেন, তাতে সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’’
কথা ছিল বুধবারই সৌরভ ছুটি পাবেন হাসপাতাল থেকে। তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে হাসপাতালে জড়ো হয়ে গিয়েছিলেন অনেক ভক্ত। কিন্তু ছুটি এক দিন পিছিয়ে যায়। বৃহস্পতিবারও হাসপাতালে ছিল উপচে পড়া সংবাদমাধ্যমের ভিড়। স্ত্রী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায় এসেছিলেন তাঁকে নিতে।
গাড়িতে ওঠার আগে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের উদ্দেশে ছোট্ট বক্তব্য রাখেন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট। তখনই বলেন ওড়ার কথা। প্রসঙ্গত, হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি তাঁকে দেখার পরে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘‘সৌরভ প্লেন ওড়াতে পারবেন, ম্যারাথনে নামতে পারবেন, প্রয়োজনে ক্রিকেটও খেলতে পারেন। তাঁর হৃদ্যন্ত্র কুড়ি বছর বয়সে যেমন ছিল, তেমনই রয়েছে। বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয়নি।’’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ দিন জানান, সৌরভের রক্তচাপ, নাড়ির গতি ঠিক রয়েছে। গত রাতে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটেনি। সকালে ইসিজি রিপোর্টও ঠিক রয়েছে।
সৌরভের বেহালার বাড়ির সামনেও প্রচুর মানুষ ভিড় করেছিলেন। ঠিক যেমন ভিড় জমত তিনি বিদেশ থেকে খেলে ফেরার সময়। এ দিন জড়ো হওয়া অনুরাগীদের কারও হাতে ছিল সৌরভের ছবি, কারও হাতে ছিল কালীঘাটে পুজো দেওয়া প্রসাদ ও ফুল। বাড়ির সামনে ভক্তদের ভিড় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। সৌরভকে দেখে ভক্তদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। কেউ কেউ পায়ে হাত দিয়ে প্রণামও করেন তাঁকে।
সেখানে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সৌরভ বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা যে ভাবে বলবেন সে ভাবেই আমি চলতে চাই। আপাতত বিশ্রামে থাকার কথাই বলেছেন ওঁরা।’’ সপ্তাহ দুয়েক পরে বাকি দু’টি স্টেন্ট বসাতে ফের হাসপাতালে যেতে হবে সৌরভকে। তবে হাসপাতালের তরফে বলা হয়েছে, সেই প্রক্রিয়া নিয়ে চিন্তিত হওয়ার মতো কিছু নেই। যে ঝড় উঠেছিল, তা এখন শান্ত। যদিও আপাতত বাড়িতেই থাকতে হবে তাঁকে। এখনই বাইরে বেরতে পারবেন না। চিকিৎসকেদের পরামর্শ অনুযায়ী, বাড়িতেই নিয়মিত ভাবে নানা ডাক্তারি পরীক্ষা হবে তাঁর। চলবে ওষুধও।
কন্যা সানা এ দিন হাসপাতালে যেতে পারেননি কলেজের অনলাইন ক্লাস ছিল বলে। কিন্তু বাবা এসেছে জানতে পেরে তিনি নেমে আসেন। সৌরভের মা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন ছেলেকে দেখে। ছুটে আসে বাড়ির পোষ্যটিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy