Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
India

প্লাস্টিকের ব্যাটেই শুভমন বুঝিয়ে দেন, বিরল প্রতিভা

কী ভাবে উঠে এলেন শুভমন?

প্রতিজ্ঞ: বহু প্রতীক্ষিত সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া শুভমন। ফাইল চিত্র

প্রতিজ্ঞ: বহু প্রতীক্ষিত সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া শুভমন। ফাইল চিত্র

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:৫৫
Share: Save:

বড়দিনের বিকেলে মেলবোর্ন থেকে মোহালির বাড়িতে ফোনটা এসেছিল বিকেল পাঁচটা নাগাদ। শনিবার বক্সিং ডে টেস্টে অভিষেক হতে চলা শুভমন গিলের বাবা লখবিন্দর সিংহ গিল তখন সদ্য ফিরেছেন প্রার্থনা সেরে।

ও প্রান্ত থেকে শুভমন সুখবরটা দিতেই পেশায় কৃষিজীবী লখবিন্দর ছেলেকে বলে দিয়েছেন, ‍‘‍‘পুত্তর, সাহস রাখ। ৩৬ অলআউট মাথায় এনে স্নায়ুর চাপ বাড়িয়ে তুলিস না। এই দিনটার জন্যই তো এত পরিশ্রম।’’ বাবা আরও পরামর্শ দেন, ‘‘বোলারের নাম দেখে খেলতে যাবি না।’’

সন্ধ্যায় আনন্দবাজারকে এই তথ্য জানিয়েই শুভমনের বাবা লখবিন্দর বললেন, ‍‘‍‘আজ শুভমন সুখবরটা দিতেই মনে হচ্ছিল, সান্টা ক্লজ় যেন বড়দিনের উপহার নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন আমাদের সকলের জন্য।’’ যোগ করলেন, ‘‘আমার বাবা দিদার সিংহের বয়স ৮৫ বছর। মোহালি থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে ফাজিলকা জেলার জয়মলসিংহওয়ালা গ্রামে মায়ের সঙ্গে থাকেন। বাবা বলেছেন, কাল সকাল থেকে ছেলে ও ভারতীয় দলের মঙ্গল কামনায় পুজো-পাঠ করবেন।’’

কী ভাবে উঠে এলেন শুভমন? আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের তরুণ মুখ শুভমনের গর্বিত বাবা বলে চলেন, ‍‘‍‘আড়াই বছর বয়সে শুভমন আমার সঙ্গে বসে ক্রিকেট খেলা দেখত। ও তখন ব্যাট ছাড়া কোনও খেলনা হাতেই নিত না।’’ যোগ করেন, ‍‘‍‘ওই বয়সেই দেখতাম, সুন্দর ভাবে সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়দের স্ট্রেট ড্রাইভ, হুক, পুল, কভার ড্রাইভ শ্যাডো করছে। প্লাস্টিকের ব্যাট-বলে খেলার সময় সব বলই ব্যাটের মাঝখান দিয়ে মারছে। বুঝেছিলাম, এ ছেলের ঈশ্বরপ্রদত্ত প্রতিভা রয়েছে। এ বার ঘসেমেজে নিতে হবে।’’

গ্রামের বাড়িতে ক্ষেতের কাজ করার ফাঁকেই একদিন লখবিন্দর দেখেছিলেন, শ’দেড়েক বল খেলেও ক্লান্ত হচ্ছে না শুভমন। তার পরেই নিজেই ছেলেকে ক্রিকেট শেখাতে শুরু করে দেন। তাঁর কথায়, ‍‘‍‘গ্রামে প্রশিক্ষক নেই। তাই নিজেই খেলা শেখাতাম। ক্ষেতের পাশেই একটা পিচ বানিয়েছিলাম। সেখানেই ওকে বল করে যেতাম দিনে সাতশো-আটশো। পিচের মাঝে একটা চৌকি রেখে সেখানে বল ফেলতাম, যাতে লাফিয়ে উঠা বল খেলতে শেখে।’’ সেই প্রশিক্ষণ এ বার কাজে লাগবে অস্ট্রেলিয়ার অতিরিক্ত বাউন্সের পিচে।

গ্রামে ছেলের প্রতিভার বিকাশে সমস্যা হবে ভেবেই সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে লখবিন্দর চলে এসেছিলেন মোহালিতে। ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে থেকেই ছেলেকে ক্রিকেটার গড়ার স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু দু’বছর শুভমনকে কোচিং ক্যাম্পে রেখে লখবিন্দর বুঝেছিলেন, বহু ছাত্রের ভিড়ে প্রশিক্ষক সে ভাবে তাঁর ছেলেকে সময় দিতে পারছেন না। তাই এক সময়ে নিজেই শুভমনকে তৈরি করায় মন দেন। তাঁর কথায়, ‍‘‍‘তিন বেলা ছেলেকে অনুশীলন করাতাম নেট টাঙিয়ে। পরিশ্রম বিফলে যায়নি। ১১ বছর বয়সে আন্তঃ জেলা ম্যাচে চারটি ম্যাচে ৩৯৫ রান করার পরেই নির্বাচকদের নজরে চলে আসে শুভমন।’’

শুধু পরিশ্রম বা ক্রিকেট খেলার কৌশল শেখানোই নয়। ছেলের উৎসাহ বাড়ানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও নিয়েছিলেন শুভমনের বাবা। কী সেই ব্যবস্থা? লখবিন্দর বলেন, ‍‘‍‘বিশ্বকাপে কপিল দেবের অপরাজিত ১৭৫ রানের অমর ইনিংস, সুনীল গাওস্কর, সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়দের অমর সব কীর্তির গল্প বলতাম। যাতে ওর মনের খিদে বাড়ে।’’ যোগ করেন, ‍‘‍‘এক বার অনূর্ধ্ব-১৬ ম্যাচে উইকেট ছুড়ে দিয়েছিল ৩৬৫ রান করার পরে। সবাই যখন হাততালি দিচ্ছে, তখন আমি স্টেডিয়াম ছেড়ে ফেরার সময় ওর গালে দু’টো থাপ্পড় কষিয়েছিলাম। যাতে আর কোনও দিন ও উইকেট না ছুড়ে আসে। আর ভুল করেনি ও। এই পরিশ্রম ও নিষ্ঠাই আমার ছেলেকে টেস্ট ক্রিকেটের দরজা পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছে। দঙ্গল ছবিটায় আমির খান গুরু হিসেবে যা করতেন, আমি সেটাই ছেলের সঙ্গে করেছি।’’

আর সমালোচনা? শুভমনের বাবার জবাব, ‍‘‍‘ছেলেকে আজ বলেছি, যাঁরা লড়াই করার দিনে তুই কম রানে আউট হলে তাচ্ছিল্য করত, সেই কথা আর মুখগুলো মনে রাখিস। ব্যর্থ হলে ওরা ফের গলা তুলবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

India Australia cricket Shubman Gill
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy