Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
ATKMB

কৃষ্ণের রথ কী করে থামাবে এই ভঙ্গুর রক্ষণ

হাবাসের দলের রক্ষণও ভুল করেছে। শূন্যে ভেসে আসা বলে সমস্যা প্রথম থেকেই হয়েছে এটিকে-মোহনবাগান রক্ষণে।

মধ্যমণি: গোল করলেন। করালেনও। এসসি ইস্টবেঙ্গলকে হারানোর পরে সতীর্থদের সঙ্গে কৃষ্ণ। শুক্রবার। আইএসএল

মধ্যমণি: গোল করলেন। করালেনও। এসসি ইস্টবেঙ্গলকে হারানোর পরে সতীর্থদের সঙ্গে কৃষ্ণ। শুক্রবার। আইএসএল

সুব্রত ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৪৫
Share: Save:

গত কয়েক দিন ধরে শুনছিলাম শুক্রবারের বড় ম্যাচে দু’দলের আক্রমণভাগই পার্থক্য গড়ে দেবে। এটিকে-মোহনবাগানের রয় কৃষ্ণ-ডেভিড উইলিয়ামস-মার্সেলিনহো-মনবীর সিংহ। আর এসসি ইস্টবেঙ্গলের ব্রাইট এনোবাখারে-অ্যান্টনি পিলকিংটন-জা মাগোমা-
মাঠি স্টেনম্যান।


সে কারণেই আমি উদগ্রীব ছিলাম, দু’দলের রক্ষণ কী ভাবে এই শক্ত প্রশ্নপত্রে উত্তীর্ণ হবে। পুরো নব্বই মিনিট ম্যাচটা দেখার পরে আমার একই সঙ্গে হতাশা ও ঈর্ষা দু’টোই হচ্ছে।


হতাশার কারণ, হাবাস পাঁচ গোল করে জিতে ফেরার রেকর্ড তৈরি করে ফেলতে পারতেন। তিনি সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলেন না। আর ঈর্ষা! সেটা ওই এসসি ইস্টবেঙ্গলের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলে আসা বিখ্যাত কোচদের জন্য। এ রকম কুশ্রী ভাবে রক্ষণ করতে আমি তৃতীয় ডিভিশনের ম্যাচেও দেখিনি। সার্থক গলুই, ড্যানি ফক্সেরা স্কুল ছাত্রদের মতো ভুল করল। খেলাটা দেখে নিজেকেই প্রশ্ন করলাম, তা হলে এই বিখ্যাত কোচেরা তাঁর ছাত্রদের কী শেখালেন? মার্কিং, কভারিং, ব্লকিং বলে কিছুই তো দেখলাম না লাল-হলুদ রক্ষণে। কোচেরা কি এই সব সাধারণ ব্যাপারগুলোতে জোর দেননি? শাস্তির কারণে এ দিন গ্যালারিতে থাকা এসসি ইস্টবেঙ্গল কোচই তো বলেছিলেন, ভারতীয় ছেলেরা ঠিক প্রশিক্ষণ পায়নি অতীতে। কিন্তু তিনি রক্ষণের স্বাভাবিক নিয়মগুলো ছেলেদের শেখাবেন, এটা তো প্রত্যাশিত। কিন্তু কোনও পরিকল্পনা দেখলাম না।


আমার মনে পড়ছে আশির দশকের একটা বড় ম্যাচের কথা। সে বার আমাদের দলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারই ছিল না। সবাই ধরে নিয়েছিল আমরা হেরে যাব। জামশিদ ও মজিদ আমাদের রক্ষণ নিয়ে ছেলেখেলা করবে। সে দিন মাঠে নামার সময়ে ড্রেসিংরুমে বলে দেওয়া হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের দুই ফরোয়ার্ড বল ধরার আগে বিপন্মুক্ত করতে হবে। আর বল বক্সে ফেললে গোলের মুখ বন্ধ করে ওর সামনে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। সে ভাবেই আমি আর প্রয়াত সতীর্থ সত্যজিৎ ঘোষ বিপক্ষকে আটকে দিয়েছিলাম। এগুলো হল বড় ম্যাচের হোমওয়ার্ক। কিন্তু এসসি ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ এ দিন সেই হোমওয়ার্ক করেই নামেনি মনে হল।


এই আইএসএলে শুরু থেকে দেখছি, এটিকে-মোহনবাগান রক্ষণ থেকে লম্বা বল তুলে দেয় রয় কৃষ্ণের উদ্দেশে। ফিজির গতিময় স্ট্রাইকার সেই বল ধরতে পারলে গোল করে আসে। এটা জানার পরেও কেন রক্ষণকে এতটা হাইলাইন (উপরে তুলে নিয়ে যাওয়া) রেখে দিলেন এসসি ইস্টবেঙ্গলের কোচেরা? ওই ভুল থেকেই প্রথম গোল। তিরি যখন বলটা নিজেদের রক্ষণ থেকে প্রায় সত্তর গজের লম্বা পাস বাড়াচ্ছে, তখন এসসি ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ সেন্টার সার্কলের প্রায় কাছাকাছি, রক্ষণের সঙ্গে গোলরক্ষকের মাঝে বিশাল ফাঁক।


রয় কৃষ্ণের প্রথম গোলটার সময়ে ড্যানি ফক্স ও রাজু গায়কোয়াড় প্রায় সমান্তরাল দাঁড়িয়েছিল। এ ক্ষেত্রে নিয়ম একজন এগিয়ে থাকবে, আর একজন কিছুটা পিিছয়ে দাঁড়াবে। কৃষ্ণের গতি ভাল। কোণাকুণি ভাল দৌড়ায়। সেখানে লাল-হলুদ রক্ষণে গতি মন্থরতার সমস্যা আছে। সার্থক গলুই ছেলেটা রাজুকে কভার না করে পিছনে ছুটে গেল। সুব্রত পালকে কাটানোর আগে কৃষ্ণ টাচটা বেশি করে ফেলেছিল। সেখানে সুব্রত পৌঁছে গিয়ে বল বিপন্মুক্ত করতে পারত।


এই ধরনের বড় ম্যাচে সেরা দল গড়াটা একটা বড় ব্যাপার। হাবাস বুদ্ধি করে আক্রমণ, রক্ষণ ও মাঝমাঠের মেলবন্ধন করেছিলেন। কিন্তু বিপক্ষে সেই বুদ্ধিমত্তা নেই। আমি বিপক্ষে থাকলে মাগোমাকে দুই স্ট্রাইকারের পিছনে রাখতাম অথবা বাঁ প্রান্তে রাখতাম। সেখানে কেন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে ওকে সৌরভ দাসের সঙ্গে রাখা হল তার ব্যাখ্যা নেই।


এটিকে-মোহনবাগানকে দ্বিতীয় গোলটা উপহার দেওয়া হল। সুব্রত হয়তো দ্রুত বলটা ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু মাঠি স্টেনম্যান ও ড্যানি ফক্সের বোঝাপড়ায় এতটা অভাব হবে কেন? কৃষ্ণ বলটা কেড়ে যখন ডেভিড উইলিয়ামসকে দিচ্ছে, তখন সৌরভ, অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়রা ওকে তাড়া করল না। হাবাসের দলের তৃতীয় গোলেও সেই রয় কৃষ্ণ, জাভি হার্নান্দেসের আক্রমণ রুখতে গিয়ে মার্কিংয়ে ভুল করে বসল লাল-হলুদ ওকে কেউ নজরে রাখেনি। অবলীলায় হেড নিতে পেরেছে।


হাবাসের দলের রক্ষণও ভুল করেছে। শূন্যে ভেসে আসা বলে সমস্যা প্রথম থেকেই হয়েছে এটিকে-মোহনবাগান রক্ষণে। রাজুর থ্রো থেকে আত্মঘাতী গোলটা সে কারণেই। বিপক্ষে একমাত্র সচল ছিল ব্রাইট।ওকে পাঁচ গজের মতো জায়গা দিলেই সমস্যা। মাঝমাঠ ও রক্ষণে কড়া নজরে রেখে ব্রাইটকে জায়গা দেয়নি সন্দেশ জিঙ্ঘনেরা। তা সত্ত্বেও ব্রাইট একক দক্ষতায় বেরিয়ে গিয়েছে তিন-চার বার। তার জন্য ডাবল কভারিং ছিল। ফলে একজন কাটলে, দ্রুত আর একজন চলে আসছিল ওর সামনে। ফলে বিপদ হয়নি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy