নির্বাচকদের নজর থাকবে শুভমন গিলের উপরে। টুইটার
ভারতীয় ক্রিকেটের দল নির্বাচনী সোপ অপেরা যেন থামতেই চাইছে না। বিশ্বকাপের একাধিক নির্বাচন ঘিরে বিতর্ক হয়েছে। এ বার ওয়েস্ট ইন্ডিজগামী দল বাছাইয়েও নানা অসঙ্গতি ধরা পড়ছে।
সব চেয়ে বিস্ময়কর, শুভমন গিলের বাদ পড়া। বিশ্বকাপজয়ী অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্য হিসেবে প্রথম নজর কাড়েন শুভমন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আইপিএলে ভাল খেলেছেন। পরিসংখ্যান বলছে, অনেক বেশি সাফল্য থাকা সত্ত্বেও তাঁকে উপেক্ষা করা হয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজগামী তিনটি দলের কোনওটাতেই জায়গা না হওয়ায় হতাশা গোপন রাখতে পারছেন না শুভমন। একটি ক্রিকেট ওয়েবসাইটকে তিনি বলেছেন, ‘‘রবিবার দল ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করে বসে ছিলাম। অন্তত একটি দলে সুযোগ পাব বলে আশা করেছিলাম। কোনও দলেই সুযোগ না পাওয়ায় আমি হতাশ। তবে এটা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করব না আমি। আমি রান করে যাব। পারফর্ম করে যাব। যাতে নির্বাচকদের প্রভাবিত করতে পারি।’’
ওয়েস্ট ইন্ডিজগামী দল নির্বাচনের আগে একপ্রকার নিশ্চিত দেখাচ্ছিল শুভমনের নির্বাচন। এমনকি, এ-ও শোনা গিয়েছিল যে, টিম ম্যানেজমেন্টও তাঁকে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে চার নম্বর জায়গায় ভাবছে। বিশ্বকাপের আগে যখন তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে কথা হচ্ছিল, তখন খুবই গুরুত্ব সহকারে আলোচিত হয়েছিল তাঁর নাম।
এতটা জোরাল ভাবে যিনি আলোচিত হচ্ছিলেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজগামী দল ঘোষণার পরে দেখা গেল, তিনটি টিমের কোনওটাতেই তাঁর জায়গা হয়নি। তাঁর চেয়ে কম রান করা ব্যাটসম্যানেরা সুযোগ পেয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ভারতীয় ‘এ’ দলের সফরে মণীশ পাণ্ডে করেছেন চার ম্যাচে ১৬২ রান। শ্রেয়স আইয়ার করেছেন চার ম্যাচে ১৮৭। আর গিল করেছেন চার ম্যাচে ২১৮ রান। অথচ, প্রথম দু’জন ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টি দলে ডাক পেয়েছেন, শুভমনের জায়গা হয়নি।
আরও বিস্ময়কর দেখাচ্ছে এই নির্বাচন কারণ কর্ণ জোহরের কফি শো-তে আপত্তিকর মন্তব্য করার জন্য কে এল রাহুলকে যখন সাসপেন্ড করা হয়েছিল, শুভমন নিউজিল্যান্ডে গিয়েছিলেন পরিবর্ত হিসেবে। ফলে সকলেই ধরে নিচ্ছিল, নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের মধ্যে থেকে তিনিই প্রথম সুযোগ পাবেন।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এখনও পর্যন্ত মাত্র ন’টি ম্যাচ খেলেই হাজারের কাছাকাছি রান করে ফেলেছেন শুভমন। এর প্রত্যেকটি ম্যাচে অন্তত অর্ধশতরান করেছেন তিনি। ভারত ‘এ’ দল ধরে ঘরোয়া ওয়ান ডে ম্যাচ খেলেছেন ৪৭টি। তাতে মোট সংগ্রহ ১৯৪২ রান। গড় ৪৭.৩৬, স্ট্রাইক রেট ৮৭.৫১। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আইপিএলে অনেক নীচের দিকে ব্যাট করেও তাঁর গড় ৩২.৩১। স্ট্রাইক রেট যথেষ্টই প্রশংসনীয়, ১৩২.৯০। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, এ রকম প্রশংসনীয় যাঁর রেকর্ড, তাঁকে বাদ দিয়ে আরও একটি নির্বাচনী কেলেঙ্কারিই কি ঘটালেন এম এস কে প্রসাদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটি?
একেই প্রসাদের কমিটি নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে বার বার উল্টোপাল্টা দল বাছাইয়ের জন্য। বিশ্বকাপে প্রথমে ঋষভ পন্থকে উপেক্ষা করে তাঁরা দীনেশ কার্তিককে নেন। চার নম্বরের জন্য যোগ্যদের বাদ দিয়ে বিজয় শঙ্করকে দলে ঢোকান। কেদার যাদবের মতো সাধারণ ক্রিকেটার দলে জায়গা পেয়েছিলেন। যদিও এর জন্য টিম ম্যানেজমেন্টকেও দায় নিতে হবে, নির্বাচকদের যোগ্যতা এবং স্বচ্ছতা নিয়ে জোরাল প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বিশ্বকাপে বিজয় শঙ্কর চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ার পরে ময়াঙ্ক অগ্রবালকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পরিবর্ত হিসেবে। যে ময়াঙ্ক তার আগে কখনও ভারতের হয়ে ওয়ান ডে খেলেননি। অথচ, স্ট্যান্ড-বাই রাখা হয়েছিল অম্বাতি রায়ডু। অপমানিত রায়ডু অবসরই ঘোষণা করে দেন। বিস্ময়কর হচ্ছে, যে ময়াঙ্ককে বিশ্বকাপের জন্য যোগ্য ভেবেছিলেন নির্বাচকেরা, এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজগামী ওয়ান ডে দলে তাঁকে রাখার প্রয়োজন মনে করেননি। কোনও সুযোগ না দিয়েই তাঁকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে।
ভারতীয় ক্রিকেট মহলে কারও কারও নজর এড়াচ্ছে না যে, বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা বেশির ভাগ ক্রিকেটার দক্ষিণ ভারতের। সেই অঞ্চল থেকেই এসেছেন বর্তমান নির্বাচকমণ্ডলীর প্রধান এবং প্রাক্তন উইকেটকিপার এম এস কে প্রসাদ। কখনও বিজয় শঙ্কর, কখনও দীনেশ কার্তিক। কখনও বা চেন্নাই সুপার কিংসের ক্রিকেটার কেদার যাদব। বার বার দক্ষিণী হাওয়ায় কেন বেসামাল দেখাচ্ছে জাতীয় দলের নির্বাচনী নীতি? কেন শুভমন, ঋষভদের মতো যোগ্য তরুণদের তার শিকার
হতে হচ্ছে?
প্রসাদ নিজে খেলেছেন মাত্র ৬টি টেস্ট এবং ১৭টি ওয়ান ডে। বাকিরা সেটুকুও খেলেননি। সেই কারণে আরও বেশি করে এই কমিটির বিধান মেনে নিতে অসুবিধা হচ্ছে যোগ্য ক্রিকেটারদের। ঘটনা হচ্ছে, এই মুহূর্তে বোর্ড প্রশাসন বলে কিছু নেই। সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স প্রশাসনের কাজ চালাচ্ছে কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধেই নিজেদের সুবিধা মতো লোঢা কমিটির সংস্কারকে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। তাই লাখ টাকার প্রশ্ন, চোখের সামনে মরচে ধরেছে দেখলেও বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?
ক্রিকেটারদের সংস্থা: ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন তৈরির বিষয়ে সম্মতি দিল ভারতীয় বোর্ড। মঙ্গলবার বোর্ড এক বিবৃতিতে জানায়, প্রাক্তন ক্রিকেটারদের স্বার্থের কথা ভেবেই এই সংস্থা তৈরি করার বিষয়ে সম্মতি জানানো হয়েছে। তবে এই সংস্থা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার্স সংস্থা (ফিকা) স্বীকৃত নয়। এই সংস্থা শুধুমাত্র প্রাক্তন পুরুষ এবং মহিলা ক্রিকেটারদের স্বার্থে কাজ করবে। বোর্ড জানিয়েছে, স্বাধীন ভাবে এই সংস্থা কাজ করবে এবং তার সঙ্গে আর্থিক মুনাফার কোনও সম্পর্ক থাকবে না। নতুন এই সংস্থার তিন ডিরেক্টর মনোনীত হয়েছেন কপিল দেব, অজিত আগরকর এবং শান্তা রঙ্গস্বামী। বোর্ডের নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তাঁরাই এই সংস্থার দায়িত্ব সামলাবেন বলে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy