স্কুলে ঢুকে পড়েছিল আগেই। বিধাননগরে এ বার ডেঙ্গির হানা ইস্টবেঙ্গলের অনূর্ধ্ব ১৯ অ্যাকাডেমিতেও!
যার ধাক্কায় লাল-হলুদ অ্যাকাডেমির ছয় ফুটবলার আপাতত বাগুইআটির এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এঁদের মধ্যে দু’জন আবার ভর্তি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। যদিও পরিস্থিতি আয়ত্তের মধ্যেই।
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তরফে সহ-সচিব ডা. শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘অ্যাকাডেমির বেশ কয়েক জন ফুটবলারের জ্বর হয়েছিল দিন কয়েক আগে। এর পরেই ওদের আমরা রক্ত পরীক্ষা করাই। সেখানে সাত জনের রক্তে প্লেটলেট কমে গিয়েছিল। ঝুঁকি না নিয়ে আমরা তখনই ওদের হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি।’’ সঙ্গে তিনি এটাও বলে দিলেন, ‘‘শনিবার রাতে গিয়েও ওদের দেখে এসেছি। ছেলেগুলো ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে। ভয়ের কিছু নেই। দু’-তিনদিনের মধ্যে ছেড়েও দেওয়া হবে হাসপাতাল থেকে।’’
ইস্টবেঙ্গল অ্যাকাডেমির যিনি মূল দায়িত্বে সেই র়ঞ্জন চৌধুরীও বলছেন, ‘‘ক্লাব রক্ত পরীক্ষা করিয়েই ওদের হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। প্রতিটি ছেলের শারীরিক অবস্থাই এই মুহূর্তে স্থিতিশীল। অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’’
ঘটনার সূত্রপাত চার দিন আগে। বিধাননগরের মহিষবাথানে ইস্টবেঙ্গল অ্যাকাডেমির সাত ফুটবলার জ্বরে আক্রান্ত হন। এই সাত ফুটবলারের মধ্যে রয়েছেন রজার, সনাথই সিংহ, গুরমুখ সিংহ, যোগী কপূর, রাম নগাই সঙ্গা, মহম্মদ ঈশা ও সুর়জিৎ তেলেম। এদের রক্ত পরীক্ষা করানোর পর দেখা যায় যোগী ছাড়া বাকিরা সকলেই এনএস ওয়ান পজিটিভ। কয়েক জনের প্লেটলেটও কমছে দ্রুত হারে। এর পরেই ক্লাব ২৬ অগস্ট ডেঙ্গি আক্রান্ত এই ফুটবলারদের ভর্তি করে বাগুইআটির বেসরকারি হাসপাতালে।
যাঁর তত্ত্বাবধানে এই শিক্ষার্থী ফুটবলারদের চিকিৎসা চলছে সেই চিকিৎসক সায়ন চট্টরাজ এ দিন বলেছেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তরফে যাদের ভর্তি করা হয়েছিল তাদের মধ্যে এক জনের ভাইরাল জ্বর হয়েছিল। বাকিদের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। ওদের চিকিৎসা চলছে। প্রত্যেকেই সুস্থ হওয়ার পথে। তবে ওদের আইজিএম টেস্টের রিপোর্ট আসতে আরও তিন-চার দিন লাগবে। তারপরেই ওদের শারীরিক অবস্থা দেখে ছেড়ে দেওয়া হবে।’’
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ধুমধাম করেই শুরু হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের এই অ্যাকাডেমি। ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, ব্রুনো কুটিনহো, কুলজিৎ সিংহদের উপস্থিতিতে রঞ্জন চৌধুরীর নেতৃত্বে এই অ্যাকাডেমি শুরু। তার পরে কী ভাবে এই আবাসিক অ্যাকাডেমিতে ডেঙ্গি ছড়িয়ে পড়ল?
ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ঘরের ছেলে ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘সল্টলেকে সিএ ব্লকের মাঠে অনুশীলন হয় ক্লাবের অ্যাকাডেমির। দিন কয়েক আগে গিয়ে দেখেছিলাম জল-কাদার মাঠে মশার উৎপাত বেশি। ওখান থেকেই হয়তো তা ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিষয়টা নিয়ে অ্যাকাডেমির চিফ কোচের সঙ্গে আমার কথাও হয়েছিল।’’
ক্লাবেরও একটা বড় অংশের মত, ডেঙ্গির মশা কামড়ায় সকালে। মহিষবাথানে যে এলাকায় ফুটবলারদের রাখা হয় সেখানে মশা প্রতিরোধের সব ব্যবস্থাই রয়েছে। সিএ ব্লকের জল-কাদা ভরা মাঠ থেকেই হয়তো খুদে ফুটবলারদের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে ডেঙ্গি। কারণ ওখানে নাকি সকালেও মশা ভনভন করতে থাকে। এই বিষয়টি নিয়ে লাল হলুদ অ্যাকাডেমির খুদে ফুটবলাররাও নাকি কোচের কাছে সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন।
ইস্টবেঙ্গল অ্যাকাডেমির অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলারদের মধ্যে ডেঙ্গির সংক্রমণ হওয়ায় চিন্তিত প্রশাসনও। কারণ এ বছর ডেঙ্গি দাপাচ্ছে বিধাননগরে। ইতিমধ্যেই দু’টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে সেখানে। বিধাননগর পুরনিগমের মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় বলেছেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল অ্যাকাডেমির ফুটবলারদের মধ্যে ডেঙ্গি সংক্রমণের কথা শুনেছি। তবে এদের সবাই নাকি ভিনরাজ্যের। কাজেই কোথা থেকে এই সংক্রমণ এল, তা খতিয়ে দেখতে হবে। আমরা পুরনিগমের তরফে ডেঙ্গি প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই নিচ্ছি যুদ্ধকালীন তৎপরতায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy