ব্রাত্য: কর্ণকে উপেক্ষা করায় ক্ষুব্ধ বাংলার ক্রিকেটমহল। ফাইল চিত্র
এশিয়া কাপ ফাইনাল জিতিয়ে আশা করেছিলেন, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলে হয়তো তিনি থাকবেন। কিন্তু সেপ্টেম্বরের পর থেকে কোনও প্রতিযোগিতায় সুযোগ পাননি কর্ণ লাল। চ্যালেঞ্জার ট্রফির তিনটি দলের একটিতেও ছিলেন না। আফগানিস্তান সফরেও তিনি ব্রাত্য। যার ফল, জানুয়ারিতে বিশ্বকাপ খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়া হচ্ছে না খড়গপুরের অফস্পিনারের।
অথচ এই কর্ণই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এশিয়া কাপ ফাইনালে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছিলেন। ৫০ ওভারে ১০৬ রান করেছিল ভারত। কর্ণ একাই করেছিলেন ৩৭ রান। তা হলে কোন ভিত্তিতে তাঁকে বাদ দেওয়া হল, সদুত্তর নেই জুনিয়র নির্বাচক কমিটির সদস্যদের। কমিটির প্রধান আশিস কপূরের যুক্তি, ‘‘এশিয়া কাপের ফাইনালে রান করেছিল ঠিকই। কিন্তু ও এক জন বোলিং অলরাউন্ডার। রানের চেয়েও ওর দায়িত্ব ছিল উইকেট নেওয়ার। এশিয়া কাপে সেটা দেখা যায়নি।’’ যোগ করেন, ‘‘বিনু মাঁকড় ট্রফিতে উইকেট সংগ্রাহকদের তালিকায় প্রথম পঞ্চাশ জনের মধ্যে নেই। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে কী করে ওকে দলে নেওয়া যায়। আমরা এক জন বোলিং অলরাউন্ডার চাইছিলাম।’’
আশিসের যুক্তি অনুযায়ী, বিনু মাঁকড় ট্রফিতে কর্ণের উইকেট সংখ্যা আট ম্যাচে ছয় হলেও তাঁর ইকনমি রেট কিন্তু ফেলে দেওয়ার মতো নয়। এমনিতেই ওয়ান ডে-তে এক জন অফস্পিনারের দায়িত্ব রান আটকানোর। সেই কাজটি সুষ্ঠু ভাবেই সম্পূর্ণ করেছেন কর্ণ। আট ম্যাচে তাঁর ইকনমি রেট ১.৫০। অথচ তাঁর পরিবর্তে সুযোগ পাওয়া বাঁ-হাতি স্পিনার শুভঙ্গ হেগড়ের নাম সর্বনিম্ন ইকনমি রেটের তালিকাতেই নেই। কর্ণের স্ট্রাইক রেটও ৮০-র উপরে। শুধু বোলার হিসেবে কেন তাঁকে দেখা হচ্ছে, বলা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: বুমরাকে নাকি সামলে দিতেন! দাবি রজ্জাকের
এখানেই শেষ নয়। যে ছেলেটি এশিয়া কাপের আগে ইংল্যান্ড সফরে চল্লিশের উপর গড়ে রান করেছেন। তাঁকে কেন চ্যালেঞ্জার ট্রফিতেও সুযোগ দিয়ে দেখা হল না। নির্বাচকেরা কি ধরেই নিয়েছিলেন, কর্ণকে জাতীয় দলে নেব না! নির্বাচক কমিটির পূর্বাঞ্চলের প্রতিনিধি দেবাশিস মোহান্তি বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন। তাঁর উত্তর, ‘‘এ বিষয়ে আমার মন্তব্য করা উচিত নয়। ভারতীয় বোর্ডের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।’’
বাংলার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ প্রণব নন্দী অবাক। বলছিলেন, ‘‘গত দু’বছর ধরে কর্ণ আমার দলের স্তম্ভ। ব্যাটিং বোলিং নিয়ে তো কোনও তুলনাই নেই। ওর মতো ফিল্ডার ভারতে আছে কি না সন্দেহ। কোন ভিত্তিতে চ্যালেঞ্জার ট্রফি ওকে সুযোগ দিয়ে দেখা হল না তা জানি না। সেই প্রভাব পড়ল বিশ্বকাপ দলেও। যে ছেলেটি এশিয়া কাপ ফাইনাল জেতাল, তাকে কী করে বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ দেওয়া হয়?’’
শুধু অনূর্ধ্ব-১৯ নয়। বাংলার অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়েও ৯টি ওয়ান ডে-তে ১১টি উইকেট পেয়েছেন কর্ণ। কিন্তু ফাইনালের আগে তাঁকে ডেকে নেওয়া হয় কোচবিহার ট্রফিতে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। সেই ম্যাচেও হরিয়ানার বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ১৮ বছর বয়সি অফস্পিনার। অনূর্ধ্ব-২৩ দলের কোচ সৌরাশিস লাহিড়ী বলেন, ‘‘কর্ণ খুব ভাল অলরাউন্ডার। অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়েও ভালই খেলেছে। জানি না কেন ভারতীয় দলে সুযোগ পেল না।’’
কর্ণ নিজেও ভেঙে পড়েছেন। কষ্ট পেয়েছেন তাঁর মা নিলু কুমারী। তরুণ অফস্পিনারের কথায়, ‘‘আমি তো সামলে নিতে পেরেছি। কিন্তু মা খুব কষ্ট পেয়েছেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল, ভারতের হয়ে আমাকে বিশ্বকাপ খেলতে দেখবেন। কিন্তু এ বার আর সেই স্বপ্ন পূরণ হল না।’’ যোগ করেন, ‘‘আমি নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছি। নিজেকে বুঝিয়েছি যে, আরও ধারাবাহিক হতে হবে। দলে যাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে প্রত্যেকেই পারফর্ম করেছে। চাইব, বিশ্বকাপ জিতে ফিরুক দল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy