সোমেশ্বর রাও। — ফাইল চিত্র।
সেনাবাহিনীতে কাজ করার সময় ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছিল বাঁ পা। দুঃখে, হতাশায় এক সময় আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। একটি ফোন কলের জন্য বেঁচে যায় প্রাণ। তার পর থেকে খেলাধুলোকেই আঁকড়ে ধরেন। প্রাক্তন সেনাকর্মী সোমেশ্বর রাও এ বার যাচ্ছেন প্যারা এশিয়ান গেমসে। লং জাম্পে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি।
জীবনটা এতটাও সহজ ছিল না রাওয়ের। জম্মু এবং কাশ্মীরের উরি সেক্টরে কাজ করতেন তিনি। ২০১১ সালে মাদ্রাজ় রেজিমেন্টে যোগ দেওয়ার পর থেকেই উরিতে কাজ করার জন্যে মুখিয়ে ছিলেন। তাঁকে ‘ঘাতক’ (যে দলে সেনাবাহিনীর সবচেয়ে ভাল সৈনিকেরা থাকেন) দলের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রাও জানিয়েছেন, উরিতে কাজ করার সময়ই এক দিন শত্রুপক্ষের ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের শব্দ কানে এসেছিল। সেই রাতে তিনি কিছুই করেননি। পরের দিন নির্দিষ্ট পথে নিজেদের এলাকায় ফেরার সময় আর একটি ল্যান্ডমাইনের উপর রাওয়ের পা পড়ে। বিস্ফোরণে বাঁ পা উড়ে যায়।
তার পর থেকে চিকিৎসা শুরু হলেও রাও নিজের ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। হাত কেটে আত্মহত্যা করার জন্যে এক দিন ব্লেড নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন বাথরুমে। সেই সময়ে মায়ের ফোনে প্রাণ বাঁচে তাঁর। এক সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, “মায়ের জন্যে আজ বেঁচে আছি আমি। মায়ের গলা শুনে সে দিন কাঁদতে শুরু করেছিলাম। তার পরে অজ্ঞান হয়ে যাই। পরের ১০ দিন হাসপাতালের আইসিইউ-য়ে ঢুকছিলাম আর বেরোচ্ছিলাম।” পরে নিজেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে কখনও এমন ভাবনা মাথায় আনবেন না।
এর পরেই জীবন ঘুরে যায় রাওয়ের। পুণেয় কৃত্রিম পা প্রতিস্থাপন কেন্দ্রে গিয়ে আলাপ হয় সেনার প্যারা ট্রায়াথলিট লেফটেন্যান্ট কর্নেল গৌরব দত্তের সঙ্গে। তিনিই রাওকে খেলাধুলো করতে উৎসাহ দেন। প্রথমে কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে ব্লেড রানার হিসাবে শুরু করলেও লং জাম্পে মনোনিবেশ করেন রাও। সেই ইভেন্টেই চিনের হ্যাংঝৌতে প্যারা এশিয়ান গেমসে নামবেন রাও।
শুধু রাওই নন, ১২ ডোগরা রেজিমেন্টের সেনা অজয় কুমারের জীবনটাও একই রকম। তিনিও উরিতে ২০১৭ সালে এক ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে পা হারিয়েছিলেন। পরে সেনার তরফে তাঁকে প্রশাসনিক পদে আনা হলেও সেই কাজ পছন্দ হয়নি। গৌরবকে বলে তিনিও খেলাধুলোয় মন দেন। প্যারা এশিয়ান গেমসে তিনিও নামবেন লং জাম্পে।
গৌরব দত্ত এ রকম বহু তরুণ প্যারা ক্রীড়াবিদকে তুলে এনেছেন। এখনও তিনি তৃপ্ত নন। তাঁর মতে, ভারতে প্যারা স্পোর্টসের জন্যে অনেক কিছু করা বাকি। তিনি বলেছেন, “এই খেলাধুলোয় যারা আসে, জানি তারা জীবনে কতটা কষ্ট পেয়েছে। এক দিন আগেই যে যোদ্ধা ছিল, পরের দিনই সে আর সেই কাজের যোগ্য থাকল। ওদের অনেক বোঝাই। খেলাধুলো করলে কত কী পাওয়া সম্ভব সেটা মনে করাই। উৎসাহ দিই সর্বক্ষণ।” গৌরব চান, দুঃখের জীবন না কাটিয়ে আগামী দিনে আরও অনেক ক্রীড়াবিদ এগিয়ে আসুন প্যারা স্পোর্টসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy