ওয়ার্নের প্রথম স্ত্রী সিমোনে কাল্লাহান। বিয়ে হয় ১৯৯৫ সালে। তিন সন্তানের বাবা-মা তাঁরা। দুই ভিন্ন রঙের চোখ থাকা ওয়ার্নের সঙ্গে সিমোনের বিবাহবিচ্ছেদ হয় ২০০৫ সালে। কিন্তু তাঁদের সম্পর্কে চিড় বোধহয় ধরেছিল ৫ বছর আগেই। ২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়ার সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া হয় ওয়ার্নের। কারণ, এক ব্রিটিশ নার্সকে যৌনইঙ্গিত পূর্ণ বার্তা পাঠিয়েছিলেন তিনি।
শেন ওয়ার্ন। —ফাইল চিত্র।
বিশ্ব ক্রিকেটে তাবড় তাবড় ব্যাটারের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন শেন ওয়ার্ন। তবে বেশ কয়েক বার রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল তাঁর নিজেরও। ক্রিকেট জীবনে বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। অবসরের পরেও একাধিক কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছে। শুক্রবার হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন ওয়ার্ন। ইতি পড়ল বিতর্কেও!
ওয়ার্নের প্রথম স্ত্রী সিমোনে কাল্লাহান। বিয়ে হয় ১৯৯৫ সালে। তিন সন্তানের বাবা-মা তাঁরা। দুই ভিন্ন রঙের চোখ থাকা ওয়ার্নের সঙ্গে সিমোনের বিবাহবিচ্ছেদ হয় ২০০৫ সালে। কিন্তু তাঁদের সম্পর্কে চিড় বোধহয় ধরেছিল ৫ বছর আগেই। ২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়ার সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া হয় ওয়ার্নের। কারণ, এক ব্রিটিশ নার্সকে যৌনইঙ্গিত পূর্ণ বার্তা পাঠিয়েছিলেন তিনি।
সিগারেট খেতেন ওয়ার্ন। একটি ছেলে সেই ছবি তুলে নিয়েছিল। সেই ‘অপরাধে’ ছেলেটিকে মারধর করেন ওয়ার্ন। যাঁর গুগলি ব্যাটারদের রক্ষণ ভেঙে দিত অনায়াসে, শতাব্দীর সেরা বল করেছিলেন যে বোলার, সেই ওয়ার্ন যেন এই সময় অন্য এক চরিত্র। যেন অন্য এক মানুষ।
ওয়ার্নের সিগারেট প্রেমের কথা জানা যায় তাঁর এক সময়ের সতীর্থ মাইকেল ক্লার্কের কাছ থেকে। ২০০৬ সালে অ্যাশেজ সিরিজের আগে এক অনুশীলন ক্যাম্পে যাচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া দল। সেই সময় শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া বাকি সব কিছু নিয়ে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। ওয়ার্ন বেছে নিয়েছিলেন সিগারেট। অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক ক্লার্ক এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘ওয়ার্ন সিগারেট খেতে পছন্দ করে। ও সেই ক্যাম্পে যাওয়ার আগে জানিয়ে দিয়েছিল, সিগারেট ছাড়া যাবে না। ওয়ার্ন তিন জোড়া অন্তর্বাস এবং মোজার বদলে সিগারেট নিয়ে গিয়েছিল।” ক্লার্ক বলেন, “অন্ধকারের মধ্যে সকলে স্লিপিং ব্যাগের ভিতরে। শুধু একটা জায়গায় কমলা রঙের একটা আলো। স্লিপিং ব্যাগের মধ্যে থেকে ধূমপান করছে ওয়ার্ন।’’
১৯৯৭ সালে লন্ডনে অ্যাশেজ খেলতে গিয়েও সিগারেট খেতে দেখা গিয়েছিল ওয়ার্নকে। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। ২২ বছরের ক্রিকেট জীবনে সিগারেট ছাড়েননি ওয়ার্ন। এক ‘তামাক বিরোধী’ সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন তিনি। সিগারেট ছেড়ে দেওয়ার চুক্তি ছিল তাদের সঙ্গে। কিন্তু চার মাসের মধ্যে সেই চুক্তি ভেঙে যায়। কারণ বার্বাডোজে গিয়ে সিগারেট খেতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
২০০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই সময় সংবাদমাধ্যমে ফের বিতর্কের শিরোনামে ওয়ার্ন। অভিযোগ ওঠে আবার এক মহিলাকে যৌনবার্তা পাঠিয়েছেন তিনি। কিন্তু যে মহিলা এই অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে সে দেশে অবৈধ ভাবে টাকা নেওয়ার মামলা ছিল।
সিমোনের সঙ্গে ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক ফের জোড়া লাগতে শুরু করে ২০০৭ সালে। ইংল্যান্ডে একসঙ্গে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু হঠাৎ বিপত্তি। ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফেরেন সিমোনে। অন্য এক মহিলাকে বার্তা পাঠাতে গিয়ে ভুল করে সিমোনেকে পাঠিয়ে ফেলেছিলেন। তাতেই আবার ভেঙে যায় তাঁদের সম্পর্ক।
সাল ২০১০। আবার বিতর্কে ওয়ার্ন। ইংরেজ অভিনেত্রী এলিজাবেথ হার্লেকে চুমু খেতে দেখা যায় ওয়ার্নকে। সেই ঘটনা জানাজানি হতেই টুইট করে ওয়ার্ন জানান, সিমোনের সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সে খবর জানতেন শুধু তাঁর পরিবার এবং কাছের বন্ধুরা। হার্লের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার সময় মেলবোর্নের এক বিবাহিত ব্যবসায়ীকে ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা পাঠানোর খবর সামনে আসে। কিন্তু ঘটা করে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে ওয়ার্নের বাড়িতে থাকতে আসেন হার্লে। ২০১১ সালে তাঁদের বাগদান হবে বলেও জানান হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি।
শুধু ব্যক্তিগত জীবনেই নয়, ওয়ার্ন বিতর্কে জড়িয়েছেন তাঁর কর্মজীবনেও। ১৯৯৮ সালে জানা যায়, তিন বছর আগে শ্রীলঙ্কার এক ব্যক্তিকে টাকার বিনিময় পিচ এবং আবহাওয়া সম্পর্কে তথ্য দিয়েছিলেন ওয়ার্ন। নিজের আত্মজীবনীতেও সেই কথা উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের আগে দু’ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় ওয়ার্নকে। এক সংবাদমাধ্যমকে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক অর্জুনা রণতুঙ্গার নামে খারাপ কথা বলেন তিনি। সেই কারণে আইসিসি তাঁকে নির্বাসিত করেছিল দু’ম্যাচের জন্য।
২০০৩ বিশ্বকাপ শুরুর আগের দিন বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ওয়ার্নকে। ডোপ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ওয়ার্ন যদিও বলেছিলেন তিনি মায়ের দেওয়া ওষুধ খেয়েছিলেন তাঁর ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য। কিন্তু সেই অপরাধে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড তাঁকে এক বছরের জন্য নির্বাসিত করে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে।
২০১৩ সালে বিগ ব্যাশ লিগে খেলার সময় এক ক্রিকেটারকে খারাপ কথা বলা, তাঁর শরীরে অশালীন ভাবে হাত দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ওয়ার্নের বিরুদ্ধে। সেই কারণে এক ম্যাচের জন্য নির্বাসন এবং ৪,৫০০ ডলার জরিমানা দিতে হয় তাঁকে।
সারা জীবন বিতর্ক সঙ্গী ছিল ওয়ার্নের। কিন্তু তাতে তাঁর ক্রিকেট জীবনে কোনও ছাপ পড়েনি। ১৪৫টি টেস্টে ৭০৮টি উইকেট নেন তিনি। ১৯৪টি এক দিনের ম্যাচ খেলে তাঁর সংগ্রহ ২৯৩টি উইকেট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy