প্রত্যয়ী: ২৫৩.৩ স্কোর করে সাউথ এশিয়ান গেমসে সেরা মেহুলি। ফেসবুক
নেপালের সাউথ এশিয়ান গেমসে (স্যাগ) লক্ষ্যভেদ করলেও মেহুলি ঘোষের নিশানা এখন আরও দূরে। টোকিয়ো অলিম্পিক্সের যোগ্যতা পাওয়ার লড়াই থেকে এতটুকু চোখ সরাতে রাজি নন তিনি। মঙ্গলবার নেপালের মাটিতে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ব্যক্তিগত এবং দলগত বিভাগে সোনা জয় বাংলার এই শুটারের প্রতিজ্ঞাকে আরও দৃঢ় করেছে।
এ দিন কাঠমান্ডুতে ২৫৩.৩ পয়েন্ট স্কোর করে ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা জিতলেন মেহুলি। এই পয়েন্ট বিশ্বরেকর্ডের (২৫২.৯) থেকে বেশি হলেও বিশ্বরেকর্ডের মর্যাদা পাবে না। কারণ, আন্তর্জাতিক শুটিং সংস্থা এই গেমসের স্কোরকে রেকর্ডের মর্যাদা দেয় না। বিশ্বরেকর্ড না হলেও মেহুলির নামের পাশে গেমস রেকর্ড লেখা থাকবে বলে জানালেন তাঁর প্রশিক্ষক জয়দীপ কর্মকার।
এই বছরে আপনি দারুণ সব স্কোর করছেন। তা হলে কি বলবেন, সেরা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন এই মুহূর্তে? সোনা জিতে উঠে কাঠমান্ডু থেকে মেহুলি আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘স্কোরের হিসেব যদি দেখেন, তা হলে বলতেই হবে খুব উন্নতি হয়েছে। ধারাবাহিক ভাবে ভাল স্কোর করছি। কিন্তু এটা বলব, আমার সেরা সময় এখনও আসেনি।’’
এই ধারাবাহিকতা দেখানোর নেপথ্যে মেহুলির শুটিং দক্ষতার পাশাপাশি মানসিক কাঠিন্যের কথাও উঠে আসছে। কোনটা আপনাকে বেশি সাহায্য করছে, আপনার শুটিং দক্ষতা না মানসিক শক্তি? মেহুলির জবাব, ‘‘আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভাল ফল করতে গেলে দুটোরই অত্যন্ত প্রয়োজন আছে। দক্ষতা এবং মানসিকতার ভারসাম্য ঠিক থাকলেই সফল হওয়া যায়। আমিও নিজেকে সে ভাবেই
তৈরি করছি।’’
আন্তর্জাতিক মঞ্চে এর আগে কমনওয়েলথ গেমসে রুপো পেয়েছিলেন মেহুলি। যুব অলিম্পিক্সেও পদক রয়েছে তাঁর। পরের বছর টোকিয়ো অলিম্পিক্সে যাওয়ার লড়াইয়ে এখনও রয়েছেন তিনি। কিন্তু এই বছরের শুরুতে বিশ্বকাপ শুটিংয়ে ভাল ফল না হওয়ায় ভেঙে পড়েছিলেন মেহুলি। জয়দীপ একটা ঘটনার কথা বলছিলেন। ওই সময় দৃশ্যত ভেঙে পড়া মেহুলি চাইছিলেন সাময়িক বিশ্রাম। জয়দীপ বলছিলেন, ‘‘তখন আমি মেহুলিকে বলেছিলাম, তুমি যদি লড়াই থেকে সরে যেতে চাও, তা হলে ঠিক আছে। আমরা ২০২৪ অলিম্পিক্সের লক্ষ্যে তৈরি হব। আর যদি এখনও লড়াই চালিয়ে যেতে চাও, তা হলে সে ভাবে মানসিক প্রস্তুতি নাও। এক দিন পরে মেহুলি আমাকে বলেছিল, ও টোকিয়োর জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে। সেই লড়াইটা এখনও চলছে।’’
মানসিক ভাবে নিজেকে চাঙ্গা রাখার জন্য কি করেন মেহুলি? কমনওয়েলথ পদকজয়ী শুটারের জবাব, ‘‘আমি গান শুনতে খুব ভালবাসি। গান, মিউজিক আমাকে মানসিক ভাবে খুব তরতাজা রাখে। তা ছাড়া খেলাধুলোর সঙ্গে জড়িত সিনেমাগুলোও আমার খুব ভাল লাগে। সময় পেলে দেখি।’’
টোকিয়ো অলিম্পিক্সের ছাড়পত্র পাওয়ার লড়াই আপাতত ত্রিমুখী অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করেন জয়দীপ। অপূর্বি চাণ্ডেলা প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছেন টোকিয়োর ছাড়পত্র পাওয়ার ব্যাপারে। বাকি একটা জায়গার জন্য লড়াইয়ে আছেন এলাভেনিল ভালারিভান, অঞ্জুম মুদগিল এবং মেহুলি। আপনি যখন রেঞ্জে নামেন রাইফেলটা নিয়ে, তখন কি মাথায় অলিম্পিক্সের ব্যাপারটা থাকে? মনে হয়, অলিম্পিক্স কোটা পাওয়ার জন্য আমাকে আরও ভাল কিছু করতে হবে?
মেহুলির মতে, তিনি এই ব্যাপারটা বেশ উপভোগই করছেন। বাংলার অষ্টাদশী শুটারের কথায়, ‘‘রেঞ্জে নামলে আমার মাথায় টার্গেট বাদে আর কিছু থাকে না। তা ছাড়া ভারত তো ইতিমধ্যে দুটো অলিম্পিক্স কোটা পেয়ে গিয়েছে। যার মানে হল, ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে দু’জন ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবে অলিম্পিক্সে। এখন দেখার কারা সেই দু’জন হয়। এটুকু বলব, আমি এখনও অলিম্পিক্সের দৌড়ে আছি। আর এই পথ চলাটা খুব উপভোগ করছি।’’
সাউথ এশিয়ান গেমসের ফল অবশ্য অলিম্পিক্সের দৌড়ে বা র্যাঙ্কিংয়ে কোনও প্রভাব ফেলবে না। এই প্রতিযোগিতায় অঞ্জুমরাও নামেননি। কিন্তু এই সোনাটা যে মেহুলির আত্মবিশ্বাস অনেকটা বাড়িয়ে দেবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত জয়দীপ। অলিম্পিক্সের চূড়ান্ত দল ঠিক হবে সামনের বছর মার্চে, নয়াদিল্লিতে আয়োজিত শুটিং বিশ্বকাপের পরে।
এই লড়াইয়ে আপনার সামনে সব চেয়ে শক্ত চ্যালেঞ্জ কে বা কী? মেহুলি কারও নাম করতে চান না। আত্মবিশ্বাসী এই শুটার শুধু বলছেন, ‘‘আমি নিজেই নিজেকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ভালবাসি। চাই, আজকে আমি যতটা ভাল, তার চেয়েও কালকে যেন বেশি ভাল হতে পারি। এটাই এখন আমার সামনে সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy