প্রত্যয়ী: অলিম্পিক্সের পদকই পাখির চোখ অমিতের। ফাইল চিত্র
সলমন, শাহরুখ, অক্ষয় বা ভিকি কৌশল তাঁর পছন্দের নন। বরং সময় পেলেই তিনি বসে যান ‘শোলে’-র ‘বীরু’ ধর্মেন্দ্রর সিনেমা দেখতে। আর নিজের খেলার বাইরে তাঁর প্রিয় ক্রীড়াবিদ আর এক ‘বীরু’—বীরেন্দ্র সহবাগ।
কেন? তা জানতে চাইলেই ভারতের প্রতিশ্রুতিমান বক্সার অমিত পাঙ্ঘল বলে দেন, ‘‘ছয় ও সাতের দশকে ধর্মেন্দ্রর মারকাটারি ছবিগুলো দেখলেই একটা বাড়তি ‘জোশ’ চলে আসে। ছোট থেকে আজ পর্যন্ত বাড়িতে থাকলেই রোজ বাবার সঙ্গে বসে ধরমজি-র সব মারপিটের ছবি দেখি কেবল টিভিতে।’’ যোগ করেন, ‘‘আমার মতো বীরেন্দ্র সহবাগও জাঠ। লড়াই তো জাঠদের রক্তে। বীরু পাজিকে দেখলেই মন বলে ওঠে, ডরনা মানা হ্যায়। ডরকে আগে জিত হ্যায়। আগ্রাসী মেজাজে কী ভাবে পারফরম্যান্স করতে হয়, তা শিখেছি বীরু পাজিকে দেখেই।’’ সহবাগের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে কখনও? এ বার অমিত বলেন, ‘‘বীরু পাজির সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। যদি টোকিয়ো অলিম্পিক্স থেকে পদক নিয়ে ফিরি, ওঁর সঙ্গে পদক নিয়ে দেখা করব।’’
দু’বছর আগে প্রথম জাতীয় বক্সিং প্রতিযোগিতায় নেমে সোনা জিতেছিলেন বর্তমানে সেনাকর্মী এই বক্সার। আট-নয় মাস পরে জীবনের প্রথম অলিম্পিক্স থেকেও কি বক্সিংয়ে পদক নিয়ে ফিরবেন? বছর চব্বিশের এই আত্মবিশ্বাসী বক্সার বলে দেন, ‘‘ফেব্রুয়ারিতে অলিম্পিক্সের বাছাই পর্বের বাউট। তার জন্য প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। সকালে রোজ তিন ঘণ্টা অনুশীলন করি ফিটনেস বাড়াতে। বিকেলে তিন ঘণ্টা চলে রিংয়ে অনুশীলন। ঘুসির শক্তি বাড়ানো ও নির্ভুল লক্ষ্যে ঘুসি মারার মহড়াই বেশি হয় এই সময়ে। আমার বিভাগে বেশির ভাগ বক্সারের উচ্চতা বেশি। তাঁদের ‘পাঞ্চ’-এ ঘায়েল করার জন্য বিশেষ প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।’’ যোগ করেন, ‘‘১৫ নভেম্বর থেকে বেঙ্গালুরুতে শিবির শুরু হবে। অনেক বিদেশি বক্সারও আসবে। ওদের সঙ্গে প্রস্তুতি নেব দু’মাস। তার পরে যাব অলিম্পিক্সের বাছাই পর্বে লড়তে।’’
সেপ্টেম্বরে বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপে ফ্লাইওয়েট বিভাগে রুপোজয়ী অমিত বলছেন, ‘‘এখন আগের মতো শুরুতে আক্রমণে যাই না। অপেক্ষা করি বিপক্ষের ভুলের জন্য। অলিম্পিক্সে পদক পেতে দরকার মনঃসংযোগের। নিয়মিত ধ্যান করাও অভ্যাস করছি।’’ যোগ করেন, ‘‘ক্ষীর খেতে খুব ভালবাসি। কিন্তু অলিম্পিক্সের জন্যই এখন খ্যাদ্যাভাসেও পরিবর্তন এনেছি। অলিম্পিক্সের পদক নিয়ে বাড়ি ফিরলে মায়ের হাতে বানানো ক্ষীর খাব।’’
জন্মানোর সময়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন অমিত। প্রথম পাঁচ বছর ভুগেছেন নিউমোনিয়াতে। তা সত্ত্বেও দুষ্টুমিতে বিরাম ছিল না। গ্রামে বয়স্কদের সাইকেল পিছন থেকে টেনে ধরা, গাছ থেকে আম পেড়ে নেওয়া, সমবয়সীদের সঙ্গে মারপিট চলত রোজ। যা ফোনে বলতে গিয়ে হেসে ফেলেন তিনি। দাদাই তাঁর জীবনের আদর্শ। বলেন, ‘‘আমার দাদা অজয় হরিয়ানার রাজ্য চ্যাম্পিয়ন বক্সার ছিল। দাদা প্রথম বাবাকে বলেন, দুষ্টুমি বন্ধ করতে আমাকে বক্সিংয়ে ভর্তি করে দিতে। এ ভাবেই বক্সিং রিংয়ে প্রথম পা রাখা। কিন্তু আমি জুনিয়র পর্যায়ে নাম করতেই দাদা বক্সিং দেন ছেড়ে। কারণ, আমাদের স্বল্প আয়ের পরিবারে দু’জনের বক্সিং চালানোর খরচ বাবা সামলাতে পারতেন না।’’
অমিত আরও বলছেন, ‘‘আমাকে বড় বক্সার বানানোর জন্য দাদা যা ত্যাগ স্বীকার করেছে, তার জন্যই অলিম্পিক্স থেকে পদক-সহ ফিরতে চাই। ওই পদকটা দাদাকে গুরুদক্ষিণা দিতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy