Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

বিরাট-শ্রদ্ধা জানিয়েও সচিনের সঙ্গে তুলনায় গেলেন না ওয়ার্ন

বিরাটের দাপটের দিনই ছিটকে গেল ভারত। ছবি: উৎপল সরকার।

বিরাটের দাপটের দিনই ছিটকে গেল ভারত। ছবি: উৎপল সরকার।

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়
মুম্বই শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:১২
Share: Save:

ওয়াংখেড়ে প্রেসবক্সের ঠিক নীচের তলার সিঁড়িতে যে শেন কিথ ওয়ার্নকে আবিষ্কার করা গেল, তিনি অদ্ভুত রকম মোহাচ্ছন্ন। স্টার স্পোর্টসের কমেন্ট্রি টিমে সুনীল গাওস্করদের সঙ্গে অস্ট্রেলীয় কিংবদন্তিও আছেন। দ্রুতই নেমে যেতে হবে মাঠে, ম্যাচের বিরতির চ্যাটটা দিতে হবে। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে ওয়াংখেড়ের বিরাট কোহালি প্রসঙ্গে যে সব প্রশংসাসূচক বাক্য ব্যবহার করে যাচ্ছিলেন, তা তাঁর ঠোঁট থেকে এত দিন এক জন ভারতীয় সম্পর্কেই বেরোত। তিনি সচিন তেন্ডুলকর। “ইনক্রেডিবল। কী খেলল বিরাট! সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হল, দিনের পর দিন ছেলেটা একা এ ভাবে ইন্ডিয়াকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন,” গলার মুগ্ধতা যেন শেষ হচ্ছে না ওয়ার্নের।

তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, আপনি তেন্ডুলকরকে বল করেছেন। জানেন, ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি কতটা ভয়ঙ্কর। কিন্তু এই যে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব গত দু’সপ্তাহ ধরে সচিন বনাম বিরাট তুলনাযুদ্ধে নেমে পড়েছে, কেউ কেউ সচিনের চেয়েও এগিয়ে রাখছেন বিরাটকে, এ সব দেখলে তাঁর কী মনে হয়? বিরাট সত্যিই এগিয়ে তেন্ডুলকরের চেয়ে? দ্রুত মাঠের দিকে হেঁটে যেতে যেতে বলে দিলেন, “আমি ও সব তুলনা-টুলনায় বিশ্বাসী নই। দু’জনেই গ্রেট। গ্রেটদের মধ্যে তুলনা হয় নাকি?”

দ্রুত হাতের কাছে এ বার পাওয়া গেল নিউজিল্যান্ডের মেয়েদের টিমটাকে। দুপুরে বিশ্বকাপ দেখে বিদায় হয়ে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সুজি বেটসদের দেখলে মনে হবে একেবারে খালি হাতে ফেরত যাচ্ছেন না। অন্তত ব্যাটিংয়ের বিরাট-ঐশ্বর্য কাকে বলে, দেখে দেশে ফিরছেন। “ভীষণ ইচ্ছে ছিল ওর সঙ্গে একবার দেখা করার। ব্যাটিংয়ের কয়েকটা ব্যাপার জেনে নিতাম। আপনারা, ভারতীয় সাংবাদিকরা ব্যবস্থা একটা করে দিতে পারেন না?” বেটসের গলা শুনলে মনে হবে তিনি সিরিয়াস, বেশ সিরিয়াস।

দেখলে অবাকই লাগবে। চোখের সামনে যে একটা সেমিফাইনাল চলছে, যেখানে এখনও ওয়েস্ট ইন্ডিজ বলে একটা টিমের ব্যাট করা বাকি, ক্রিস গেইল বলে এমন একজন আছেন, যিনি খেলে দিলে ১৯৩-কেও লিলিপুট দেখাতে পারে সে সব সবাই ভুলে মেরে দিল নাকি! বিরাট কোহালি কি সত্যিই এখন এতটা মায়াবী আকাশ তৈরি করেন যেখানে টিমের জেতা-হারা, বিপক্ষের এগারো, সব গৌণ হয়ে যায়? সেটা সম্ভব?

ওয়াংখেড়েকে সন্ধে পর্যন্ত দেখে মনে হল, অন্য কোথাও না হোক এখানে সম্ভব।

ওয়াংখেড়ের এত দিনের একচ্ছত্র সম্রাটকে যখন টিভি ক্যামেরা প্রথম ধরল, ভারতীয় ইনিংসের তখন শেষ ওভার চলছে। কোহালি তখন নিজের অনিন্দ্যসুন্দর ব্যাটিং-স্থাপত্যের শেষ মিনারগুলো সৃষ্টি করছেন। সচিন রমেশ তেন্ডুলকর যদি বিকেলের দিকে স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়তেন, তা হলে দেখতেন কী ভাবে তাঁর নিরঙ্কুশ জনপ্রিয়তার রাজপাটে ভাগ বসাচ্ছেন দিল্লির যুবক।

এক কথায়, বিরাট-ইউফোরিয়া ম্যাচ শুরুর সময় নয়, তার অনেক আগে থেকে শুরু হয়ে গিয়েছিল। বিকেলের দিকে যে অজিত ওয়াড়েকরের সঙ্গে কথা হল, তিনি দেখা গেল দু’টো জিনিস চান। এক, ওয়াংখেড়েতে আবারও সৃষ্টি হোক বিরাট সম্মোহন। আর দুই, ভারত জিতে-টিতে ইডেনে ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে সাতাশির সেমিফাইনালের প্রতিশোধটা নিয়ে রাখুক। ওয়াড়েকরের ইচ্ছেমতো দ্বিতীয়টা হবে কি না বলা যাচ্ছে না। কিন্তু প্রথমটা যে একশো দশ শতাংশ সফল, অনায়াসে লিখে ফেলা যায়।

গাড়ওয়াড়ের প্যাভিলিয়নের দিকে গোটা এক দিল্লি-দম্পতিকে দেখা গেল যাঁরা অদ্ভুত ভাবে নিজেদের সাজিয়ে স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়েছেন। মাথায় তেরঙ্গা পাগড়ি, গালে বিরাটের নাম, কিছু বাদ নেই। কিছুক্ষণ পর বেঙ্গালুরু নিবাসী আর এই সমর্থককে পাওয়া গেল যাঁকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আটকাতে পারেনি কোহালি-দর্শন থেকে বঞ্চিত করতে। এবং গ্যালারির বাইরে যেমন, গ্যালারির ভেতরেও তাই। বিরাটের ব্যাটিংয়ের সময় ওয়াংখেড়ের সচিন তেন্ডুলকর স্ট্যান্ডের যে গর্জন, যে উল্লাস দেখতে পাওয়া গেল, তা এত দিন ওয়াংখেড়ে একজনের জন্যই বরাদ্দ রাখত। আসলে ব্যাটসম্যান কোহালির পর বোলার কোহালিএকই দিনে জোড়া বরাত তো পেয়ে গেল ওয়াংখেড়ে।

অন্য বিষয়গুলি:

wt20
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy